ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই থেকেই রহিম ও করিমের নামের সঙ্গে যুক্ত হয় টোকাই

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ আগস্ট ২০১৭

সেই থেকেই রহিম ও করিমের নামের সঙ্গে যুক্ত হয় টোকাই

দীর্ঘ ২০ বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে সর্বহারা কামাল মিয়া স্ত্রী আরিফাকে শরীয়তপুর থেকে লঞ্চযোগে এসেছিল কেরানীগঞ্জের চরকুতুব এলাকায়। অচেনা এলাকায় কোনমতে ঠাঁই করে নেয় ম্যান্ডু মিয়ার ভাড়াটে বাড়িতে। ক্ষেত পাড়ে ছোট্ট মুলিবাঁশের ঘরে শুরু হয় কামাল-আরিফার নতুন সংসার। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কামাল যোগাড় করে নেয় বর্জ্য আবর্জনা কুড়ানোর কাজ। আরিফা সংসারের কাজ সেরে ছুটতে থাকে আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির ঝিয়ের কাজে। এসব কাজ কর্ম সেরে বিভিন্ন বাড়ি থেকে একমুঠো ভাতের অপেক্ষায় থাকে আরিফা। হাঁড়ি-পাতিল, থালা-ঘটি-বাটি ধোয়ার সময় বাসি ভাত-তরিতরকারি অবশিষ্ট রয়ে যায়। আরিফা সেগুলো একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে নিয়ে আসে নিজ ঘরে। এভাবে দিনে দিনে তাদের সংসারের অভাব দূর হতে থাকে। এভাবেই চলে দিন-মাস-বছর। কামাল-আরিফার সংসারে ৪ বছরের ব্যবধানে জন্ম নেয় দুটি সন্তান রহিম ও করিম। তাদের বয়স ৭ বছর ও ৩ বছর। কামাল দিনের পর দিন সংসারের খাওয়া দাওয়ার প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম অবস্থায় পড়ে যায়। আরিফা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অপরদিকে গর্ভবতী হয় আরিফা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কামাল বিভিন্ন এলাকায় বর্জ্য কুড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তার দেখা দেয় ভীষণ জ্বর। অভাবের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে একদিন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ে আরিফা। কামাল মৃত্যুর পূর্বে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বোতল, কাগজ, লোহা, টিন, কার্টন ও পুরনো কার্টন বিক্রি করে যে পয়সা পেত তাতে করে তার সংসার মোটামুটি ভাল অবস্থায় চলছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভবতী আরিফা ছোট্ট রহিম ও করিমকে নিয়ে কোথায় যাবে, কে দেবে তাদের খাবার, চিকিৎসা বাসস্থানের নিশ্চয়তা। কঠিন বাস্তবতার মুখে অসুস্থ মায়ের পাশে দাঁড়াতে ছোট্ট করিমের হাত ধরে পথে নামে বড় ভাই রহিম। সেই থেকেই রহিম ও করিমের নামের সঙ্গে যোগ হয় টোকাই শব্দটি। আবর্জনার স্তূপ থেকে বিক্রিযোগ্য কাগজসহ কিছু পেলে তা কুড়িয়ে নিয়ে বস্তা বোঝাই করে সারাদিন। সন্ধ্যায় কুড়ানো জিনিসপত্র বিক্রি করে রহিম-করিম মায়ের কাছে ফেরে। রহিম ও করিম প্রতিদিন ১৫-২৫ কেজি বিক্রিযোগ্য জিনিস সংগ্রহ করত এবং শেষ বেলায় কেরানীগঞ্জের চরকুতুব এলাকার ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে প্রতিকেজি বোতল ২৭ টাকা, লোহা ২২ টাকা, টিন ১২ টাকা, কার্টন ৬ টাকা, নতুন কার্টন ১১ টাকা দরে বিক্রি করে উপার্জিত টাকা মায়ের কাছে দেয় রহিম ও করিম। -সালাহউদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ থেকে
×