ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক হাজার ২শ’ মেও বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তিসই উদ্যাপন অনুষ্ঠান

মাতারবাড়িকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের উদ্যোগ সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ আগস্ট ২০১৭

মাতারবাড়িকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের উদ্যোগ সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতারবাড়িকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ভবিষ্যতে মাতারবাড়িই হবে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত হাব। বৃহস্পতিবার ঢাকায় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সই উদযাপন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এসব কথা জানানো হয়। গত ২৭ জুলাই রাতে মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি সই করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের সুমিতমোর নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গ চুক্তি করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রে সহায়তা করার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন জাপান বাংলাদেশের সহায়তায় সব সময়ই বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। এর আগেও তারা বড় প্রকল্পে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৩৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন সে বছরই বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে শহরগুলোতে চার ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। তখন বেসরকারী খাতের উৎপাদনকারীরা বিদ্যুত সরবরাহ করত। তখন থেকেই বিদ্যুত খাতে সরকারী বিনিয়োগের চিন্তা শুরু হয়। মহেশখালির মাতারবাড়িতে বিদ্যুত কেন্দ্রের সঙ্গে একটি ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনার জন্য কয়লা খালাসের জন্য বন্দর, কয়লা রাখার জন্য ইয়ার্ড এবং কয়লা পরিবহন সুবিধার জন্য সাত কিলোমিটারের একটি চ্যানেল খনন করা হবে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মাতারবাড়ি এবং মহেশখালি এলাকায় বড় বিদ্যুত হাব নির্মাণ করা হবে। সাগরে ড্রাফট বেশি থাকায় এই অঞ্চলই কয়লা এবং এলএনজি পরিবহনের জন্য আদর্শ। ইতোমধ্যে কয়লা খালাসের জন্য বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি এখানে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, মাতারবাড়িকে আমরা ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশাপাশি এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হবে। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে মারুবিনি কর্পোরেশন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) অভিযোগ করে। অভিযোগের শুনানির পর গত ২৭ জুলাই একটি বিভক্ত রায় দেয় রিভিউ প্যানেল। তিন সদস্যের প্যানেলের দুই সদস্য সুমিতমো এবং এক সদস্য রায় দেয় মারুবিনির পক্ষে। ওই দিন রাতেই কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অফিসে সুমিতমোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি বিদ্যুত হাব দিয়েই সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশকে চিনবে। এখানে বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশাপাশি আধুনিক নগর নির্মাণ করা হবে। এই নগর নির্মাণের কাজও সরকার শুরু করবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয় সর্বাধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হবে কেন্দ্রটি। গত বছর ২৪ মার্চ বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপ্রস্তাব জমার দেয়ার আগেই গত বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আট জাপানী নিহতের পর ঠিকাদাররা এদেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তির কথা জানায়। সরকার এ সময় নানাভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করলেও আস্থা অর্জনে অনেকটা সময় কেটে যায়। পরে সরকারের জঙ্গী বিরোধী কঠোর অবস্থানে আবার আস্থা ফেরে জাপানের। এরপরও জাপানেরই দুটি কোম্পানির মধ্যে মতভেদে আরও একদফায় কিছু সময় নষ্ট হয়। অনুষ্ঠানে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম ছাড়াও বিদ্যুত বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×