ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট আগামী সংসদ নির্বাচন

রাবি ও রুয়েটে শিবিরের অশুভ তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ আগস্ট ২০১৭

রাবি ও রুয়েটে শিবিরের অশুভ তৎপরতা

মামুন-অর-রশিদ/ কায়কোবাদ খান, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নতুন করে অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে ছাত্রশিবির। এ লক্ষ্যে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে নিজেদের ক্যাডার উঠিয়ে গোপন নেটওয়ার্ক স্থাপন করছে তারা। এমনকি নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে দুই ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা করছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির। ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যেই ছাত্রশিবির এই অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে। গত দুইরাতে শিবিরের ২৫ নেতাকর্মী আটকের পর তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত নথি, গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বক্তব্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আটক নেতাকর্মীদের মধ্যে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হল থেকে শিবিরের ১৩ নেতাকর্মীকে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ। এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নগরীর ভদ্রা এলাকার একটি বাসা থেকে রুয়েট শাখা শিবিরের ১২ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। হল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হল থেকে শিবিরের রাবি শাখার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নাবিউল ইসলাম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সভাপতি সাহেব রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে হলের ১৫০, ১৫৫, ২৫৪, ২৭৬ ও ৩৫৮ নম্বর কক্ষ থেকে শিবির নেতা জাকির হোসেন, সাহারুল আলম, শিবির কর্মী আশিকুল হাসান, আরিফুল ইসলাম, রাকিব আহমেদ, মাহমুদুল হাসান, শরীফুল ইসলাম, আব্দুর রাকিব, অলিউল ও গোলাম রাব্বানিকে ধরে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় আটককৃতদের কক্ষ থেকে দুটি কম্পিউটার, শিবিরের রিপোর্ট ও জিহাদী বইসহ বিপুল পরিমাণ সাংগঠনিক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। কম্পিউটারে শিবিরের গোপন পরিকল্পনার তথ্য আছে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এই অভিযান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কোন সদস্য কিংবা হল প্রশাসনের কোন কর্মকর্তাই উপস্থিত ছিলেন না। পরে শিবির নেতাকর্মীদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এদিকে শিবির নেতাকর্মীদের পুলিশে দেয়ার পর রাত ৪টার দিকে হলে এবং ক্যাম্পাসে শিবিরবিরোধী মিছিল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাবিকে অস্থিতিশীল করার জন্য জামায়াত-শিবিরের তৎপরতা থেমে নেই। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবারও অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরাও তৎপর আছি। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, শিবিরের নেতাকর্মীরা বৈঠক করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে ভদ্রা এলাকায় একটি বাসা ঘেরাও করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিবির নেতাকর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে এবং বাসা থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ১২ জনকে আটক করে। আটককৃতদের সবাইকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনকে টার্গেট করে রাবি এবং রুয়েটে ফের অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে শিবির। রাবিতে ছেলেদের ১১টি আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে নিজেদের ক্যাডার তুলেছে তারা। মেয়েদের ৬ হলেও থেমে নেই ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম। হলের মসজিদ ব্যবহার করে নিয়মিত গোপন বৈঠকে মিলিত হয় তারা। নগরীর বিভিন্ন ভাড়াবাড়িতেও বৈঠক করে তারা। ২০১৪ সালের মতো আবারও নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে শিবিরের এই অশুভ তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
×