ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদ্রাসায় মুখে গামছা বেঁধে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর ওপর নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ আগস্ট ২০১৭

মাদ্রাসায় মুখে গামছা বেঁধে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর ওপর নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ এক শ’ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর (৮) আহত মুখে গামছা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে মাদ্রাসার আবাসিক হল থেকে গুরুতর অবস্থায় নির্যাতিতা শিশু ছাত্রীকে তার মা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে গৌরনদী উপজেলা সদরের খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা কওমী মাদ্রাসার আবাসিক হলে। নির্যাতিতা ওই শিশু ছাত্রীর মা পশ্চিম শাওড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ কামাল হোসেন বেপারীর স্ত্রী রেনু বেগম জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর পূর্বে তার একমাত্র শিশুকন্যা কামরুন নাহার সুমাইয়াকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই তাকে (সুমাইয়া) মাসিক তিন হাজার টাকা চুক্তিতে মাদ্রাসার আবাসিক হলে রাখা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, শুক্রবার সকালে মাদ্রাসার এক ছাত্রী গোপনে তাকে ফোন করে জানায় মাদ্রাসার তিন নারী শিক্ষক সুমাইয়াকে রাতে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। খবর পেয়ে তিনি সকাল দশটার দিকে মাদ্রাসার আবাসিক হল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তার শিশুকন্যা সুমাইয়াকে উদ্ধার করেন। এ সময় মাদ্রাসার বড় খালামনি (সুপার) তাকে জানায়, অপর এক ছাত্রীর একশ’ টাকা চুরির ঘটনায় সুমাইয়াকে শাসন করা হয়েছে। তবে কোন ছাত্রীর টাকা চুরি হয়েছে তা তিনি (সুপার) বলতে পারেননি। নির্যাতিতা শিশু ছাত্রী সুমাইয়ার বরাত দিয়ে তার মা রেনু বেগম আরও অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে একশ’ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মাদ্রাসার সুপার (বড় খালামনি হিসেবে পরিচিত) ও মেঝ খালামনি এবং বাংলা খালামনি তার মেয়ে সুমাইয়ার মুখে গামছা বেঁধে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রেনু বেগম বলেন, বড় খালামনির নির্দেশে মুখে গামছা বাঁধার পর মাদ্রাসার আবাসিক হলের মেঝ খালামনি গুনে গুনে তার মেয়েকে ৬০টি ও বাংলা খালামনি ১০০টি বেত্রাঘাত করেছে। এতে তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে (সুমাইয়া) রাতের খাবার দেয়া হয়নি। খবর পেয়ে তিনি সকাল দশটার দিকে মাদ্রাসার আবাসিক হলে উপস্থিত হয়ে গুরুতর অবস্থায় তার শিশুকন্যা সুমাইয়াকে উদ্ধার করে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অভিযোগের ব্যাপারে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন (০১৭৯১-১২৭৩৪৯) নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে কোন অপরাধ করলে কওমী মাদ্রাসায় শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন সারাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে প্রচলিত। তাই টাকা চুরির ঘটনায় ছাত্রী সুমাইয়াকে মাদ্রাসার খালামনিরা (শিক্ষক) শাসন করেছে। শিশু শিক্ষার্থী সুরাইয়াকে নির্যাতনকারী ওই তিন শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে বলেন, মাদ্রাসার প্রধান সুপার (বড় খালামনি) আমার স্ত্রী, অন্য দুইজনও আমার নিজস্ব লোক, তাদের নাম বলা যাবে না। তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেননি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×