ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলিক্সকে হতাশ করে চমক ফ্রান্সিসের

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১১ আগস্ট ২০১৭

ফেলিক্সকে হতাশ করে চমক ফ্রান্সিসের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লন্ডনে চলমান বিশ্ব এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপসে চমক দেখিয়ে চলেছে নতুনরা। ফেবারিটদের পেছনে ফেলে এবার তরুণ কিংবা নতুনরা স্বর্ণপদক জিতে চলেছেন। মেয়েদের ৪০০ মিটার দৌড়েও নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়াম। গতবারের চ্যাম্পিয়ন এ্যালিসন ফেলিক্স ও রিও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন শন মিলার উইবোকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছেন ফিলিস ফ্রান্সিস। যুক্তরাষ্ট্রের রেসার ২৫ বছর বয়সী ফ্রান্সিস ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং ৪৯.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। মহিলাদের শটপুটেও এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল বিশ্ববাসী। গত ২৪ বছরে চীনের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জিতেছেন গোং লি জিয়াও। পুরুষদের ৪০০ মিটার হার্ডলসেও হয়েছে নতুন ইতিহাস। নরওয়ের পক্ষে এই ইভেন্টে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক এনে দিয়েছেন কার্স্টেন ওয়ারহোম। ২১ বছর বয়সী ওয়ারহোমের চেহারার দিকে তাকালে এখনও সদ্য কিশোর বলে ভুল করেন অনেকে। শিশুসুলভ চেহারার এই ওয়ারহোম এবার নরওয়ের অন্যতম ভরসা ছিলেন। কিন্তু যে ইভেন্টে তিনি নেমেছিলেন সেখানে ছিল বিশ্বের মহাতারকাদের উপস্থিতি। এরমধ্যে সর্বকালের সেরাদের অন্যতম কেরন ক্লেমেন্ট ছিলেন। কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর পর থেকেই সবার চেয়ে এগিয়ে থাকলেন ওয়ারহোম। শেষ পর্যন্ত আর তাকে পেরিয়ে যেতে পারলেন না অন্যরা। ৪৮.৩৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক জিতলেন ওয়ারহোম। তার পেছনে ছিলেন তুরস্কের ইয়াসমানি কোপেলো। আর মার্কিন কিংবদন্তি ৩১ বছর বয়সী ক্লেমেন্ট জিততে পেরেছেন ব্রোঞ্জ। জেতার পর ওয়ারহোম নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এর আগে এই ইভেন্টে দুইবার স্বর্ণপদক জিতেছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ক্লেমেন্ট। এবার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়েই এসেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন তিনি। ওয়ারহোম বলেন, ‘সত্যিই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটার জন্য আমি অবশ্যই অনেক পরিশ্রম করেছি, কিন্তু আমি নিজেও জানতাম না যে জিতে যাব। এটা বিস্ময়কর এক অনুভূতি যে আমি এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এটা তো পাগল হয়ে যাওয়ার মতো একটা অনুভূতি।’ এর আগে ডেকাথলনে অংশ নিতেন ওয়ারহোম। এবার তিনি স্ক্যানডিনেভিয়া অঞ্চলের যত দেশ আছে তারমধ্যেই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৪০০ মিটার হার্ডলসে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব দেখালেন। মেয়েদের ৪০০ মিটার দৌড়ে এরচেয়ে বড় চমক দেখা গেছে। সবাইকে চমকে দিয়ে জিতে গেছেন ফিল ফ্রান্সিস। তিনি গত অলিম্পিকেও এই ইভেন্টে হয়েছিলেন পঞ্চম। স্বর্ণ জিতেছিলেন বাহামার শন মিলার উইবো। গত বিশ্ব আসরের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনিই ছিলেন এবার অন্যতম ফেবারিট। ফ্রান্সিসের চেয়েও ফেবারিট ছিলেন স্বদেশী ফেলিক্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছকটাই পাল্টে গেছে। ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং ৪৯.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবার আগে শেষ করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ফ্রান্সিস। বাহরাইনের ১৯ বছর বয়সী তরুণী সালওয়া ইদ নাসের জাতীয় রেকর্ড গড়ে রৌপ্য জিতেছেন ৫০.০৬ সেকেন্ড টাইমিং গড়ে। ফেলিক্স আরও ০.০২ সেকেন্ড সময় বেশি নিয়ে জিততে পেরেছেন ব্রোঞ্জ। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন উইবো আশ্চর্য করেছেন চতুর্থ হয়ে। জেতার পর ফ্রান্সিস বলেন, ‘আমি খুবই উত্তেজিত কারণ এটা এত বিস্ময়কর এক অনুভূতি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়টা এখনও আমাকে হতবিহ্বল করে রেখেছে। এর সত্যিকারের অনুভূতি হয়তো পরদিন ঘুম ভেঙ্গে জাগার পর বুঝতে পারব। কারণ এ্যালিসন ও শন দু’জনই বিস্ময়কর প্রতিভা এবং দুর্দান্ত ফিনিশার। যখন আমি শেষ লাইন পেরোলাম ভেবেছি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হয়েছি। কিন্তু সবাই বলছিলÑ তুমিই প্রথম হয়েছো।’ চমকে ভরা বুধবার রাতে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। ২৪ বছর ধরে শটপুটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে চীনের মেয়েরা। শটপুট হয়ে গিয়েছিল চীনের দুঃখ। সেই খরা কাটিয়ে দেশকে গৌরব উপহার দিয়েছেন গোং লি জিয়াও। অবশ্য তারজন্য আগেই বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছেন কিংবদন্তি শটপুটার চারবারের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের ভ্যালেরি এডামস ও গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ক্রিস্টিনা শোয়ানিটজ। এ দু’জনই অনুপস্থিত এবারের বিশ্ব আসরে। শেষ পর্যন্ত ২৮ বছর বয়সী লি জিয়াও ১৯.৯৪ মিটার দূরত্বে ছুড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০০৮ অলিম্পিক গেমস থেকে শুরু করে মেজর আসরগুলোতে ৬টি রৌপ্য কিংবা ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। এবার স্বপ্ন পূরণ হলো লি জিয়াওয়ের। এদিন লন্ডন স্টেডিয়ামে বৃষ্টির মধ্যে চলতে থাকা প্রতিযোগিতায় হাঙ্গেরির আনিতা মার্টন ১৯.৪৯ মিটার ছুড়ে রৌপ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন মিশেল কার্টার ১৯.১৪ মিটার ছুড়ে ব্রোঞ্জ জয় করেন। ১৯৯৩ সালে স্টুটগার্টে দ্বিতীয়বারের মতো চীনের হয়ে শটপুটে স্বর্ণ জিতেছিলেন হুয়াং ঝিহং। তারপর আর এই ইভেন্টে স্বর্ণের মুখ দেখেনি চীন। সেই অপ্রাপ্তি পূরণ করলেন লি জিয়াও।
×