ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনিন্দ্য সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ প্রাচীন পুরনো বৃক্ষের ক্ষুদ্ররূপ- শিল্পসুন্দর

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১২ আগস্ট ২০১৭

অনিন্দ্য সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ প্রাচীন পুরনো বৃক্ষের ক্ষুদ্ররূপ- শিল্পসুন্দর

মোরসালিন মিজান বিশাল বৃক্ষের ক্ষুদ্র রূপ। ক্ষুদ্র বটে। কোন্টি কোন্ গাছ চিনতে একদম অসুবিধে হয় না। গাছের স্বাভাবিক গঠন-আকৃতি ঠিক রেখেই যতটা সম্ভব ছোট করা হয়েছে। টব বা ট্রেতে লাগানো গাছ বাইরে খোলা পরিবেশে বড় হওয়া গাছের মতোই দেখায়। পাশাপাশি সাজানো বৃক্ষের কিছু প্রজাতি মোটামুটি চেনা-জানা। অচেনা, অল্পচেনা আছে কিছু। সব মিলিয়ে আশ্চর্য সবুজ আর সুন্দর একটি বাগান। চার দেয়ালের ভেতরে এত সবুজ, এত সুন্দর, বলতে মন চায়Ñ প্লিজ একবারটি ঘুরে আসুন! অবশ্য এরই মাঝে অনেকে ঘুুরে এসেছেন ডব্লিউভিএ মিলনায়তন। ধানম-ি ২৭ নম্বর সড়কের মিলনায়তনটিতে এখন চলছে বনসাইয়ের বিশেষ প্রদর্শনী। চারদিনের আয়োজন। শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি আয়োজিত প্রদর্শনী দেখে শৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা যারপর নাই মুগ্ধ। সোসাইটির এটি ১৯তম আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও ৬০ শিল্পী তাদের নিজেদের তৈরি বনসাই নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। একজন শিল্পীর একাধিক কাজ। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় ১ হাজার। না, একসঙ্গে এত গাছ প্রদর্শন করার সুযোগ নেই মিলনায়তনে। পর্যায়ক্রমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার প্রদর্শনী কক্ষের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হলো, অন্য এক ভুবন। সবুজের কী যে মায়া, মুহূর্তেই অধিকার করে নিল! চারটি প্রদর্শনী কক্ষের সবক’টিতেই বনসাই। প্রথমেই চোখ গেল ল্যান্ডস্কেপে। ২০ থেকে ২৫টি ল্যান্ডস্কেপ রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। সিমেন্টের লম্বা ট্রেতে অশীতিপর বৃদ্ধের মতো হাঁটু গেড়ে বসে আছে একটি পাকুড় গাছ। শিল্পী আনিসুল হক অবশ্য বললেন, এর বয়স ঠিক ৮০ বছর হবে না। তবে অর্ধশতাব্দীর পুরনো বৃক্ষ। গাছটির কা- মোটা। পুরনো প্রাচীন একটা রং গায়ে মেখে আছে। শাখা-প্রশাখা সুবিন্যস্ত। ঘনসবুজ পাতা ভরপুর প্রাণের প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে। পেছনের ইতিহাসটি তুলে ধরে শিল্পী বললেন, রমনা পার্কের একটি পাকুড় গাছ থেকে এই অংশটুকু সংগ্রহ করেছিলাম। তার পর গত ১৮ বছর ধরে একে গড়ছি! এমন তথ্য জেনে অবাক না হয়ে পারা যায়? আসলে বনসাইয়ের বেলায় এটিই সত্য। প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। প্রেমে-ভালবাসায় গড়ে নিতে হয় জীবন্ত শিল্পকর্মকে। ছোট পরিসরে খুব কালারফুল একটি ল্যান্ডস্কেপ করেছেন আমিনা হক মিনা। টবের উপরিভাগ পর্বতের আদলে গড়ে নিয়েছেন তিনি। চূড়ার দুই পাশে হানিলোকাস্ট এবং ফাইকাস রোপণ করেছেন। কাঁটাভর্তি ক্যাকটাসে লাল রঙের ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে। আর ভূমিভাগের পুরোটাজুড়ে বিদেশী এক ধরনের আগাছা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। মাটি কামড়ে থাকা সবুজ আগাছা কার্পেটের মতো মুড়িয়ে রেখেছে চারপাশ। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা শিল্প! গ্রামীণ ঐতিহ্যের তেঁতুলগাছ দিয়ে ল্যান্ডস্কেপ করেছেন রিজওয়ান সামাদ। রীতিমতো তেঁতুলের বন তৈরি করে দেখিয়েছেন তিনি। এল জামান প্রাণহীন পরিত্যক্ত কাঠের গা খুঁড়ে সেখানে মাটি ও জলের সংস্থান করেছেন। লাগিয়েছেন চেরি ও সেরিসা গাছ। রিজওয়ান সামাদ ল্যান্ডস্কেপ করেছেন ফুকেন ট্রি এবং প্রেমনা গাছের বনসাই দিয়ে। প্রদর্শনীর দেশীয় গাছগুলোর মধ্যে আছে নানা প্রজাতির বট। একটি ফাইকাস ভাইরেন। শিল্পী কাকুল এটিকে চমৎকার ফর্ম দিয়েছেন। গ্রামীণ ঐতিহ্যের হিজলও বেশ দৃশ্যমান। শৈশবের স্মৃতি যেন মনে করিয়ে দেয় রাবেয়া সুলতানার হিজল গাছ। লম্বা পাতার গাছে চমৎকার ফুল ফুটে। সে ফুলের জন্য যেন অপেক্ষা করে আছে প্রদর্শনীর সব হিজল গাছ। নিশিন্দাও শহরে তেমন দেখা যায় না। গাছটি থেকে বনসাই করেছেন হবিগঞ্জের কহিনূর। গুঁড়ি দেখে বোঝা যায়, বহু বছরের পুরনো। কত বছর হবে বয়স? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল গাছের বয়স ৪০ বছরের কম হবে না। আমি তুলে এনেছিলাম ৭ থেকে ৮ বছর আগে। কামিনী গাছের বনসাই নিয়মিত দেখা যায়। শিল্পী মরিয়ম ও ফরিদা সামাদ গাছটিকে নিজেদের মতো করে গড়ে নিয়েছেন। তাদের কামিনীগুলা শাখা-প্রশাখা নিয়ে সুন্দর ছন্দে ওপরের দিকে উঠে গেছে। অপর শিল্পী সোলায়মানের সেমি ক্যাসকেড বিশেষভাবে মুগ্ধ করে। তিনি গাছটির ডাল পালা বাগানবিলাসের মতো নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কামিনী গাছের কা- এবং ছোট ছোট পাতাও বেশ লাগে দেখতে। প্রদর্শনীতে আছে ঔষধি বৃক্ষের বনসাই। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে অর্জুন। শহীদুল হাসান দুর্লভ এই গাছটি নিয়ে কাজ করেছেন। বিলুপ্তপ্রায় গাছের মধ্যে আরও রয়েছে বৈঁচি, ঘূর্ণি তমাল, খয়ের, জঙ্গলী ও কর্পূর। বোতল ব্রাশের বনসাইও কম দেখা যায়। দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সুরাইয়া রহমান। একই শিল্পী বিদেশী গাছ চায়নীজ এল্ম থেকে বনসাই করেছেন। তার প্রেমনা গাছের বনসাইটি যেন মিনিয়েচার শিল্পকর্ম। গাছটিকে যেমন খুশি আকৃতি দেয়া যায়। সুযোগটি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়েছেন শিল্পী। বিদেশী অন্য গাছগুলোর মধ্যে বেশি দেখা যায় বক্সউড। বৃষ্টির ঝিরিঝিরি রূপটা যেন ধারণ করেছে এর পাতা। শক্ত কা-টিও দেখতে সুন্দর। সহজেই আকর্ষণ করে।
×