ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ব্রিজ খেলা জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশের ব্রিজ খেলা জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা

রুমেল খান ॥ ‘বাংলাদেশের ব্রিজের ইতিহাসে এরচেয়ে বড় অর্জন এর আগে কখনও পায়নি। বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারার মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। আর আমার কাছে সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হচ্ছে ব্রিজ বিশ্বকাপে যে ২২টি দেশের পতাকা উড়বে তার মধ্যে উড়বে আমাদের সবার প্রিয় লাল-সবুজের পতাকাও।’ কথাগুলো মুশফিকুর রহমান মোহনের। অনেক পরিচয় তার। ক্রিকেট, ফুটবল, দাবা, স্কোয়াশ এবং ব্রিজ সংগঠক। ব্যবসায়ী এবং সৌখিন কবিও বটে। করেন রাজনীতিও। দায়িত্বে আছেন আওয়ামী যুব লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে তিনি জানিয়েছেন ব্রিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য, সামর্থ্য, সমস্যা, হতাশা, সম্ভাবনাসহ আরও অনেক কিছুই। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহতের সৃষ্টি। মোহন তেমনই একটা উদাহরণ দিলেন, ‘বাংলাদেশে ব্রিজ খেলার চর্চা নেই বললেই চলে। এছাড়া আমাদের নিজস্ব কোন ভেন্যু ও অনুশীলন করার জায়গা ও খেলার জায়গা নেই। আর্থিক সঙ্গতি নেই। বলতে গেলে কিছুই নেই। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি ব্যক্তি প্রচেষ্টা, ব্যক্তি উৎসাহ, ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে খেলাটাকে দাঁড় করাতে এবং একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে। আশার কথা হচ্ছে ইতোমধ্যেই আমরা ইস্পাহানী এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মতো স্পন্সরদের পাশে পেয়েছি।’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলবে। এই আসরে বাংলাদেশ একেবারেই নবীন ও অন্যদের চেয়ে অনভিজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে মোহনের আবেদন, ‘এই আসরে আমাদের কাছ থেকে অভাবনীয় ভাল রেজাল্টের আশা করাটা সমীচীন হবে না। এটা গায়ের জোরের খেলা না, এটা বুদ্ধির খেলা। কিন্তু পারফর্মেন্সের সর্বোচ্চ স্তরে আমরা এখনও যেতে পারিনি। এখন যদি আমাদের দলের পেছনে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও করা হয় তাহলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারব না। এক্ষেত্রে আমাদের আরও তিন-চার বছর সময় দিতে হবে। আর অনুশীলন ও ওয়ার্কশপ করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে এই আসরে আমাদের মূল লক্ষ্য তিনটি। অভিজ্ঞতা অর্জন, কমপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া এবং দুটি ম্যাচ জেতা। তাহলেই আমি সন্তুষ্ট হব।’ বাংলাদেশে দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ব্যাংকার। এ প্রসঙ্গে মোহনের রসিকতা, ‘বিষয়টা কাকতালীয়। হতে পারে ব্যাংকারদের বুদ্ধি অন্যদের চেয়ে হয়তো একটু বেশিই। তাছাড়া তারা সবাই ভাল ছাত্র এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও বটে।’ একটু দম নিয়ে মোহন আরও যোগ করেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে ইদানীং নতুন প্রজন্মের বেশকিছু খেলোয়াড় পেয়েছি যারা সবাই বুয়েটে পড়ছে।’ ‘তাসে নাশ, তাসে সর্বনাশ।’ বাংলাদেশে সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত এই প্রবাদটির কারণেই বাংলাদেশে ব্রিজ খেলাটির উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে মোহনের দৃষ্টিভঙ্গি, ‘তাস খেলা নিয়ে সবার মধ্যে ভুল ও নেতিবাচক ধারণার কারণে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের এই খেলাটি খেলতে বাধা দেন। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোও পৃষ্ঠপোষকতা করতে এগিয়ে আসতে চায় না। এই সনাতনী ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে সবার বেরিয়ে আসতে হবে। অনেকেই জানেন না, পৃথিবীর অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বও নামকরা ব্রিজ খেলোয়াড়। যেমন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর শরীফ, পৃথিবীর সেরা ধনী মাইক্রোসফটের কর্ণধার বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেটস, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ আরও অনেকেই। আমি নিজে বাংলাদেশের অনেক ক্যাবিনেট সচিব এবং রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ব্রিজ খেলেছি।’ ভারত বিশ্বের অনেক দেশেই আজ ব্রিজ খেলাকে এডুকেশন আইটেম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে মোহন বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ করছি কেউ যেন ব্রিজ খেলাকে জুয়া খেলা বা মন্দ খেলা হিসেবে মনে না করেন। এটা হচ্ছে মাইন্ড গেমগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম খেলা।’ এশিয়ান গেমস এবং অলিম্পিকে ব্রিজ খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মোহন বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বকাপে এবং অলিম্পিকে কিছু না করতে পারলেও অন্তত এশিয়ান গেমসে (২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিতব্য) বাংলাদেশ এই খেলায় পদক জিততে সক্ষম হবে।’ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশনের যাত্রা শুরু। মোহন সভাপতি হিসেবে আছেন গত তিন বছর ধরে। তার আমলেই বাংলাদেশ এই প্রথম ব্রিজ বিশ্বকাপ খেলছে এবং এর আগে জুনিয়র পর্যায়ে বিশ্বকাপ খেলেছে ইতালিতে গিয়ে। তাহলে ফেডারেশনের আগের কমিটিগুলো কি ব্যর্থ? ‘আমি অতীতে কে কি করছিল বা করেনি এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। আমার কর্মকা- বর্তমানকেন্দ্রিক, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি ভবিষ্যতে। তাছাড়া আমি প্রচ- ইতিবাচক মানসিকতার লোক এবং আশাবাদী।’ বাংলাদেশে ব্রিজ খেলোয়াড় পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কি? পাইপলাইনের কি অবস্থা? ‘এ মুহূর্তে আমাদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট মিলে প্রায় ৩০ মেধাবী-নতুন খেলোয়াড় আছে, যাদের আমরা আবিষ্কার করেছি।’
×