ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রায়হান আজিজ

তারুণ্যের শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ আগস্ট ২০১৭

তারুণ্যের শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছেন। ব্রিটিশরা যাওয়ার সময় দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আমাদের অখ- ভূখ-কে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত করে দিয়ে গেল। পাকিস্তানে ছিল যোজন দূরে অবস্থানকারী দুটো অংশ যাদের মধ্যে ধর্মীয় সাদৃশ্য থাকলেও ছিল বিস্তর সাংস্কৃতিক ফারাক। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বুঝতে পারলেন যে স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালীর সাংস্কৃতিক তথা জাতীয় মুক্তি অসম্ভব। ’৫৮তে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ’৬৬-এর ছয় দফা তো বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ। এ বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। তিনি সব সময়ই চেয়েছেন বাংলার স্বায়ত্তশাসন। বাংলার মানুষকে প্রস্তুত করেছেন স্বাধীনতার জন্য। ফলে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন। ’৬৯-এর ছাত্রজনতার তীব্র্র আন্দোলনে ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’ সেøাগানে ভীত হয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসীন হয় আরেক মিলিটারি ইয়াহিয়া। সে গণআন্দোলনের মুখে ’৭০-এর নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সে নির্বাচনে জয়লাভ করে বঙ্গন্ধুর আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দিতে গড়িমসি শুরু করে। বঙ্গবন্ধু পরিস্থিতি আঁচ করে ৭ মার্চের ভাষণে জনতাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেন। জনতাও প্রশিক্ষণ নেয় যুদ্ধের। ২৫ মার্চ গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। এর আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি। এ রাতেই জনতার ওপর আক্রমণ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলে এবং আমরা স্বাধীন হই। কিন্তু পাকিস্তানীরা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী এটি মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতা বিরোধী, হঠকারী পিকিংপন্থী বাম, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী জাসদ, সামরিক বাহিনীর একাংশ এবং সর্বোপরি পাকিস্তানী ও মার্কিন সরকার বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। এতে লাভবান হয় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। দেশে রাজাকারদের পুনর্বাসন করে ১৫ আগস্টের বেনিফিশিয়ারি পাকিস্তানপন্থী ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা মিলিটারি জিয়া। দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়ার চক্রান্ত করে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ইনডেমনিটির মাধ্যমে দায়মুক্তি দেয়। পরবর্তীতে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে স্বাধীনতারবিরোধী মিলিটারি ও হাফ মিলিটারিরা। তারা চেয়েছে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অজ্ঞ থাকুক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুপ্রেমী জনতার কাছে তারা হার মানে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করে। তার অসাম্প্রদায়িক আদর্শ লালন করে। তারা এখন রাজনীতি সচেতন, বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে তারা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে এবং দেশ ও সেবায় নিয়োজিত হচ্ছে। এ দেশের তারুণ্য শোক দিবসকে শক্তিতে পরিণত করে রাজনৈতিকভাবে সচেতন আদর্শ নাগরিকে পরিণত হবেই, তারুণ্যের বঙ্গবন্ধুপ্রেম কেউ রুখতে পারবে না। শ্যামপুর, ঢাকা থেকে
×