ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এলাকায় আলোচনার ঝড়

হবিগঞ্জের মানুষ টেরই পায়নি মোস্তাক জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ আগস্ট ২০১৭

হবিগঞ্জের মানুষ টেরই পায়নি মোস্তাক জঙ্গী

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ‘জঙ্গী অর্থায়নকারী মোস্তাক খাঁ ফের গ্রেফতার’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রির্পোট নিয়ে হবিগঞ্জের সর্বত্র বইছে নানা বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার ঝড়। শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো এই মোস্তাক খাঁ যে একজন জঙ্গী অর্থায়ন দাতা বা সে নিজেও জঙ্গী তা এখানকার সাধারণ মানুষ টেরই পায়নি। ফলে এই এলাকার মানুষের এখন একটাই কথা, মহান আল্লাহ’র কৃপায় হবিগঞ্জের মানুষ হয়ত এতদিন বড় ধরনের কোন অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এও শঙ্কায় রয়েছেন তারা, আদৌ কি এখন মোস্তাকের বিচার হবে নাকি বরাবরের মতো সে কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ফাঁকফোকরে পাড় পেয়ে যাবে। তাছাড়া এই ভয়ঙ্কর জঙ্গী অর্থায়নের নেপথ্যে আন্তর্জাতিকভাবে কোন কোন দেশ এমনকি এদেশীয় বা স্থানীয়ভাবে হবিগঞ্জ জেলাতেও কারা জড়িত তাও উদঘাটন হবে। প্রায় দু’কোটি টাকাসহ জঙ্গী মোস্তাক গ্রেফতার এবং একাধিক ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বুধবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত খবর পড়ে পাঠকরা যখন ওইসব নানা আলোচনার সূত্রপাত ঘটালেন, তখন এ প্রতিবেদক মোস্তাককে নিয়ে কোন কোন পাঠকের অভিমত জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শুধু শক্তিই নয় বরং জঙ্গী দমনেও বড় ধরনের সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ জঙ্গী তৎপরতায় উৎসাহ যোগাতে মোস্তাকের নামে থাকা এ্যাকাউন্টের মূল ধারকবাহক বহু বিতর্কের জন্ম দেয়া এবং জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতাকর্মীদের পদায়নে পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকের এই শাখা কিভাবে হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক সাবেক নেতার বহুতল ভবনে স্থান পেল তা কারোর বোধ গম্য নয়। এছাড়া সাধারণ মানুষের মনে আরও প্রশ্ন উঠেছে, হবিগঞ্জ ইসলামী ব্যাংক বা বানিয়াচঙ্গ শাখা কর্তৃপক্ষ একজন ব্যক্তি কর্তৃক ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় তার পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা পুরোপুরি যাচাই-বাছাই করার কথা। কিন্তু মোস্তাকের বেলায় কি তা আদৌ সঠিকভাবে হয়েছে। নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য থেকেই এই হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে মোস্তাকের মতো একজন সাধারণ মানুষের হিসাব নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে, এমন সব জেনেও কেন হবিগঞ্জ বা বানিয়াচঙ্গের এই শাখাগুলো চুপ করে বসে রইলেন। প্রশ্ন, তাহলে কি এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা মোস্তাকের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। এদিকে হবিগঞ্জ শহরের সর্বত্র চাউর হচ্ছে, এই জঙ্গী মোস্তাকের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী কর্নেল ফারুক-রশীদের অর্থায়নে সম্পাদিত আদ্যক্ষরের ‘ম’ নামধারী একসময়ের একটি জাতীয় পত্রিকার হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ছিলেন আদ্যক্ষরের ‘ফ’ নামধারী সাংবাদিকের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা। আর এই মোস্তাকের অর্থায়নেই নাকি এই সাংবাদিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ক্লিনিকসহ নানা ব্যবসা শুরু করে এখন শূন্য থেকে লাখপতি শুধু নয় কোটিপতি হওয়ারও স্বপ্নে বিভোর। শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ার সময় জামায়াত-শিবিরের নেতা ছিলেন এই সাংবাদিক। পরবর্তীতে তিনি সরকার বিরোধী একটি বড় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এখনও এই সাংবাদিক একটি মৌলবাদী পত্রিকার প্রতিনিধি। শুধু তাই নয়, মোস্তাকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আরও দুই এক জন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নামও এখন সাধারণ মানুষের মুখে। এদিকে জঙ্গী মোস্তাকের বিষয়ে বুধবার ইসলামী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় গিয়ে ম্যানেজার মনিরুজ্জামান সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে তথ্য চাইলেও নানা অজুহাতে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এ সময় দেখা যায়, এই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝে একরকম চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারাসহ মোস্তাকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব-সম্পদ তলিয়ে দেখাসহ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় দ্রুত আনা প্রয়োজন। এদিকে গতকাল বুধবার গ্রেফতারকৃত মোস্তাককে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সোলায়মানের আদালতে হাজির করে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাইলেও সংশ্লিষ্ট অভিযোগে আনা মামলায় আইনত রিমান্ড দেয়া যায় না বা যায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নানা এমন উত্থাপিত যুক্তির প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত তা আজ বৃহস্পতিবার আবারও শুনানির জন্য পুনঃসময় নির্ধারণ করেন।
×