ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১০ আগস্ট ২০১৭

সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে রাজধানীতে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচতলায় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে কি-না জনমনে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের বক্তব্যে খুব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে এ সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে একটা অবস্থান নিয়েছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায়ের যে অবজারভেশন এটা দেশের মানুষের প্রাণের কথা, অন্তরের কথা ও হৃদয়ের কথা। সুতরাং দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই রায়ের অবজারভেশনের সঙ্গে আছে এবং তারা একমত। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের যে প্রধান তিনটি স্তম্ভ সেই স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছে। বিচার বিভাগের সঙ্গে পর্লামেন্টের একটা বিরোধ তারাই তৈরি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততই দেশ রসাতলে যাবে। রায় নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই রায়ের অবজারভেশন দেওয়ার পরে মন্ত্রিসভায় যে আলোচনা হয়েছে তা আদালত অবমাননায় পড়ে কিনা জানি না। আইনজীবীরা ভাল বলতে পারবেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ঐতিহাসিক অভিহিত করে ফখরুল বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। আপীল বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক বলা হয়। সংবিধানের যেখানে যেখানে ক্রটি থাকে অথবা যে আইনগুলো সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় আপিল বিভাগ সেই বিষয়গুলো নিয়ে মতামত প্রদান করেন। সংসদে যে আইনগুলো পাস করা হয়েছে, সংবিধানের যে সংশোধন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ইতোপূর্বেও আপীল বিভাগ মতামত প্রদান করেছে। জনগণের যেটা প্রাপ্য, জনগণের যেটা আশা-আকাক্সক্ষা সেটাই আপীল বিভাগ বলেছেন। এ ব্যাপারে আইনজীবীদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, মানুষের অধিকারকে রক্ষার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আপনাদের ভ্যানগার্ড হিসেবে সামনের সারিতে এগিয়ে আসতে হবে। ফখরুল বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কিভাবে ধর্ষণ ও খুন বেড়েছে, কিভাবে আইন অমান্য করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে মানুষ হত্যা করছে। সরকারকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকারের যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বাস থাকত, ন্যূনতম একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার ইচ্ছা থাকত তাহলে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর পদত্যাগ করত। কারণ এ রায়ের পর তাদের আর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কোন নৈতিকতা নেই। সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে সহায়ক সরকারের হাতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যে নির্বাচন হবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সকলে তাতে অংশগ্রহণ করবে। আর এ ধরনের একটি নির্বাচনই পারে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে। বিদ্যুত খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন আগের খবরে বেরিয়েছে, আরও নয়টি কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট যেটা দেওয়া হয়েছে, যেখানে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাবে বিনা টেন্ডারে। কারণ, পার্লামেন্টে আইন করেছে কোন টেন্ডার করতে হবে না, এ নিয়ে কোন প্রশ্ন পর্যন্ত করা যাবে না। এভাবে একনায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। ফখরুল বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের মাধ্যমে বিএনপি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায়। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন পড়া হয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এখন আমার মনে হয়, সেটা ছিল ভুল। এতো মামলায় প্রতিদিন কোর্টে হাজির হতে হয়। আগে যদি বিষয়টি জানতাম, তা হলে পরীক্ষা দিয়ে কালো কোর্ট পরে কোর্টেই থাকতাম। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান, সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা দেয়া হচ্ছে- রিজভী জেলায় জেলায় বিএনপি সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান প- করতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সবদিক থেকে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এখন মিথ্যাচারই হলো আওয়ামী লীগের একমাত্র অবলম্বন। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বলে কিছু নেই। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিরোধী দল ও মতকে নির্দয়ভাবে দমন করার পর মিথ্যার মায়াজাল ছড়িয়ে দেয়। রিজভী বলেন, মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন আওয়ামী লীগ সরকার বা পুলিশ বিরোধী দলের কোন কর্মসূচীতে বাধা দেয় না। তারা নিজেরাই গ-গোল করে সভা প- করে দেয়। এভাবেই মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের পরিচয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও তা-বলীলা চালানো হচ্ছে।
×