ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে আতঙ্কে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা

চরমপন্থী পরিচয়ে চাঁদা দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৭

চরমপন্থী পরিচয়ে চাঁদা দাবি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বাগেরহাটে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে কথিত ‘চরমপন্থী বা’ সর্বহারা পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবার-পরিকল্পনা, প্রকৌশল, বিদ্যুত বিভাগ বা’ দফতর নির্বিশেষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন নামে দফায়-দফায় একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিকৃত টাকা না পেলে ছেলে-মেয়েসহ হত্যার হুমকি দিচ্ছে। হুমকিপ্রাপ্ত কেউ কেউ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিতভাবে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন। আবার অতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ করছেন। তবে পুলিশ বলছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এসব হুমকিদাতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ অরুন চন্দ্র ম-ল বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান, সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত ৯ চিকিৎসকসহ ২০ কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। দুপুরের দিকে চরমপন্থী পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় সপরিবারে হত্যার হুমকি দেয় একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে। এরমধ্যে নজরুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা প্রাণের ভয়ে বিকাশের মাধ্যমে দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বাগেরহাট সদর থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনুরূপ বিদ্যুত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ জানান, কয়েকদিন আগে তার দাফতরিক ল্যান্ডফোনে কল করে নিজেকে ‘জনযুদ্ধ’ সদস্য শিমুল পরিচয় দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে জীবন নাশের হুমকি দেয়। একই দিন এ বিভাগের আরও কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। একইভাবে দাদা তপন, শিমুল ও হাতকাটা বিল্পব ইত্যাদি নানা নামে চরমপন্থী বা সর্বহারা বলে জেলা ও উপজেলার শিক্ষা বিভাগ, এলজিইডি, প্রাণিসম্পদ বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ প্রায় সকল দফতর ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে বেপরোয়া হুমকি-ধমকি ও অশ্রাব্য গালিগালাজ করছে। বাগেরহাট এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রাব্বানী জানান, চরমপন্থী জনযুদ্ধের বিল্পব বাহিনী পরিচয় দিয়ে একইদিনে তিন দফায় তার কাছে মোবাইল করে চাঁদা দাবি করা।এমনকি স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানান। ওই অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সাহিদ আলম ভূঁইয়া ও হিসাব রক্ষক আব্দুল ওহাব, হিসাব সহকারী মোঃ আলম এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান আসাদুল হক প্রায় একই কথা জানান। মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনম খায়রুল আনাম জানান, মোল্লাহাট উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোন করে চরমপন্থী দলের সদস্য পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়েছে।এভাবে গণহারে হুমকির ফলে অজানা আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে।তবে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেছেন, কয়েক দিন ধরে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মিথ্যা নাম পরিচয় ব্যবহার করে ওই হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।
×