ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ জাভেদ হাকিম

গোলাপের রাজ্য শ্যামপুর

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১১ আগস্ট ২০১৭

গোলাপের রাজ্য শ্যামপুর

তারিখটি ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি। ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শ্যামপুর গ্রামের পথে দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের বন্ধুরা গাড়ি হাকাই। চালকের আসনে আমি নিজেই। চিপা গলি পেরিয়ে মহাসড়কে দূর পাল্লার যানবাহনকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাই। মনে শুধু একটাই ভয় চাকা না পাংচার হয় ! এই বিষয়টাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। গাড়ি চলছে- সাভার বাজার পিছনে ফেলে, মহাসড়ক থেকে ডানে মোড় নিয়ে সি.এন.বি সড়কে। এইবার সরু পথে ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকেও মহা ভয়ঙ্কর অটো রিক্সার পালা। মহাসড়কে রিতীমত বিপদজনক এই যান। আর যদি গাড়িতে আঁচড় লাগে তাহলে তো আব্বার ধমকি কত প্রকার তা আরেকবার জানা হয়ে যাবে। আক্রাইনের মোড় হতে শুরু হলো আরও বেদনাবিধূর রাস্তা, এসেই যখন পড়েছি তখন আর কী করা। দেশের বড় বড় নাম করা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখানে অথচ সড়কের কী বেহাল দশা! একেই বলে বাতির নিচে অন্ধকার! তবে দে-ছুটের বন্ধুরা ঠিকই অন্ধকারের বিপরীতে আলোর ঝলক খুঁজে নিতে পারে। এবারও তাই হলো। ভাঙ্গা সড়কে দোল খেতে খেতে কিছুটা পথ আগাতেই নৈসর্গিক সব দৃশ্যে চোখ আটকালো। সত্যিই অসাধারণ, ঢাকার পাশেই এমন মায়াবী প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। সোদা মাটির গন্ধ নাকে পেতে পেতেই চোখে ধরা পড়ল লাল গোলাপের বিশাল বাগান। গাড়ি পার্ক করেই ছুটি বাগানের ভিতর। ইয়া খোদা ! এই দেখি বিশাল লাল গোলাপের সমুদ্র তার মাঝে আমরা অতিকায় এক ক্ষুদ্র প্রাণী। যতই এগিয়ে যাই ততোই যেন অপার্থীব ভাললাগা ভর করে মনে। বাগানের পর বাগান। মাথায় নেশা চেপে বসে, কিসের গাড়ি আর কিসের বাড়ি। সবই আজ ঠুনকো। গাড়ির চিন্তা বাদ দিয়েই ভিতর থেকে ভিতরে ঢুকতে থাকি। যতই আগাতে থাকি ততোই যেন গোলাপ বাগানের লোকগুলো আপন হতে থাকে। প্রথম বাগানে যে আটির দাম ছিল ৪০০ টাকা এখন তা পারলে এমনিতেই দিয়ে দেয়। আগে থেকেই ধারণা পেয়েছিলাম বিরুলিয়া এলাকার লোকজন একটু উগ্র যার কারণে সাভারবাসীরাই তাদেরকে ‘টুঙ্গুইরা’ বলে থাকেন কিন্তু আমরা পেয়েছি তার উল্টো। কথায় আছে না নিজে ভাল তো জগৎ ভাল। হাঁটতে হাঁটতে এবার পেয়ে যাই এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছকে ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে থাকা তাল গাছের সারি। জসিমের চোখে ধরা পড়ে রসের হাঁড়ি। হানিফ বলে রস খাবে। আবার জিগায়! চল যাই গাছের তলায়। দুঃখের বিষয় তালের রসের স্বাদ পেতে হলে আবারও আসতে হবে সাত সকালে। কি আর করা এক সফরে তো আর সব মিলে না! ওরকম আশা করাটাও ঠিক না। গাছির সেল নাম্বার নিয়ে আবারও আগাই। এবার চোখ পরে ঝাকায় ঝুলে থাকা লাউ আর মাটিতে শুয়ে থাকা মিষ্টি কুমড়ার প্রতি। দেখা হয় স্থানীয় বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ জনাব আবদুল খালেকের সঙ্গে। তিনি জানালেন এই টেঙ্গর শ্যামপুর গ্রাম হতেই গত বিশ বছর পূর্বে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন গোলাম রসুল। তাঁর বাগান করা দেখেই- ধীরে ধীরে গ্রামের অন্যরাও অনুপ্রাণীত হয়ে ফুল চাষে এগিয়ে আসেন। শ্যামপুর গ্রামের প্রায় ষাঁট পাখি [১৫,৬০ শতাংশ] জমির ওপর বর্তমানে গোলাপ চাষ হয়ে আসছে। গোলাপ ফুল চাষ এখন শুধু এই গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বিরুলিয়া ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামেও প্রসারিত হয়েছে। বছরের বারো মাসই গোলাপ চাষ হয়ে থাকে। ভর সন্ধ্যায় ফুল বিক্রির বাজার মিলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন গোলাপ কিনতে। দর্শণার্থী ও ক্রেতাদের জন্য ফুল চাষীরা গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা বলয়। মাগরিবের নামাজ শেষে সবুজের বারোভাজা খেয়ে ফিরতি পথ ধরি। ইচ্ছে হলে একটা বিকেল কাটিয়ে আসতে পারেন পুরো পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। যোগাযোগ: ঢাকা থেকে উত্তরা থার্ড ফেস, মিরপুর বেড়ি বাঁধ ও গাবতলী হয়ে সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শ্যামপুর গ্রামে সরাসরি নিজস্ব/ভাড়া গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। এছাড়া সাভার বাজার স্ট্যান্ড হতে বাসে বা লেগুনাতে যাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কয়েকবার যানবাহন বদল করতে হবে। আর উত্তরা বা বেড়ি বাঁধ দিয়েও নিজস্ব গাড়ি ছাড়া যেতে চাইলে কয়েক দফা গাড়ি বদল করে বিরুলীয়া ব্রিজ দিয়ে চলে যেতে পারেন। খাবেন কোথায়?:- আক্রাইন/ দোসাইদ বাজারে মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন আর বিকালের নাশতার জন্য দোসাইদ বাজারে রাবিয়া খালার বানানো হরেক পদের ভর্তা দিয়ে চিতই, ভাপা আর মাল পোয়া পিঠা খাবেন তাঁর ডেড়ার দোকানে। সঙ্গে থাকবে গরুর দুধের চা। ছবিঃ- দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
×