ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিছুদিন পর সেলাই কাটা হবে

তোফা-তহুরার শরীরে কোন সংক্রমণ হয়নি, ভাল আছে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১২ আগস্ট ২০১৭

তোফা-তহুরার শরীরে কোন সংক্রমণ হয়নি, ভাল আছে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ অস্ত্রোপচারের পর কেটে গেছে ১১ দিন। চিকিৎসকদের আশঙ্কা থাকলেও তোফা ও তহুরার শরীরে বিশেষ কোন সংক্রমণ হয়নি। বর্তমানে তারা দুজনই মায়ের বুকের দুধসহ অন্য খাবার খাচ্ছে। তাদের শরীরের ক্ষতস্থান শুকিয়ে এসেছে। পাশাপাশি ড্রেসিংও চলছে। তবে এখনও তাদের শরীরের ক্ষতস্থানের সেলাই কাটার সময় হয়নি বলে জানালেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক। তিনি শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথমদিকে ওদের শরীরে সামান্য সংক্রমণ দেখা দিলেও দু-একদিন পর তা ঠিক হয়ে গেছে। এখন তারা অনেটাই ভাল আছে। শরীরের ক্ষতস্থান শুকিয়ে এলেও আমরা সেলাই কাটার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব।’ পিঠের একটু নিচ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে জন্মেছিল তোফা-তহুরা। ১০ মাস বয়সী গাইবান্ধার এ শিশুদের এখন শিশু সার্জারি ইউনিটের অপারেশন থিয়েটারের পাশে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। যাতে তোফা ও তোহার বিশেষ যতœ হয় এবং তারা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারে। এখানেই চলছে তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা। শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ওয়ার্ডে ঢুকছেন তাদের মা। বাকি সময় চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যা চলছে। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের ২০ থেকে ২২ জন চিকিৎসক যুক্ত থেকে নয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা করেন তোফা-তহুরাকে। হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক বলেন, এ্যানেসথেসিয়া, নিউরোসার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, শিশু সার্জারি, অর্থোপেডিকস বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তোফা ও তহুরাকে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মেরুদ-ের হাড়, মেরুমজ্জা একসঙ্গে লাগানো ছিল। অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি ছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর তারা হাত-পা নেড়েছে। ওদের জরায়ু, ডিম্বাশয় ঠিক আছে। এখন তারা তাদের পেটের মধ্যে যে ছিদ্র দিয়ে মল ত্যাগ করছে আগামী ছয় মাস সেভাবেই করবে। ছয় মাস পর তাদের অস্ত্রোপচার করে পায়খানার রাস্তা তৈরি করাসহ অন্য কাজগুলো করা হবে। তোফা-তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’। শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটি প্রথম। এর আগে অন্য হাসপাতালে তিন জোড়া শিশুকে অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়েছে, তাদের ধরন ছিল আলাদা। জন্মের পর থেকে ১০ মাস তোফা ও তহুরা একসঙ্গে বড় হয়েছে। পিঠের কাছ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। দুজনের পায়খানার রাস্তা ছিল একটি। তবে মাথা-হাত-পা ছিল আলাদা। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া লাগা দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আলাদা। শুধু পায়ুপথ একটি। গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢামেকে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়। গত ১ আগস্ট তাদের শরীর আলাদা করা হলো।
×