ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভ্রান্তি থাকায় আদিবাসীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ॥ মেনন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১০ আগস্ট ২০১৭

দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভ্রান্তি থাকায় আদিবাসীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ॥ মেনন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদিবাসীদের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, এমপি। তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালী’এটা কেউ বলে দেবে, কেউ আলাদা করে স্বীকৃতি দেবে, এটা আমি কেন মানব? আমি বাঙালী এটা আমার অধিকার। বাঙালী যেমন তার সংস্কৃতি, বৈচিত্র্য, প্রথা ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে বাঙালী পরিচয় বহন করে, তেমনি আদিবাসীরাও তাদের সংস্কৃতি দিয়ে পরিচয় বহন করে। আলাদা করে স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না। কেউ স্বীকৃতি দিলেও, না দিলেও তারা আদিবাসী। বুধবার জাতীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত বিশ্ব আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দিবসটি পালনের শুভ উদ্বোধন করেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিজ্ঞান লেখক, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক মেসবাহ কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, এটা সত্যি, পাহাড়ে শান্তির জন্য শান্তি চুক্তি করা হয়। কিন্তু এখনও শান্তি নিশ্চিত হয়নি। পাহাড়ে ভূমি সমস্যার সমাধানে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর জাতীয় সংসদে অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে ভূমি কমিশন করা হয়। ভূমি কমিশন এখনও কার্যকর হয়নি। এটা দুঃখজনক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভ্রান্তি থাকায় আদিবাসীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের চিন্তায় পরিবর্তন আনা দরকার। রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সামগ্রিক চিন্তার পরিবর্তন আনলেই আদিবাসী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, আদিবাসীদের অধিকার আদায় ও সমস্যা সমাধানে কোন সরকারই আন্তরিক নন। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সব সময়ই আদিবাসীদের প্রতি বৈরী মনোভাব কাজ করে। বাংলাদেশে আদিবাসীদের মানবিক পরিস্থিতি ভাল নয়। তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সরকার কখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস উদযাপন করেনি। সরকার আদিবাসী জনগণের আত্ম পরিচয়ের অধিকার অস্বীকার করেছে, যা দেশে বিদেশে রাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণœ করেছে। তিনি আরও বলেন, দেশের আদিবাসী জনগণের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, তাদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ১০টি দাবি উত্থাপন করে সন্তু লারমা বলেন, আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসী অঞ্চলে সরকারী ও বেসরকারী কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে আদিবাসীদের স্বাধীন মতামত গ্রহণ এবং প্রকল্পে আদিবাসীদের ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০১১ সংশোধন করতে হবে। মৌলভীবাজার জেলার ঝিমাই ও নাহার খাসিয়া পুঞ্জির আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে। সমাবেশে কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে এই দিনকে আদিবাসী দিবস হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষণা করে। তারপর থেকে বিভিন্ন দেশ এই দিনকে পালন করে আসছে। যখন জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ এই দিবসের বিরোধিতা করেছিল। অথচ আজ তারাই এই দিবসটি উদযাপন করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি উদযাপন করে না। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের’ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীরা শুধু কৃষি কাজে নয়, মুক্তিযুদ্ধ, কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের উন্নয়নের সব কাজে তাদের অবদান রয়েছে। কিন্তু এইসব আদিবাসীর ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে, উচ্ছেদ করা হচ্ছে, ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? আমরাও তো এদেশের জনগণ কিন্তু স্বীকৃতি নেই। নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী খুশি কবির বলেন, আদিবাসী নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের আন্তরিক অংশগ্রহণ দরকার।
×