ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

কেরুর বর্জ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১২ আগস্ট ২০১৭

কেরুর বর্জ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

সংবাদদাতা, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা, ১১ আগস্ট ॥ দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারনে গোটা দর্শনা পৌর এলাকা এখন নোংরা, দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত হয়েছে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানির জৈব সার তৈরির কাঁচামাল চিনিকল ও ডিস্টিলারির বর্জ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাব ও মিলের বর্জ্যপানি নিষ্কাশন লাইনের পাইপ ফেটে নোংরা পানি বের হয়ে বিভিন্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শহরে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও ভ্রƒক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। জনমনে প্রশ্ন, যখন সরকার ইটভাঁটিসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী কলকারখানার কারণে পরিবেশ দূষণরোধে নানাবিধ ব্যবস্থা নিতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কেরু এ্যান্ড কোম্পানির দ্বারা আর কত বেশিমাত্রার দূষণ ঘটলে দূষণরোধে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ? জানা যায়, ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দামুড়হুদার দর্শনায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল ও ডিস্টিলারির সমস্বয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের সময় মিলের তরল বর্জ্য ও মিলের যন্ত্রপাতি ধোয়ামোছাসহ আবাসিক এলাকার নোংরা পানি নিষ্কাশনের জন্য চিনিকল থেকে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাইপ লাইন বসানো হয়। এ পাইপ লাইনটি দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় প্রায় এক যুগ ধরে পাইপের বিভিন্ন অংশ ফেটে ও ভেঙ্গে গিয়ে মিলের তরল বর্জ্যসহ নোংরা পানি বের হয়ে রেলবাজার সংলগ্ন বদের মা’র গর্ত, দক্ষিণ দিকের আশুর গর্ত, মোছাদ্দারুল মিয়ার পুকুর ভর্তি হয়ে ও পুরাতন বাজার হিন্দুপাড়ার রাস্তাসহ বসতবাড়ির ওঠানে ভর্তি হয়ে গোটা এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এ অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করলে কয়েক বছর আগে চিনিকল কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে পাইপ লাইনটি মেরামত করে। আবারও পাইপ লাইনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে আগের অবস্থায় ফিরে গিয়ে অসহনীয় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ করে তুলেছে দর্শনা শহরবাসীকে। এছাড়া কয়েক বছর আগে কেরু কর্তৃপক্ষ মিল এরিয়ায় বড় আকারের দুইটি খোলা জলাধার নির্মাণ করে সেখানে জৈব সারের কাঁচামাল মিলের বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা করে। খোলা অবস্থায় থাকার কারণে এ বর্জ্যরে দুর্গন্ধে রাতদিন এলাকার বাতাস ভারি হয়ে থাকে। দিনের বেলা যত রোদ পড়ে এর পানি শুকিয়ে দুর্গন্ধের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। এ দুর্গন্ধের কারণে কেরু এলাকা ছাড়াও শহরের আনোয়ারপুর, শান্তিপাড়া, পাঠানপাড়া, মোবারকপাড়া, ইসলামবাজার, পুনাতনবাজার, মোহাম্মদপুর, আজমপুর মহল্লাসহ শহরজুড়ে মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ ঘটছে। ফলে বায়ু দূষনজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকায় বসবাসকারী মানুষ। এ বিষয়ে এলাকার একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা রোজ এ রাস্তাটি দিয়েই স্কুলে যাতায়াত করি। এখানে আসলে রাস্তার দু’পাশের ট্যাংকের নোংরা পানির দুর্গন্ধে আমাদের খুবই অসুবিধা হয়। অনেক সময় বমি ওঠার উপক্রম হয়। এ রাস্তাটি ছাড়া অন্য রাস্তায় অনেক দূরত্বের কারণেই এখান দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে রোদ ও বৃষ্টির সময় বেশি অসুবিধা হয়। এ সমস্যা ছাড়াও মিলের চিমনির ছাই ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের বিষয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমরা সব বিষয়ে নিয়ম মেনেই চলি। আমাদের কারণে পরিবেশষ দূষণ ঘটে না। আর তা হলে তো পরিবেশবাদিরা আমাদের বলতেন।
×