ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একনেক সভায় ১১ প্রকল্প অনুমোদন

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ আগস্ট ২০১৭

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। অনুন্নত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। জোয়ারের সময় শহরের নিম্নাঞ্চল নিয়মিত জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম শহরের এই দুরবস্থা আরও প্রকট হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে এই বড় প্রকল্পটি নিয়েছে সরকার। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটিসহ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মন্ত্রী জানান, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল (জিওবি) হতে প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল হতে ৭০৩ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৭৯০ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বাস্তবায়ন করবে। তবে দ্বৈততা ও পুনরাবৃত্তি পরিহার এবং সমন্বয় সাধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সরকার নিজের টাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন করা হবে। একই সঙ্গে সোয়া ৪ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে। অন্যদিকে ৮৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হবে। অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্ট তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য তিনটি জলাধারও হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, শহরের জলাবদ্ধতা দূর করা, খালের পারে রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি খাল পরিষ্কার রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা করা; বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বৃষ্টি ও জোয়ারের জলাবদ্ধতা থেকে চট্টগ্রাম শহর স্থায়ীভাবে মুক্ত হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোন প্রকল্পের কারণে যদি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রভাবিত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যূনতম একজন সদস্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মহেশখালী পাওয়ার হাব নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সভায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আগারগাঁওস্থ শেরে বাংলা নগরে পর্যটন ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের জন্য ১৩তলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন ভবন গড়ে তোলা হবে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে এ দুটি প্রতিষ্ঠান আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। সভায় যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য দুটি নতুন প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলোÑ জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন বেলগাছা ইউনিয়নের কুলকান্দি ও গুঠাইল হার্ডপয়েন্টের মধ্যবর্তী যমুনা নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প এবং জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণের মাধ্যমে ভুয়াপুর-তারকান্দি সড়ক রক্ষা প্রকল্প। ইসলামপুরে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত। তবে প্রকল্পটির কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু করতে এবং দুই বছরের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলোÑ ‘মহেশখালী পাওয়ার হাব এর ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ফেরি ও পল্টুন নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়), এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। রাজাপুর-কাঠলিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথঘাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কেরানীহাট-সাতকানিয়া- গুনাগরী জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধিত পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), এর ব্যয় ৫৬৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সৌর শক্তি ও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪১ কোটি টাকা।
×