ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মনিরামপুরে যাতায়াতে ভরসা কলাগাছের ভেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ আগস্ট ২০১৭

মনিরামপুরে যাতায়াতে ভরসা কলাগাছের ভেলা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মনিরামপুরে জলাবদ্ধ পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি পানিবন্দী মানুষের। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসা এবং দুর্গম এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এখন কলার ভেলা। পানিবন্দী এলাকায় বিভিন্ন বর্জ্য মিশে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও পানিবাহিত রোগ। একদিকে দূষিত পানি অন্যদিকে সাপ-পোকা মাকড়ের পচা গন্ধ নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন জলাবদ্ধ মানুষরা। সম্প্রতি অবিরাম বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের অন্তত ৪ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ ১৮ দিন যাবত পানিবন্দী হয়ে আছে। হত-দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কাজ না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। তেমনি দেখা দিয়েছে পানীয় জলের অভাব। অভাব হয়ে পড়েছে গৃহপালিত প্রাণীদের খাবার। সবচেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের জলাবদ্ধ মানুষ। পানি ও সাপ পোকা-মাকড়ের সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তর দু’ধারসহ অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে। সেখানে তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে, অনাহারে। উপজেলার ফকিরাস্তা এলাকার যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দু’ধারে টং বেঁধে থাকা পানিবন্দী চিনাটোলা এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, ভিটেবাড়িতে কোমর পানি। ভিটে বাড়ি ছেড়ে সংসার আর গরুটা নিয়ে টং ঘরে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেল।এই পর্যন্ত দশ কেজি চাল পাইছি। কি করে যে সংসার নিয়ে বেঁচে থাকব, তাই ভাবছি। তারপরও গরুটার খাবার নিয়ে পড়েছি মহাসমস্যায়। রাস্তায় টং ঘরে আশ্রয় নেয়া গৃহবধূ ফরিদা খাতুন বলেন, ‘গত বছরও প্রায় সাড়ে তিন মাস এ রাস্তায় কাটায়ছিলাম। আবারও রাস্তায় কাটাতি হচ্ছে, এ যে কি অভিশাপের জীবন। তা আপনাগে বুঝাতি পারবো না।’ পানিবন্দী মিজানুর রহমান নামে এক যুবক বলেন, পানিতে নামা যাচ্ছে না। একটু পানি গায় লাগলেই চুলকানি শুরু হয়। পানিতে নেমে কাজ করায় তার দুই হাতে ঘাঁ ভরে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, সম্প্রতি টানা বর্ষণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী ছিল। বর্তমানে কিছুটা পানি কমতে শুরু করেছে, তবে শ্যামকুড় ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পানি সরতে না পারায় তা আটকে আছে। শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, তার ইউনিয়নের চার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৪০০ পরিবার গরু ছাগল নিয়ে রাস্তায় উঠেছে। ত্রাণ সুবিধা যা পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গৌতম ঘোষ বলেন, পানিবন্দী শ্যামকুড় ইউনিয়নের নাগোরঘোপ এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্পে পানিবন্দী মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। তবে ওষুধ পাচ্ছে না এ কথা সঠিক নয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইয়ারুল হক বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
×