ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজ সঙ্কট

কোরবানির আগে পাঁচ লাখ টন লবণ আনা অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

কোরবানির আগে পাঁচ লাখ টন লবণ আনা অনিশ্চিত

এম শাহজাহান ॥ জাহাজ সঙ্কটে আমদানিকৃত অপরিশোধিত পাঁচ লাখ টন লবণ কোরবানির আগে দেশে আনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া গুনলে ভারতে মাদারভেসেল মিললেও লবণ খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে তীব্র লাইটার জাহাজের সঙ্কট রয়েছে। এতে করে সময়মতো লবণ আনা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অস্থিরতা বাড়ছে। এ বছর ২৩২ জন আমদানিকারককে পাঁচ লাখ টন লবণ আনার জন্য অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি আমদানিকারক প্রায় ২ হাজার ১৫৬ টন লবণ আমদানি করতে পারবেন। এসব লবণ আসবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের গুজরাট ও চেন্নাই থেকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে, ঋণপত্র স্থাপনের ৪০ দিনের মধ্যে লবণ জাহাজীকরণের নির্দেশ দিয়েছে আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর। আমদানিকারকরা প্রয়োজনে এবার গ্রুপভিত্তিক এলসি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত থেকে লবণ আনতে পারবেন। ইতোমধ্যে কিছু আমদানিকারক এলসি খুলেই লবণ আমদানির জন্য ভারতের গুজরাট ও চেন্নাই পৌঁছেছেন। সহজ মূল্যে লবণও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মাদারভেসেল এবং লাইটার জাহাজ সঙ্কটের মুখে কোরবানির আগে এসব লবণ দেশে আনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এতে করে কোরবানির সময় লবণের বাজার অস্থির হতে পারে বলে মনে করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির সময় লবণের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ ঘাটতির পেছনে অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারও পাঁচ লাখ টন আনার অনুমতি দেয়া হলেও সেই লবণ বাজারকে কতটা প্রশমিত করতে পারবে সেই প্রশ্ন রয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারী মনিটরিং কঠোর না হলে এ বছর লবণ নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি করা হতে পারে। এতে করে চামড়া খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, সঙ্কট যাতে না হয় সে জন্যই তো সবচেয়ে বেশি লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। ঋণপত্র প্রতিষ্ঠার চল্লিশ দিনের মধ্যে লবণ জাহাজীকরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোরবানির সময় আমদানিকৃত কিছু লবণ আনা গেলেও দাম বাড়বে না। কারণ চামড়া খাতে লবণের প্রয়োজন হবে সর্বোচ্চ ২০-৩০ হাজার টন। এদিকে, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে মানভেদে দেশের বিভিন্ন বাজারে ২৫-৪২ টাকা কেজিতে লবণ বিক্রি হচ্ছে। দাম না কমে বরং বাড়তির দিকে রয়েছে। কোরবানির চাহিদা পুঁজি করে সেই সময় লবণের দাম আরও বাড়তে পারে। যদিও মিলমালিকরা বলছেন, এ বছর লবণের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। তাদের দাবি কোরবানির আগেই কিছু লবণ দেশে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে সেই লবণ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হতে পারবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির জনকণ্ঠকে বলেন, মাদারভেসেলে কিছু লবণ ইতোমধ্যে জাহাজীকরণ করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটার জাহার পাওয়া যাচ্ছে না। লাইটার জাহাজগুলো পাথর ও কয়লা খালাসে ভাড়া খাটছে। এখন জরুরী ভিত্তিতে লবণ খালাসের সুযোগ না দিলে আমদানিকৃত লবণ বাজারে আনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কোরবানির আগে কিছু লবণ তারা বাজারে আনতে আন্তরিক। তবে জাহাজ সঙ্কটের কারণে তা সম্ভব নাও হতে পারে। জানা গেছে, ভারতে জাহাজীকরণ এবং দেশে সেই লবণ খালাস পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়। এই লবণ মিলে প্রসেসিং এবং বাজারজাতকরণ করতে আরও ২০ দিনের মতো সময় লাগে। এ বাস্তবতায় কোরবানির আগে আমদানিকৃত লবণ বাজারে আসা নিয়ে মিলমালিকদেরই সংশয় রয়েছে। তবে তারা বলছেন, দেশে যে লবণ মজুদ রয়েছে সেই লবণের সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম আর বাড়বে না। এদিকে, বিসিক এর তথ্য অনুযায়ী দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীসহ লবণ ব্যবহারকারীরা। তাদের মতে, দেশে বছরে লবণের মোট চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদন হয় মাত্র ১৬ লাখ টন। গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক চাষী মাঠ থেকে লবণ সময়ের আগেই তুলে ফেলেন। এ বছরও ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যায় লবণের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অপরিশোধিত লবণ পরিশোধন করে ফিনিশড গুড তৈরি করার সময় আরও ঘাটতি হয়। দেশে যদি ১৬ লাখ টন লবণের চাহিদা ধরা হয় তবে ১৬ লাখ টন লবণ পরিশোধ করতে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণের প্রয়োজন। কেননা পরিশোধনের সময় লবণের অনেক অপচয় হয়ে থাকে। আর এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই সরকার প্রতিবছর লবণ আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ ছোট মিলগুলোতে কাঁচা লবণের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও নিতাইগঞ্জ ও তার আশপাশ এলাকায় ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত লবণ মিল রয়েছে। এসব মিলের উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। আবার অনেক ছোট ছোট মিল কাঁচামাল সঙ্কটে সপ্তাহে এক-দুইদিন চালানো হচ্ছে। তাই দ্রুত আমদানিকৃত লবণ দেশে আনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
×