ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ আগস্ট ২০১৭

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “..ওরা তাঁকে হত্যা ক’রে ভেবেছিল তিনি/ সহজে হবেন লুপ্ত উর্ণাজাল আর ধোঁয়াশায়/ মাটি তাঁকে দেবে চাপা বিস্মৃতির জন্মান্ধ পাতালে-/ কিন্তু তিনি আজ সগৌরবে/ এসেছেন ফিরে দেশপ্রেমিকের দীপ্ত উচ্চারণে/ সাধারণ মানুষের প্রখর চৈতন্যে/ শিল্পীর তুলিতে, গায়কের গানে, কবির ছন্দের আন্দোলনে/ রৌদ্রঝলসিত পথে মহামিছিলের পুরোভাগে।” স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে প্রয়াত দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘তিনি এসেছেন ফিরে’ নামক কবিতায় এভাবেই ঘৃণ্য হন্তারকদের অভিসম্পাত করেছেন। গভীর হয়েই বসেছে শোক। ৪২ বছর পর আজও মুহুর্মুহু কাঁদাচ্ছে মানুষকে। যে বাঙালীর জন্য এত ত্যাগ, এত তিতিক্ষা, বারবার ফিরে আসা মৃত্যুর দুয়ার থেকে- সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতাকে গুটিকয় লোভাতুর নরপিশাচরা এমন নির্মমভাবে হত্যা করবে- এমন ভাবনা অবিশ্বাস্য ছিল বাঙালীর কাছেও। আর তাই বারবার মনে করে মুখ, উজ্জ্বল চোখের দ্যুতি, আজও শ্রদ্ধায়, নৈবেদ্যে, প্রতিদিন- প্রতিক্ষণে ফিরে আসেন পিতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করল নরপিশাচ ঘাতকরা, ঝলমলে ঝলমলে আগস্টের উজ্জ্বল আকাশে, সেদিন ডানা মেলল মন খারাপের মেঘ। ছেঁড়া মেঘ কান্না হয়ে ঝরল মানুষের চোখ বেয়ে। আগস্ট এলেই সে মেঘ এখনও উড়ে এসে বসে বাঙালীর ঘরে ঘরে। পোড়ে অনুশোচনা ও অনুতাপের আগুনে। ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটি একদিন স্বাধীনতার প্রশ্নে একই পথে নিয়ে এসেছিল বাঙালিকে, সেই বাড়িটিই সেই বাঙালীকে কাঁদাল একদিন অঝোর ধারায়। বাড়িটির ব্যালকোনিতে দাঁড়ানো দৃঢ়চেতা যে নেতার অঙ্গুলি হেলনে বুকের ভেতর জ্বলতো মুক্তির দ্রোহ, ঘাতক নরপিশাচদের কারণে সেই পিতাই একদিন মুখ থুবড়ে পড়লেন বাঙালীর অনিবার্য সেই বাড়ির মেঝেতেই। সিঁড়ি গড়িয়ে বইল রক্তের ধারা। ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ করল কালজয়ী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে- সপরিবারে। বিদ্ধ হলো গোটা বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশ। রচিত হলো পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস। শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস আগস্টের আজ দশম দিন। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, ওভারব্রিজ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের সামনে উড়ছে বিশাল বিশাল কালো পতাকা ও ব্যানার। প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুনেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন সেøাগান। পলাতক খুনীদের দেশে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকর এবং নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে অজস্র সংগঠনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র, প্রতিটি অলি গলির দেয়াল। এভাবেই আগস্টের প্রতিটি দিন শোকাবহ পরিবেশে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্মরণ করছেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিটি শোকের অনুষ্ঠানে। ডিএফপির সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর (ডিএফপি) সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে ৯ আগস্ট শুরু হয়ে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিএফপির মাল্টিপারপাস হলে এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর প্রকাশিত সচিত্র বাংলাদেশ, সচিত্র কিশোর মাসিক পত্রিকা নবারুণ ও বাংলাদেশ কোয়ার্টারলির কয়েক বছরের আগস্ট সংখ্যা নিয়ে ডিএফপি প্রাঙ্গণে এক প্রদর্শনী সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর ডিএফপির নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ও স্থিরচিত্রের ডিজিটাল প্রদর্শনী সপ্তাহব্যাপী চলবে।
×