ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী মিশন নিয়ে এ মাসেই মাঠে নামছে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১২ আগস্ট ২০১৭

নির্বাচনী মিশন নিয়ে এ মাসেই মাঠে নামছে জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরব্যাপী নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। উদ্দেশ্য বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দেয়া ও রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করা। এ লক্ষ্যে চলতি মাস থেকেই লাঙ্গলে ভোট চেয়ে মানুষের কাছে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী গণসংযোগ, লঞ্চমার্চ, ট্রেনমার্চ, বিভাগীয় ও রাজধানী শহরে এরশাদের জোটের পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। এভাবে সারাদেশে কর্মসূচী চালিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি দলের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছেন এরশাদ। একইসঙ্গে জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির পক্ষে জনমত গঠন করবেন তিনি।দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কর্মসূচীর দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে জনমত আদায়ে যেসব কর্মসূচী নেয়া হবে এরসঙ্গে মিল রেখে আরও ভাল কর্মসূচী দেবে জাপা। তবে কর্মসূচী গ্রহণে বিএনপি বিলম্ব করলেও তারা বসে থাকবে না। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে সরকারে না আসতে পারলেও বিরোধী দলে থাকতে চায় এরশাদের দল। এজন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামছেন দলটির নেতারা। প্রয়োজনে জোটের আকার বাড়াবেন। নির্বাচনের আগে আগে বিভিন্ন দল থেকে বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীও জাপায় যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন নেতারা। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে আসনপ্রতি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতি আসনে তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। কোন কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচার শুরুরও গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছেন এরশাদ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন করতে গেলে সাংগঠনিক শক্তি লাগবে। সারাদেশে দল লাগবে। এছাড়া নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে দেশ ও জাতির কল্যাণে কর্মসূচী দিতে হবে। এসব বিষয় মাথা রেখে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পার্টির চেয়ারম্যান টানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে তিন মাসের কর্মসূচী দেব। এর মধ্যে আগস্টে খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহে বড় ধরনের সমাবেশ করা হবে। খুলনা মহাসমাবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হবে জাতীয় পার্টির কর্মসূচী। অক্টোবর কিংবা নবেম্বরে হবে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ। জাতীয় পার্টিকে মানুষ ভালবাসে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকায় সারাদেশের মানুষের কাছে যেতে পারি না। এজন্য দলকে সংগঠিত করতে হবে। মানুষের কাছে যাব। সবাইকে জানাব আমরা এখন আছি। আপনারা আমাদের ভোট দেন। শান্তি দেব। নিরাপত্তা দেব। আগের মতোই উন্নয়ন করব। যেমন এরশাদের ক্ষমতায় সময় সারাদেশে উন্নয়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আরও বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক সফর, কল্যাণমুখী ইশতেহার ঘোষণা, যোগ্য প্রার্থী বাছাই, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে জাপার শাসনামলের সোনালি দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, অঞ্চলভিত্তিক সভা-সমাবেশ, সেমিনার করা প্রভৃতি। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পল্লীবন্ধু (এরশাদ) যাবেন। নৌ-পথে যাত্রায় আমাদের সঙ্গে জেলা-উপজেলা নেতারাও যোগ দিতে পারবেন। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু হবে। এছাড়া ট্রেন ও সড়কপথে বিভিন্ন জেলায় সফর করব। দলটির অন্তত ৫ প্রেসিডিয়ামের সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে জাপার ৭৬ সাংগঠনিক জেলায় জোটের পক্ষ থেকে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মহা-সমাবেশের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরে রাজধানীতে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে মহা-সমাবেশের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯ জেলায় সম্মেলন শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্মেলনের বড় বাধা হলো নেতৃত্বের সঙ্কট ও দলীয় কোন্দল। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করবেন। এসব কাজ পরিচালনার জন্য প্রত্যেক এলাকায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়ামের সদস্য, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয়সহ জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। কর্মসূচী সফল করতে কেন্দ্রীয় সেল ও মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সময়োপযোগী ইশতেহার তৈরি করতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলও চূড়ান্ত করেছে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, জনকল্যাণমুখী ইশহেতার উপহার দিতে চান তারা। যার প্রত্যেকটি ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে বেকারত্বসহ যুব সমাজের নানামুখী সমস্যা সমাধান, তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শিল্প স্থাপনসহ দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় ইশতেহারে প্রধান্য পাবে। কথা ছিল ঈদ-উল ফিতরের পর পরই ইশতেহার ঘোষণা হবে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে আরেকটু সময় নিয়ে ইশহেতার প্রকাশ করবে দলটি। গত শনিবার দলের যৌথ সভায় ইশতেহার দ্রুত তৈরি ও প্রকাশের তাগিদ দিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ নিজেই। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে আমরা মানুষের জন্য কি করব তা এখনই চূড়ান্ত করে দেশবাসীকে জানাতে হবে। দলটির নেতারা জানান, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-চাঁদপুর-শরীয়তপু-ভোলা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় লঞ্চমার্চ করবেন এরশাদ। তিন হাজারের বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সবচেয়ে বড় লঞ্চ পারাবত-১২ নিয়ে হবে এ লঞ্চ যাত্রা। এছাড়াও আরও একাধিক লঞ্চ থাকবে বহরে। জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, দলকে সংগঠিত করতে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে। নির্বাচনমুখী পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। আশাকরি জাপা আগামীতে ক্ষমতায় আসবে। কারণ মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে চায়। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি যেন ভাল অবস্থানে থাকতে পারে সেজন্য প্রায় সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছেন এরশাদ। বিএনপি নির্বাচনে না এলে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে লড়বে জাপা। এজন্য আসনপ্রতি নিজ দলের তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট করবেন এরশাদ। এজন্য আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে প্রার্থী তালিকাও দিয়েছেন তিনি। তালিকায় নিজ দলের ৭০ জনসহ ৫৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোট নেতাদের মধ্যে ৩০ জনের নাম থাকার কথা জানা গেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সর্বশেষ ভারত সফর করেছেন তিনি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদসহ জাপার কয়েক শীর্ষ নেতা। বৈঠক শেষে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দরে এরশাদকে গণসংবর্ধনা দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনী রূপরেখা চূড়ান্ত করে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন এরশাদ।
×