স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বিদেশে পলাতক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের জন্য সরকার কাজ করছে। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ কথা বলেন। অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের অবস্থান চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে খুন হন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ছয় দ-প্রাপ্ত খুনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় ও নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থায় করছে বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে। এছাড়া শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল রশীদ, মুসলেহউদ্দীন রিসালদার ও ক্যাপ্টেন মাজেদ বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়।
আজ সংবাদ সম্মেলন ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ বেলা ১২টায় মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী কথা বলবেন বলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। সুপ্রীমকোর্টের নয়জন আইনজীবীর এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। গত ৩ জুলাই আপীল বিভাগেও ওই রায় বহাল থাকে, যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ১ আগস্ট প্রকাশ হয়। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ের ফলে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও জাতীয় সংসদ থেকে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে যাচ্ছে।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর শুক্রবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবার বাতিল করবে ততবারই সংসদে এই সংশোধনী পাস করা হবে।’ অন্যদিকে রবিবার এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা ‘ঠা-া মাথায় ভাবছেন’। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠা-া মাথায় চিন্তাভাবনা করছি। এখানে মাথা গরম করে কিছু করার কোন সুযোগ নেই। ঠা-া মাথায় ভাবছি, যথাসময়ে আমাদের রিএ্যাকশন জানাব।’
সোমবার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। এই রায়ে বিচারের এখতিয়ারের বাইরে ‘আপত্তিকর’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সর্বশেষ বুধবার আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপীল বিভাগের রায় অপরিপক্ব, পূর্ব পরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক। তিনি আরও বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংবিধানের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার দিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে মন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল।’ সেই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সামনে আসবেন বলে এতে বলা হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: