ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার চরে সোলার পার্ক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ আগস্ট ২০১৭

পদ্মার চরে সোলার পার্ক

জমির অভাবে সোলার পার্ক নির্মাণের জট থেকে বেরিয়ে আসার একটা কার্যকর পথ পাওয়া নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। চরের পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রথমেই পদ্মার চরের অনাবাদী জমিতে ২০০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে সোলার পার্কটি স্থাপন করবে সরকারের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। যেসব চর বর্ষায় প্লাবিত হয় না বা ভাঙ্গনের মুখে পড়বে না তেমন চর খুঁজে বের করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। সাধারণত প্রতি মেগাওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য সাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে ১০০ মেগাওয়াট সোলারের জন্য ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ জমি অনাবাদী পাওয়া বেশ কঠিন। সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বিপুল জমির সংস্থান করা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ থমকে আছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী কোম্পানিও জমির সংস্থান করতে পারছে না। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরেও সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের কাজে গতি আসছিল না। সৌর বিদ্যুতের প্রয়োজন ও উপকারিতা এখনও বহু অক্ষরজ্ঞানহীন বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ সঠিকভাবে অনুধাবনে অক্ষম। অন্তত সাতটি সুবিধা মেলে সূর্যবন্ধুর সহায়তা নিয়ে তৈরি বিদ্যুত শক্তিতে। বিদ্যুত চলে গেলে এটি যে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এটা অবশ্য সবারই জানা। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে কিছুটা বিদ্যুত ঘাটতি দেখা য়ায়। সে সময় বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে লোডশেডিংয়ের সময়ও বিরতিহীন বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া সৌর ব্যবস্থার খরচ ক্রমেই হাতের নাগালে চলে আসছে। এখন বাংলাদেশে এটিই সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস- পানিবিদ্যুত এবং বাতাস সামান্য কিছু শক্তি সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থার ক্ষমতা অনেক। বেশিরভাগ বিদ্যুত প্যানেল ২৫ বছর বা তার বেশি বিদ্যুত উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু একটি সোলার প্যানেল তৈরি করার পেছনে যে শক্তি ব্যয় হয় তা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক শক্তিতে রূপান্তর হয়। এটি আইপিএস সিস্টেমের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল একটি বিকল্প ব্যবস্থা। আইপিএস এবং সৌর বিদ্যুতÑ দুটোই খরচসাপেক্ষ; কিন্তু আইপিএস নতুন করে বিদ্যুত উৎপন্ন করতে সক্ষম নয় যা সৌরশক্তি দ্বারা সম্ভব, আইপিএস বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না, কিন্তু সৌরশক্তি দ্বারা সবসময় নতুন ও পরিচ্ছন্ন শক্তি তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের জনপ্রতি এনার্জি ব্যবহারের হার ঘণ্টায় প্রায় ১৩৬ কিলোওয়াট সেখানে সৌর বিদ্যুত ব্যবস্থা একটি আশীর্বাদস্বরূপ। প্রতিমাসে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারের ঘরে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি বর্তমানে চলমান। যেখানে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি নেই সেখানে গৃহস্থ ও কিষাণ বাড়ির ঘরের চালার ওপরে অথবা ইটের বাড়ির ঘরের ছাদে সূর্যের আলো ধরে রাখার প্যানেল স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অনেক আবাদী জমির ধারে ঘর বানিয়ে প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুতে সেচ কাজও চলছে। সব মিলিয়ে সৌর বিদ্যুতে যে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এই কাজ আরও এগিয়ে নেয়া চাই, একথা আমরা এর আগেও বলেছি। সেই সঙ্গে এ খাতে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেয়াও জরুরী, সেটাও আমরা বার বার বলে আসছি। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে নেই এমন চরাঞ্চল ছাড়াও সৌরবিদ্যুত প্রকল্প এগিয়ে নিতে বিকল্প জমির সন্ধানও অব্যাহত রাখা চাই।
×