ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা ফেরার পর আসন বণ্টনের চাপ দেয়া হবে

তৎপরতা না থাকায় বিএনপি জোটের শরিকরা নাখোশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৭

তৎপরতা না থাকায় বিএনপি জোটের শরিকরা নাখোশ

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য রাজনৈতিক জোটের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় এ জোটের শরিকরা বিএনপির প্রতি নাখোশ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিদেশে থাকায় আপাতত তারা বিএনপির অন্য নেতাদের কিছুই বলছেন না। তবে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টনসহ যাবতীয় প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপিকে চাপ দেবে। সূত্র জানায়, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে মোকাবেলার জন্য বিএনপি চাচ্ছে ২০ দলীয় জোটের বাইরে থেকে রাজনৈতিকভাবে ভাল ইমেজ আছে এমন আরও কয়েকটি দলকে নিয়ে জোটের পরিধি বৃদ্ধি করতে। এমন কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে তারা। আর এ কারণেই আপাতত ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না বিএনপি। তবে ইতোমধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম রব নেতৃত্বাধীন জাসদ ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে একজোট হয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০ দলীয় জোটের শরিকদের চাপে জুলাই মাসের মধ্যভাগে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করে বিএনপি। কিন্তু বৈঠক শুরুর আগের দিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় থাকতে পারবেন না জানিয়ে জোটের মহাসচিবদের বৈঠক স্থগিত করা হয়। এতে বিএনপির প্রতি নাখোশ হয় জোটের শরিক দলগুলো। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে শীঘ্রই বৈঠক হবে বলে তাদের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এর পর প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও বৈঠকের কোন খবর না থাকায় জোটের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। ইতোমধ্যেই ১৪ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ঘন ঘন মিটিং-সিটিং করে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করছে। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে এ ধরনের কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিদেশে থাকায় দলের অন্য নেতাদেরও এ নিয়ে কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপি জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দল অংশ নেবে এটি চূড়ান্ত। তবে জোটগতভাবে এ নির্বাচনে কোন্ দল কত আসন পাবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক আলোচনা মতে বিএনপি জোটের শরিকদের সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড়তে চায়। আর শরিকরা চাচ্ছে ৬০টি আসন। খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে জোটের নেতারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। জানা যায়, খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাথমিক আলোচনায় বিএনপি জোটের শরিক দল জামায়াত একাই বিএনপির কাছে দাবি করছে ৩১টি আসন। এছাড়া এলডিপি ১০টি, বিজেপি দুটি বাংলাদেশ ন্যাপ একটি, লেবার পার্টি একটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম একটি, কল্যাণ পার্টি তিনটি, জাতীয় পার্টি (জাফর) পাঁচটি. খেলাফত মজলিস একটি, এনডিপি একটি, মুমলিম লীগ একটি, ন্যাপ ভাসানী দুটি ও জাগপা একটি আসন দাবি করছে। কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে সর্বোচ্চ ১৫টি, এলডিপিকে দুটি, বিজেপিকে একটি, বাংলাদেশ ন্যাপকে একটি, লেবার পার্টিকে একটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে একটি, কল্যাণ পার্টিকে একটি, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) তিনটি, খেলাফত মজলিসকে একটি, এনডিপিকে একটি, মুমলিম লীগকে একটি, ন্যাপ ভাসানীকে একটি ও জাগপাকে একটি আসন দিতে চাচ্ছে। এদিকে জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও বিএনপি দলীয়ভাবে ২৭০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বাকি ৩০টি আসন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের দেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এখনও নিরাশ করা হচ্ছে না। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাইরের সমমনা কোন দল জোটের সঙ্গে নির্বাচনে এলে বিএনপি ২৭০ আসন থেকে আরও কয়েকটি আসন ছেড়ে দেবে। আর শেষ পর্যন্ত জোটের শরিকরা না মানলেও বিএনপির নির্ধারিত আসন থেকে আরও কয়েকটি আসন ছাড়বে। এসব বিষয়ে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের মতামত নেবেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আর বিএনপির এ অবস্থানের কথা জেনে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা এখনও আসনপ্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের এখনও এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। তাই ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি ও আসন বণ্টন নিয়ে জোটের শরিকদের নাখোশ হওয়ার কিছু নেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। তখন জোটের বৈঠক ডেকে সবকিছু ঠিক করে নেয়া যাবে। এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও জোটের আসন বণ্টন নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোয় অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। আশা করছি যোগ্য নেতারা জোট থেকে এবার মনোনয়ন পাবেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে ২০০০ সালে জামায়াত, বিজেপি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় রাজনৈতিক জোট গঠন করে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয় বিএনপি। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ভরাডুবি হলে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি আবার নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল জোটের পরিধি বৃদ্ধি করে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। পরে আরও দুটি দলকে নিয়ে করা হয় ২০ দলীয় জোট। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোটগতভাবে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। কিন্তু ওই আন্দোলনে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এবং সে বছর ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার ডাকা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচী সফল না হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে আবার বেকায়দায় পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এর ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ জোট আবারও ক্ষমতায় আসে। আর বিএনপি জোট সে নির্বাচন বর্জনের এক বছর পর লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে ব্যর্থ হয়। সূত্র জানায়, জোটের শরিক দলগুলো মনে করছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে আগেভাগে মাঠে না নামলে টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ জোটকে ভোটের মাঠে মোকাবেলা করা কঠিন হবে। আর বিএনপি নেতারা মনে করছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জোটের বিপরীতে খুব বেশি প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। মানুষ বিনা বাধায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে ফল তাদের পক্ষেই যাবে। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে প্রার্থী হয়ে সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে- এমনটি মাথায় নিয়েই এবার জোটের শরিকরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর এ কারণেই অন্যান্য রাজনৈতিক জোটের মতো এখনও নির্বাচনী তৎপরতা শুরু না হওয়ায় তারা বিএনপির প্রতি কিছুটা নাখোশ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
×