ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পর প্রেমিক যুবকের কঙ্কাল উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ আগস্ট ২০১৭

রংপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পর প্রেমিক যুবকের কঙ্কাল উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১১ আগস্ট ॥ নিখোঁজের প্রায় পাঁচ মাস পর রংপুরের বদরগঞ্জে জাকিরুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবকের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে রংপুর পিবিআই পুলিশ। তার প্রেমিকা ও স্বজনদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার সকালে গোপালপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেতের মাটি খুঁড়ে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর বাজারে দরজির কারিগর ছিলেন জাকিরুল। তিনি ওই এলাকার পশ্চিমপাড়া গ্রামের আজাদ আলীর ছেলে। এর আগে গত ১৯ মার্চ থেকে জাকিরুলের কোন সন্ধান মিলছিল না। এ ঘটনায় জাকিরুলের বড় ভাই জরেজুল ইসলাম ২৩ মার্চ বদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। প্রেম ঘটিত বিষয়ে জাকিরুলকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। রংপুর পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক হোসেন আলী জানান, একই ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে নিখোঁজ জাকিরুলের প্রেম ছিল। ঘটনার রাতে মেয়েটির সঙ্গে মুঠোফোনে জাকিরুলের কথা-কাটাকাটি হয়। জাকিরুল নিখোঁজের বিষয়টি রংপুর পিবিআই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার ওই তরুণী এবং তার বাবা জাকির হোসেন ও চাচা তাহারুলকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জাকিরুলকে হত্যার পর মরদেহ ধানক্ষেতে পুঁতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন তারা। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার সকালে ওই ধানক্ষেত থেকে জাকিরুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । পুলিশ পরিদর্শক হোসেন আলী আরও জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জাকিরুলের বড় ভাই জরেজুল ইসলাম বলেন, ওইদিন (১৯ মার্চ) মধ্যরাতে মেয়েটি আমাকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছিল। এরই মধ্যে ফোনের লাইন কেটে যায়। এরপর অনেকবার ফোন দিলেও মেয়েটির ফোন বন্ধ পাই। সেই রাতে জাকিরুল বাড়িতেই ছিল। ভোরে দেখি ওর ঘরের দরজা খোলা এবং সে নেই। বাইসাইকেল নিয়ে রাতের কোন একসময় সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান মিলছিল না। ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি নিখোঁজের প্রায় ছয় মাস পর জাকিরুলের কঙ্কাল উদ্ধারের পর তার স্বজনরা ওসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাবা আজাদ আলী বদরগঞ্জ থানায় ছেলেকে হত্যার পর লাশ গুম করার লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বাবা আজাদ আলী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করেন। আদালত তা গ্রহণ করে বদরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। মামলার বাদীর অভিযোগ- পুলিশ আদালতের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করলেও আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। পরে বাদীর আরেক আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তা তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়। দীর্ঘদিন পর গত বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআই সদস্যরা মামলার অন্যতম আসামি ও প্রেমিকা জান্নাতি খাতুন, বাবা জাকির হোসেন, দাদা সিরাজুল ইসলাম এবং চাচা তাহারুলকে রংপুর শহর থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার সকালে গোপালপুর ইউনিয়নের শিবপুর এলাকার তেলীপাড়া সংলগ্ন ফাত্তাহ মুন্সীর আমন ক্ষেত থেকে জাকিরুলের কঙ্কাল উদ্ধার করে পিবিআই সদস্যরা।
×