ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না- কারও ট্র্যাপে আমরা পড়ব না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১১ আগস্ট ২০১৭

রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না- কারও ট্র্যাপে আমরা পড়ব না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সরকার বা বিরোধী দল, কারও ট্র্যাপে (ফাঁদে) আমরা পড়ব না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রধান বিচারপতি বলেন, রায় ঘোষণার পর রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা যে কেউ করতে পারেন। তা না হলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রীমকোর্টে বাতিলের বিষয়ে আইন কমিশনের দেয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল দাবি করে বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা রুল জারির আবেদন জানালে তিনি এ কথা বলেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেছিলেন, ‘আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ।’ সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়কে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পূর্বপরিকল্পিত বলেছেন। সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণকে তিনি অপরিপক্কতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি আইন কমিশনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ফউজুল আজিম উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আপীল বিভাগের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আইন কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল পদে আছেন, তিনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। আমরা বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার কথা বলছি।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর গঠনমূলক সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। রায় হওয়ার পর আমরা গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করি। তা না হলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যপরিষদের নেতা জয়নুল আবেদীন এ সময় বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথা এসেছে তা অবমাননাকর’। প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, ‘রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আপনারা আরও সচেতন হবেন, যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে।’ জয়নুল আবেদীন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে রুল চাইলে আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, সমিতি থেকে এ বিষয়ে কোন রেজুলেশন হয়নি। এ সময় সুপ্রীমকোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইন কমিশনের চেয়ারম্যান যা বলেছেন, তা স্পষ্টভাবে আদালত অবমাননা’। তিনি রুল চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আপনারা সংযত আচরণ করবেন। সরকার বা বিরোধী দল- কারও ট্র্যাপে আমরা পড়ব না। আমরা সচেতন। সাত বিচারপতি চিন্তা-ভাবনা করেই রায় দিয়েছে। রায় নিয়ে কেউ পলিটিকস করবেন না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে অবমাননাকর বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রায় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। ইতিহাসই একদিন বিচার করবে।’ উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল ষোড়শ সংশোধনীতে। হাইকোর্ট গতবছর ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করার পর গত ৩ জুলাই আপীল বিভাগেও তা বহাল থাকে। এরপর ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্ট। ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
×