ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আকিল জামান ইনু

ফ্যাশন শোর নতুন ধারা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১১ আগস্ট ২০১৭

 ফ্যাশন শোর নতুন ধারা

গতিশীল সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চারপাশের সবকিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে অনবরত। আর এই পরিবর্তনশীলতার শীর্ষে বোধকরি ফ্যাশন জগত। সামান্য একটু রঙের ছোঁয়া, ভিন্ন সেলাই বা ছোট্ট কোন সংযোজন প্রতিদিন বদলে দিচ্ছে ফ্যাশন দুনিয়া। শুধু তাই নয়, সময়কে ধারণ করে বদলে যাচ্ছে ‘ফ্যাশন শো’গুলোর শত বছর ধরে চলে আসা প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা। বদলে যাচ্ছে কিংবা বলা যায় বদলে যেতে বাধ্য হচ্ছে চলমান সময়কে ধারণ করতে গিয়ে। এভাবে বলাই যায়, ‘বাস্তবতা দখল করে নিচ্ছে প্রথাগত ফ্যাশন সপ্তাহগুলো।’ এতদিন ধরে ফ্যাশন সপ্তাহগুলো ছিল শ্যাম্পেনের বন্যায় ভেসে যাওয়া এক ভিন্ন পৃথিবী। যেখানে কেবল সেলিব্রেটিরা ভিড় করে বসতেন সামনের সারিতে যেন কোন গ্ল্যামার স্কুলের ছবি। এক অলিক পৃথিবী যেখান থেকে গণকের গোলক দেখে নির্ধারিত হতো ছয় মাস পরের ফ্যাশন! কিন্তু এখন সময়টা ২০১৭, জাতিগত পরিচয়ের রাজনীতি ছাপিয়ে উঠেছে সবকিছু। ব্রেক্সিট থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিংবা বিতর্ক এখন আর নীতিমালা অর্থনীতি আগ্রহের কেন্দ্রে নেই। বরং উঠে এসেছে শ্রেণী, বর্ণ কিংবা লিঙ্গ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি যদি এখন কোন দুষ্টুমিষ্টি পান্ডাতে ব্যস্ত না থাকেন তাহলে হয়ত কোন হ্যাশট্যাগ বিতর্কে লিপ্ত কিংবা কিম কার্দেশিয়ান এবং ন্যুড সেলফির রাজনীতি অথবা আলোচনা করছেন অস্কারের বহুমুখিতা নিয়ে। এই গ্রীষ্মে সবচেয়ে আলোচিত ছবিটি ছিল পুলিশবেষ্টিত এক নারীর আপাদমস্তক ঢাকা সাঁতারের পোশাক যা বুরকিনি নামে পরিচিত। এই জুলাইয়ের ৪ তারিখে কেনি ওয়েস্টকে পর্যন্ত সমালোচিত হতে হয়েছে তার ‘ইয়েজি’ ক্যাট ওয়াক শো নিয়ে। ৮ তারিখে নিউইয়র্ক ফ্যাশন শোর উদ্বোধনীতে, লিওনেল স্রিভার একটি সামব্রেরো পরে হাজির হন এবং চলমান ফ্যাশন সাংস্কৃতির যথার্থতা নিয়ে তাৎক্ষণিক বিতর্কিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অন্য কথায় বলা যায় এই মৌসুমের ফ্যাশনের শিরোনামগুলো অন্যবারের মতো সিøভের আকৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। ব্যাপকার্থেই বলা যায়, ফ্যাশন দুনিয়ার গাঠনিক পরিবর্তনের সময়টি উপস্থিত। এবারের লন্ডনের ফ্যাশন সপ্তাহ তাৎক্ষণিক পণ্য ক্রয়ের নতুন যুগের সূচনা করেছে বারবেরীর সরাসরি গ্রাহকের জন্য শো প্রচলনের মাধ্যমে। প্রদর্শনীর ছয় মাস পরে বাজারজাতকরণের ধারণাকে পেছনে ফেলে সামনে এসেছে ক্যাটওয়াকে এখনই ‘দেখা এবং ক্রয়’ ধারণাটি। বলাই যায় এই ধারণাটি সময়ের দাবি। এই নতুন ব্যবসায়িক ধারণাটি অল্পসংখ্যক ডিজাইনার কর্তৃক গৃহীত হলেও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলছে সবার ওপর। ফ্যাশন সপ্তাহগুলো হয়ে উঠছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। আপনি এখন এমন এক পৃথিবীতে বাস করছেন যেখানে আপনি আমাজন প্রাইমে দুধের অর্ডার করে নির্দ্বিধায় চা বানানোর জন্য চুল্লিতে চায়ের পানি চড়াতে পারেন। সময়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কগুলা বদলে যাচ্ছে। গতিই এখন সব, বলছেন ক্রিস্টোফার বেইলি তার গত সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ‘দেখ এবং ক্রয় কর’ বারবেরী শো এর পর। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভাবনাকে ধারণ করে এটি পরিবর্তিত হচ্ছে।’ ফ্যাশন সপ্তাহের পরিবেশে এখন পরিবর্তনের ছোঁয়া। কারণ বৃত্তের মানুষগুলোর উপস্থিতি ভিন্ন ধরনের। যে কোন ফ্যাশন শোর সামনের সারিতে আপনি দেখবেন বড় আকারের হুডসহ জামা, ট্রাকস্যুট আর সমতল জুতো পরা মানুষজনের উপস্থিতি। সেই পূর্বের এলিট স্ট্যাটাসের প্রতিনিধিত্বকারী হাইহিল, সঠিক মাপের পোশাক, সব কিছু ড্রাই ক্লিনিং নিয়ে উপস্থিতি এখন কেবল অতীত। এখনকার পোশাক তাকে উপস্থাপন করে যেন পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটি। সবকিছুর মতো ফ্যাশনও এখন গণভিত্তিক। ক্যাটওয়াকগুলো সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান হারে ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। আর এর প্রতিফলন আমরা কাপড়েও দেখতে পাচ্ছি। এবারের লন্ডন ফ্যাশন শোতে ক্রিস্টোফার কেইন যিনি তার প্রজন্মের একজন এলএফডব্লিউ ট্যালেন্ট তিনি উপস্থিত হয়েছেন তার সাম্প্রতিক সংগ্রহ আউটসাইডার আর্ট নিয়ে। রিচার্ড ম্যালোন উপস্থিত হয়েছেন শ্রমিকের পোশাক নিয়ে তার নিজস্ব ডিজাইনে। উঁচু টিউনিকের পোশাক পরে উপস্থিত ছিল হাসপাতালের ক্লিনাররা। ‘আমি চেয়েছি তাদের পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে সেই সঙ্গে তাদের সম্মানজনক ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে’ ম্যালোন বলেন।’ লক্ষণীয় যে লিঙ্গ নিরপেক্ষতা এখন ফ্যাশন ডিজাইনিংকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে সেই পুরনো নারী সৌন্দর্য কেন্দ্রিক ধারণার চেয়ে। ভিক্টোরিয়া ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম তার এ সপ্তাহের প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়েছেন ট্রাউজার, ওভার সাইজ জ্যাকেট নিয়ে যা তার মূল ধারণার বিপরীত ভাবনাকেই উপস্থাপন করেছে। তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে আমি বেশিরভাগ সময় যে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করি এটি তারই প্রতিচ্ছবি। সাম্প্রতিক ফ্যাশন শোগুলোতে নতুন মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে একই পোশাক নারী-পুরুষ উভয়ের পরিধানযোগ্য করে উপস্থাপনা। একটি ফ্যাশন শো সর্বোচ্চ ৫০০ দর্শকের উপস্থিতি থাকলেও সাম্প্রতিক নিউইয়র্ক ফ্যাশন শো’টি ২ মিলিয়ন মানুষ উপভোগ করেছেন লাইভ। ক্রমবর্ধমান দর্শক ইঙ্গিত করছে সময় এসেছে ফ্যাশন শোগুলোর সীমাবদ্ধ দর্শকের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার। সেই পুরনো শরীর কেন্দ্রিক পোশাক উপস্থাপনার দিন শেষ হয়ে আসছে। এখনকার দশক কেবল ‘নারী’ নয় সামগ্রিক উপস্থাপনা লক্ষ্য করে। সবকিছু মিলিয়ে বলতেই হয় ফ্যাশন শোগুলোকে তার পুরনো ধারণা ঝেড়ে ফেলে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে বাণিজ্যিক বাস্তবতার স্বার্থেই। উপস্থাপনায় চাই নতুন গতি। ক্রেতা তাৎক্ষণিক বেছে নেবেন তার পছন্দের পোশাকটি। সূত্র : ইন্টারনেট
×