ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার প্রায় ৮০ ভাগ সড়কে উন্নয়ন ভোগান্তি ;###;ধ্বংস করা হয়েছে নদী, খালসহ জলাশয় ;###;সাড়ে আট বছরে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও সুফল মেলেনি ;###;বক্স কালভার্ট অপসারণের দাবি

পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবই মূল কারণ ॥ সীমাহীন জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১০ আগস্ট ২০১৭

পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবই মূল কারণ ॥ সীমাহীন জনদুর্ভোগ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আজ থেকে ৩৫০ বছর আগে দীর্ঘমেয়াদী নগর পরিকল্পনায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সামান্য কিছু সংস্কার ছাড়া শহরের কোন কিছুই আমূল পরিবর্তন করতে হয়নি। অথচ এই শহরজুড়ে মাটির নিচ দিয়ে চলছে মেট্রোরেল। আছে সেবা সংস্থার লাইনও। মাটির নিচের খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। আরেকটি পরিকল্পিত নগরী হলো আমেরিকার নিউইয়র্কের ম্যানহাটান সিটি। ১৫০ বছর আগের পরিকল্পনায় এখনও এই শহর দিব্যি চলছে। শহরের মাটির নিচ দিয়ে চলছে মেট্রোরেল। ৩০০ ও ১৫০ বছর আগের পরিকল্পনায় এই দুটি শহর যদি এখনও আধুনিক রাখা সম্ভব হয় তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম নগরীকে কেন ২০ বছরের পরিকল্পিত পরিকল্পনায় ভাল রাখা যায় না। প্রতিবছরেই কেন রাস্তা কাটতে হয়? তাহলে কি সঠিক পরিকল্পনার অভাব। নাকি মেধার সঙ্কট। এ প্রশ্নই এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ চলছে প্রায় ছয় মাস। কিছু জায়গার কাজ শেষ হলেও রাস্তা পাকা করা হচ্ছে না। মাটি ও ইটের খোয়া থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে সড়কের ওপর। এতে রাস্তায় যানজট লেগেই আছে। যারা নিয়মিত এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন তারাই বোঝেন দুর্ভোগের মাত্রা কতটুকু। মৌচাক, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। চলছে ড্রেন নির্মাণকাজও। এসব পয়েন্টে জনদুর্ভোগ স্থায়ী রূপ নিয়েছে। যা চলমান অন্তত চার বছরের বেশি। গুলশানে ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে অনেকদিন ধরে। কাজ শেষ হওয়ার পরও রাস্তা মেরামত না হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই। রাজধানীর একাংশে চলছে ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপনের কাটাছেঁড়া। সব মিলিয়ে গোটা নগরজুড়েই মানুষের ভোগান্তির চিত্র। কোথাও ভাঙ্গাচোরা সড়ক, কোথাও রাস্তা কাটা। চোখে পড়বে দিনের পর দিন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলার দৃশ্য। কোথাও সেবা সংস্থাগুলোর রাস্তা কাটার কাজ শেষ হলেও সড়ক সংস্কার হচ্ছে না। গর্তে জমে আছে পানি। কোন এলাকায় বছরের পর বছর সড়ক সংস্কারই হচ্ছে না। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে গোটা রাস্তা পরিণত হয়েছে ডোবায়। বৃষ্টি হলে তো সড়কের পরিস্থিতি কেমন হয় তা সকলের জানা। এর মধ্যে আমিনবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাটমুখী সড়কটি দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই একদা এটি একসময় পাকা ছিল। অথচ সহজে পণ্য পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় দেড় বছর ধরে সড়কটির এই বেহাল দশা। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ আশপাশের এলাকার রাস্তার দুর্ভোগ কারও অজানা থাকার কথা নয়। আরেকটি বাস্তবতা হলো শুরু থেকেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এই রাজধানী শহর। সবার নজরে বিষয়টি এলেও পরিকল্পিত ব্যবস্থা এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় রয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। যার ৮০ ভাগ সড়কেই উন্নয়ন কাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। আর এই উন্নয়ন করতে গিয়েই কয়েক মাস ধরে রাজধানীর রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে বিপন্ন। এই উন্নয়নের খপ্পরে রাজধানীবাসী পড়েছেন মহাবিপাকে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিটি সড়কেই যানজট প্রায় স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। যান্ত্রিক যানবাহনে যে পথ সাধারণ অবস্থায় ১০ মিনিটে অতিক্রম করার কথা, সে পথ পাড়ি দিতে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ গুণ সময়ও লাগছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বয়হীনতাই জনভোগান্তির মূল কারণ। সাতটি মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এই নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার। এদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। অনেকে সমন্বয় করতেও চান না। কারণ, নিজে নিজে কাজ করলেই তাদের সুবিধা বেশি। মূলত, এসব কারণেই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান মিলছে না। অথচ উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সরকারের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি ঢাকার চারটি নদী, ৬০টির বেশি খাল থেকে শুরু করে ডোবা পুকুর সবই এখন ধ্বংসের পথে। ভূমিদস্যুদের থাবায় শহরের একটি খালের চিত্র আগের অবস্থায় নেই। খালের জমি নিজের নামে করিয়ে নেয়ারও নজির আছে। অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। মূলত, নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা জলাধার না থাকায়। এরসঙ্গে নতুন আপদ যুক্ত হয়েছে বক্স কালভার্ট। স্বল্প মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে বার বার ড্রেনেজ ও ফুটপাথ নির্মাণ করতে হয়। পরিকল্পিতভাবে লাইন স্থাপন না হওয়ায় বার বার সেবা সংস্থাগুলোর ভূগর্ভস্থ লাইন সংস্কার করতে রাস্তা কাটা ছাড়া বিকল্প থাকে না। অন্যদিকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করার মানসিকতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় সড়কগুলোর বেহাল দশা চলছে। বাস্তবতা হলো, জোড়াতালি দিয়ে নাগরিক সমস্যা আর ভোগান্তির সমাধান করার চেষ্টা চলছে নগরীতে। যানজট নিয়ে বছরের পর বছর নানা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও দৃশ্যমান কোন উন্নতি নেই। নগরীর যানজট নিরসন ও উন্নয়নের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, বক্স কালভার্ট রাজধানী ঢাকার জন্য হারাম। বেশিরভাগ বক্স কালভার্টের ভেতরে ময়লা জমে পানি প্রবাহ কমেছে। গ্যাস থাকায় এসব কালভার্ট পরিষ্কার করানোও সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি রাস্তা তুলে দিয়ে এগুলো উন্মুক্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র সাঈদ খোকন অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বক্স কালভার্ট তুলে দিয়ে ঢাকার খাল উদ্ধার করা ও নৌপথে যাত্রী পরিবহন করার। যদিও এখনও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। নগর গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং অর্থহীন ও উল্টাপাল্টা প্রকল্প গ্রহণের ফলে নগরীর এই অচলাবস্থা। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ইতোমধ্যে খুব খারাপ হয়ে গেছে। ঢাকায় নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে জনস্বাস্থ্য। এখনকার মতো আর কিছুদিন চলতে থাকলে ঢাকা পুরোপুরি ‘ফেইলড সিটি’ হয়ে যাবে। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের মতে, নগর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কার্যত অজ্ঞ নীতিনির্ধারক এবং অনভিজ্ঞ নগর ব্যবস্থাপকদের সমন্বয়হীন কাজের ফলে ভুগতে হচ্ছে ঢাকার নগরবাসীকে। তিনি বলেন, সাতটি মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এই নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার। এদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। অনেকে সমন্বয় করতেও চান না। কারণ, নিজে নিজে কাজ করলেই তাদের সুবিধা বেশি। সমন্বয়হীনতার নজির উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নগর ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে গণপরিবহন। ঢাকার গণপরিবহন একেবারে ভেঙ্গে পড়ার পর্যায়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক একটি সমন্বিত বাস সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। উদ্যোগটি ভাল। কিন্তু দক্ষিণের মেয়র বিষয়টি জানেন না। ঢাকার সুষ্ঠু গণপরিবহন শুধু উত্তরের বিষয় নয়। এর সঙ্গে দক্ষিণকেও যুক্ত করতে হবে। গণপরিবহন পুরো মহানগরীর। তা ছাড়া সরকার কয়েক বছর আগে গঠন করেছে ‘ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)’। এই সংস্থার কাজ কী? এদের কোন কাজ তো দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদী যে পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলো ছিল, ২০০৯ সালে সরকার তা অনুমোদন করে। কিন্তু বাস্তবায়নে ঢিলেমি দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলেছে। সরকার এই ঢিলেমি না করলে নগরীর বর্তমান অবস্থা হতো না। নগর ব্যবস্থাপনা এখন যে অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার (ওয়্যার ফুটিং) মতো কাজ করতে হবে। জানা গেছে, গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন বাবদ ৭০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের বক্তব্য হলো, দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যে এসেছে বৃষ্টি। সে কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করে দুর্ভোগ নিরসনের চেষ্টা করছি। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে এ বছরই প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক নালা ও ফুটপাথের দৈনন্দিন মেরামতের জন্য বরাদ্দ আছে ১৮০ কোটি টাকা। তারপরও দেখা যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে মানুষের দুর্ভোগ তো কমছেই না, বরং বাড়ছে। সাড়ে আট বছরে ব্যয় দুই হাজার কোটি নগরীর উন্নয়নে সরকার গত সাড়ে আট বছরে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। আওয়ামী লীগের দুই সরকারের আমলে এই অর্থ খরচ হয়ে গেলেও বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। পাম্পস্টেশন, নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত, খাল-বক্স কালভার্ট খনন ও পরিষ্কার করার মতো ছোটখাটো কাজে এই টাকা ব্যয় হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত সাড়ে আট বছরে জলাবদ্ধতা দূর করতে তিনটি সংস্থা মোট ১ হাজার ৯৯৬ কোটি খরচ করে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ৬১৮ কোটি, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ভাগ হওয়ার আগে ও পরে) ১ হাজার ২৭০ কোটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১০৮ কোটি টাকা খরচ করে। এই অর্থ খরচ হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট। সর্বশেষ ৩ আগস্ট বেলা সোয়া দুইটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা মতিঝিলেও প্রায় দুই ফুট পানি জমে। পানি ওঠে সচিবালয়েও। বক্স কালভার্ট দিয়ে পানি যাচ্ছে না পানি নিষ্কাশনে ঢাকা ওয়াসার ৩৭০ কিলোমিটার গভীর নর্দমা বা ড্রেনেজ লাইন রয়েছে। গত প্রায় আড়াই বছরে ওয়াসা নতুন কোন নিষ্কাশন নর্দমা (স্টর্ম ড্রেনেজ লাইন) নির্মাণ করেনি। খাল রয়েছে ৮০ কিলোমিটার। বক্স কালভার্ট ১০ কিলোমিটার। ড্রেনেজ বিভাগের নথি থেকে জানা যায়, খাল, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা সরকারের অনুন্নয়ন (রেকারিং) খাত থেকে পাঁচ কোটি করে টাকা পাচ্ছে। এবার পেয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ৪০ কোটি টাকা চেয়েছে। নিজ তহবিল থেকে খরচ করা হচ্ছে আরও ১৫ কোটি টাকা। বক্স কালভার্টের ভেতরের আবর্জনা জমায় পানি যাচ্ছে না। আবর্জনা ও খাল পরিষ্কারের জন্য গত বছর প্রায় চার কোটি টাকায় এস্কেভেটর ও গ্রেভার যন্ত্র কেনা হয়। নগরে ঢাকা ওয়াসার পাম্পস্টেশন রয়েছে তিনটি। এগুলোর মধ্যে রামপুরা পাম্পস্টেশন চালু হয় ২০১৫ সালে। চীনের সিএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মাধ্যমে এটি স্থাপনে ১৩৩ কোটি টাকা খরচ হয়। গত বছরের জুনে ১০৫ কোটি টাকায় চালু হয় জনপথ (কমলাপুর) পাম্পস্টেশন। কল্যাণপুর পাম্পস্টেশন স্থাপিত হয় ১৯৯৩ সালে। ২০১০ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকায় এই পাম্পকে আরও শক্তিশালী করা হয়। ডিএসসিসি খরচ করে ৪১৪ কোটি টাকা ভাগ হওয়ার পর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ৪১৪ কোটি টাকা খরচ করে। এর মধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে ২০১২ থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫৩ কোটি খরচ করা হয়। মেগা প্রকল্পের আওতায় নর্দমা নির্মাণে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরানাপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক, মালিবাগসহ আশপাশের এলাকা ১২ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণে খরচ হয়ে গেছে ৪৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, পুরো কাজ শেষ হলে গ্রিড চালু হবে। জলাবদ্ধতাও কমে যাবে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে মেয়র নির্বাচনের পর জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত দুই বছরে ডিএসসিসি খরচ করেছে ১৭৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ ও মেরামত করা হয় ২৩৯ কিলোমিটার নর্দমা। ২০১২ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এত টাকা খরচ হলেও বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা বাঁধের ভেতরে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য গত বছর থেকে ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামসুল হক বেলন, সোজা কথা বললে আমি অন্তত সামনে সুখবর দেখছি না। নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাব এমন পর্যায়ে চলে গেছে, এখন স্বল্পমেয়াদী কোন টোটকায় আর কাজ দেবে না। বরং ঢাকার সমস্যা চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা থেকে আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা ক্যান্সারের মতো। এভাবে চললে প্রথমে রাজধানী মরবে, একপর্যায়ে মরবে দেশও। উন্নয়নের দুটি দিক আছে। হয় আপনাকে প্রকৃতি ঠিক রেখে উন্নয়ন করতে হবে, নতুবা বিকল্প কী হতে পারে তা পাই পাই করে হিসাব করতে হবে। আর এই হিসাব হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক। নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ কোরিয়া তা করে দেখিয়েছে। ঢাকায় যিনি ভূমি ব্যবহার করছেন বা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তিনি রাস্তার খবর রাখছেন না। যিনি রাস্তা নির্মাণ-রক্ষণাবেক্ষণ করছেন তার কাছে ভূমি ব্যবহারের কোন চিত্র নেই। আর গাড়ির নিয়ন্ত্রণ যার হাতে, এর কোনটাই তার হিসাবের মধ্যে নেই। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসেও ভূমির স্বল্পতা আছে। তারা প্রকৃতির স্বাভাবিক গঠনে পরিবর্তন এনে উন্নয়ন করেছে। কিন্তু প্রতিটি এ্যাকশনের রি-এ্যাকশন কী হতে পারে, তা হিসাবেও এনেছে। দক্ষিণ কোরিয়াও হিসাবনিকাশ করে উন্নয়ন করেছে। আমরা যদি মনে করি মানুষ বেশি, জায়গা কম, কিছু করার নেই তাহলে অন্ধকারই অপেক্ষা করছে। আমি মনে করি ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে বক্স কালভার্ট। এগুলো পানি নিষ্কাশনের খাল ছোট করে দিয়েছে। ঢেকে রাখা একটি নালা কখনই সচল রাখা সম্ভব নয়। কারণ সরকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এতই সুশাসনের অভাব যে ঠেকে না গেলে কেউ কাজ করে না। মনে রাখতে হবে ভূমি ব্যবস্থাপনা, সেবা সংস্থার লাইন, রেল ও সড়ক এগুলো সরকারকেই করতে হবে। এগুলো ব্যক্তি উদ্যোগে সম্ভব নয়। তাই সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। তিনি বলেন, আমি বলতে পারি শুধু টাকা খরচ করলেই হবে না। সুশাসন থাকতে হবে। নগর একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়। ভূমি, সড়ক ও সেবা খাতের ব্যবস্থাপনায়ও বিজ্ঞান থাকতে হবে।
×