ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নৈবেদ্য থিয়েটারের ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

নৈবেদ্য থিয়েটারের ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সম্প্রতি নৈবেদ্য থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। ইতিহাস আশ্রিত ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকটি রচনা করেছেন সালাহ্উদদীন আহমেদ মিলটন। নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক রাজীব রেজা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সিরাজ উল ইসলাম দাদু, কানিজ ফাতেমা কাসেম, রাজীব রেজা, তানিয়া আলী চৌধুরী, মিজানুর রহমান স্বপন, মেহেদী হাসান, অলি উল্লাহ্ অলি, এ কিউ এম ফিরোজুল হক, আতিকুর রহমান অপু, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সালাহ্উদদীন আহমেদ মিলটন, আসাদুজ্জামার সমর প্রমুখ। নাটকের কোরিওগ্রাফি তানিয়া আলী চৌধুরী, পোশাক পরিকল্পনা-কানিজ ফাতেমা কাসেম, আবহ সঙ্গীত-ইসমাইল ভুইয়া, কণ্ঠ- ফয়জুল্লাহ সাঈদ, সঙ্গীত প্রক্ষেপণ- মেহেদী হাসান, আলোক বিন্যাস- মোঃ বজলুর রহমান, আলোক প্রক্ষেপণ- ইন্দ্রোজিৎ সেন, সেট মিজানুর রহমান স্বপন। ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই বিদ্রোহ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের মতে এটি ছিল সিপাহী বিদ্রোহ। আবার ভারতীয় ঐতিহাসিকরা এ বিদ্রোহকে ভারত বর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অবহিত করেছেন। তবে মতভেদ যাই থাকুক না কেন ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক ভারতীয় সিপাহীদের দীর্ঘ দিন পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও অসন্তোষেরই বর্হিপ্রকাশ। সিপাহী বিদ্রোহ নাটকটিতে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পরিবার তথা লাল কেল্লার অন্তরালে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সংঘাতের চিত্র অতি সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে। ক্ষমতা পাবার নেশায় কখনও কখনও মা মাটি মানুষের সঙ্গে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে তা ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকে সুস্পষ্ট। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর আলী খাঁ, ঘসেটি বেগম জগৎশেঠ, রাজ বল্লবের মত অসংখ্য বেঈমান বিশ্বাস ঘাতকদের যেমন দেখা যায় তদ্রুপ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও দেখা যায় অসংখ্য বেইমান ও বিশ্বাস ঘাতকদের। মূলত আমাদের গণসংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ‘বিদ্রোহ এবং’ নাটকটি হাজার বছরের সংগ্রামী স্বপ্ন স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য তৎকালীন ভারত বর্ষের নির্ভীক চিত্তে জীবন আত্মদানের বলিষ্ঠ চেতনায় বিধৃত হয়েছে। নাটক প্রসঙ্গে নৈবেদ্য থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দেশক রাজীব রেজা বলেন একটি নাটক তৈরি করার ইচ্ছা বা শখ কার না থাকে? তবে আমার একুটু বেশি বলেই হয়ত বা এটার সঙ্গে লেগে থাকি। সফলতার কথা চিন্তা করি না তবে ভাল কিছু করার প্রয়াস থাকে নিরন্তর। এ ধরনের কাজে কত ভাবনার জন্ম হয় আবার কত ভাবনার আগমন ঘটে। সে ভাবনা নিয়ন্ত্রণ ও তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই তৈরি হয় একটি প্রযোজনার। যেহেতু এটি একটি দলীয় কাজ সেহেতু এখানে থাকে নানা জন নানা মতো তবুও একটা জায়গায় মিলিত হই সুন্দরের স্বার্থে। আর এই স্বার্থকে অক্ষুণœ করতে আমাকে হতে হয় একটু ভিন্ন ধাঁচের মানুষ। অনেক কাট খড় পুড়িয়ে অনেক কিছু সহ্য করে জন্ম দিতে হয় একটি নাটকের। এর পেছনে কারোর অবদানই অস্বীকার করার মতো নয়। আমি কৃতজ্ঞ নাট্যকার সালাহ্উদদীন আহমেদ মিলটন, কানিজ ফাতেমা কাসেমসহ আমার সকল কর্মীবৃন্দ যারা সকল বাধাবিঘœœ ঝড় বৃষ্টি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আজ এই নাটকটিকে মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সিপাহী বিদ্রোহ বা লাল কেল্লা অতীব কঠিন ও সূক্ষ্ম একটি বিষয় আর এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। কতটুকু পেরেছি জানি না তার বিচারের দায়িত্ব দর্শকদের। যারা নাটকটির শুরু থেকে শেষ অবধি দেখবেন। যতটুকু সফলতা ও ভাল তার সকল ভাগিদার কর্মীরা আর ব্যর্থতার দায় আমার।
×