ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বশুরের হাতে নির্যাতিত এক লিপির কথা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ আগস্ট ২০১৭

শ্বশুরের হাতে নির্যাতিত এক লিপির কথা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ মেয়েটি বিয়ে করেছিল ভালবেসে। তখন সে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছেলেটিও স্কুলের ছাত্র। ‘টিন এজ’ বয়সে ভুল পথে গেলে যা হয় তাই হয় ওদের জীবনে। প্রথমে ছেলের ধনী বাবা বিয়ে মেনে নেয় না। পরে মেনে নেয়। তারপর মেয়েটির ওপর চলে শ্বশুরের শারীরিক নির্যাতন। মেয়ে সন্তান সম্ভাবা হয়ে পেটে লাথি মেয়ে নতুন মুখ পৃথিবী দেখার আগেই মাতৃগর্ভে বিদায় নেয়। দিনে দিনে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে তিনবার মেয়েটিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তারপর উভয়পক্ষে মামলা মোকর্দমা হয়। থেমে থাকেনি নির্যাতন। এ ঘটনার বগুড়ার। মেয়েটির নাম শাহিনা ফেরদৌস লিপি (২৬)। দশ বছর আগে ২০০৭ সালে সে বিয়ে করে বগুড়া নগরীর লতিফপুর কলোনি এলাকার জায়েদ হাসানকে। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। এখন বয়স প্রায় ২৮ বছর। তাদের বিয়ে হয় কোর্টে। নোটারি পাবলিকের সামনে এফিডেভিটের মাধ্যমে। এ বিয়ে মেনে নেয় না ছেলের বাবা শাহাদত আলী। বাড়ি থেকে বের করে দেন। তারা আশ্রয় নেয় লিপির বাবার বাড়িতে। ছেলেটির লেখাপড়া না হওয়ায় ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করতে থাকে। নব-দম্পতির কোলে আসে সন্তান। মেয়ের মা-বাবা ও পরিবারের লোকজন ছেলের বাবার কাছে তাদের আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানায়। কোন আশ্রয় পায় না। অথচ ছেলের বাবার বগুড়া নগরীতে অন্তত দশটি বাড়ি আছে। একপর্যায়ে ছেলের বাবা তাদের আশ্রয় দেয়। কিছুদিন পর হতে মেয়ের ওপর শুরু হয় নানমুখী নির্যাতন। কখনও শারীরিকভাবে। কখনও মানসিকভাবে। কখনও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। মেয়ের শরীরে আগুনের ছ্যাকা দেয়া হয়। মেয়ের গর্ভে প্রথম সন্তান এলে শ্বশুরের লাথিতে সন্তান মাতৃগর্ভেই মারা যায়। একটা পর্যায়ে মেয়ের মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর তিন দফায় মেয়েকে জোর করে বিষপান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটি তার বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মেয়ের ওপর এমন নির্যাতনের কথা জেনে মেয়ের বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। পরবর্তী সময়ে মেয়ের গর্ভে দুই সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তাদের ওপর ছেলের বাবার নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গেল জুলাই মাসের দুই তারিখে মেয়ের মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে মেয়েটি আদালতে মামলা করে। লিপি সাংবাদিকদের জানায় তার বাবা ও তার শ্বশুর দুই বন্ধু ছিলেন। উভয়ের ছেলেমেয়ের মধ্যে বিয়ের কথাও হয়েছিল। তারপর শ্বশুর সবকিছু ভুলে গিয়ে পুত্রবধূর ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে।
×