ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবি নিষিদ্ধ হয়নি এখনও!

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১০ আগস্ট ২০১৭

নব্য জেএমবি নিষিদ্ধ  হয়নি এখনও!

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ছয় জঙ্গী সংগঠনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্যের ভিত্তিতে দেশে এখন চলছে নব্য জেএমবি নামের আরেকটি জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রম। গত এক বছরে দেশের বিভিন্নস্থানে যেসব জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে সেগুলোতে গ্রেফতারকৃত ও নিহত জঙ্গী সদস্যদের নব্য জেএমবি হিসেবে দেখানো হয়েছে। মূলত এ ধরনের কোন সংগঠনের অস্তিত্ব বা ঠিকানা পুলিশ র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এখনও খুঁজে পায়নি। এদেশে গত ১৪ বছরে ৬টি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নব্য জেএমবি নামের সংগঠনটি এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। আবার ৬টি নিষিদ্ধ হলেও জঙ্গীরা বিভিন্ন নামে এবং নানা কৌশলে তৎপর রয়েছে ইসলামের নামে অপতৎপরতা চালাতে। সরকার এ পর্যন্ত ৬টি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করলেও কার্যকর রয়েছে এদের সদস্যরা। এ ৬টি জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে মাত্র দুটি জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কিন্তু আদৌ সমূলে ধ্বংস করা যায়নি এসব জঙ্গী সংগঠনের আস্তানা। জঙ্গীরা তৎপর থাকার কারণে একের পর এক জঙ্গী হামলা যেমন হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও চলছে নানা কৌঁসুলী অভিযান। অভিযানের কারণে কিছুদিন দমে থাকার পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এসব সংগঠনের সদস্যরা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। শুধু সংগঠন বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে সরকার পক্ষ থেকে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সরকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের দুর্বল রিপোর্টের কারণে জঙ্গীরা যেমন জামিন পাচ্ছে, তেমনি জঙ্গীদের জামিন পাইয়ে দিতে কাজ করছে ওই ঘরানার একশ্রেণীর আইনজীবী। সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের উপর কোন ধরনের নির্দেশনা না থাকায় সরকারবিরোধী ও জাতি বিরোধী এসব জঙ্গী পুনরায় সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ প্রাণহানি ঘটানোর। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত জঙ্গীরা সদস্য সংগ্রহের যে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি, এমন প্রশ্ন এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের। আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব জঙ্গী সদস্য ধরা পড়ছে তারা স্বীকার করছে আনাসরুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের কথা। প্রশ্ন উঠেছে, দেশে র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এসব জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এদেশে ইসলামের নামে কোন ধরনের রাজনীতি না করার জন্য ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব সংগঠনের সদস্যরাই দেখা গেছে ইসলামের ব্যানারে প্রচার করতে গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে ব্রেনওয়াশ করে তাদের পথে ধাবিত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে ৬টি সংগঠনকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এরা দেশ ও জাতির শত্রু, স্বাধীনতাবিরোধী এবং ইসলামকে বিকৃত করে ধর্মের নামে অপপ্রচারে লিপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ড অনুযায়ী ২০০৩ সালে রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকায় সর্বপ্রথম অভিযান চালানো হয় জঙ্গী সন্দেহে। সেখানেই হড়গ্রামস্থ নতুনপাড়া এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায় জনৈক মিজানুর রহমানের বাড়ি। সে বাড়িতেই শাহাদাত-ই-আল হিকমা পার্টি বাংলাদেশ নামের এ সংগঠনটি জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত হতে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ফলে সরকার এ সংগঠনটিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ নামের আরেকটি জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ২০০৫ সালে। তবে কয়েক সদস্য গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এ সংগঠনটির অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও মূলত সুনির্দিষ্ট কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি মুলোৎপাটনে। তদন্তের পর বেরিয়ে এসেছে সংগঠনটি জঙ্গী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। যারা এ সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করছিল তারাই মূলত তাদের সুনির্দিষ্ট কোন ঠিকানা দিতে না পারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ নিয়ে তৎপরতা থামিয়ে দিয়েছে। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ করা হয় এ সংগঠনটির কার্যক্রম। কিন্তু কেন? তাহলে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ কি করছে। সরকারের প্রতি প্রশ্ন জনগণের টাকায় এ বিভাগকে পুষে কী লাভ হচ্ছে। যারা দেশের নিরাপত্তাহানীর গোপন তথ্য দিতে ব্যর্থ তাদের ওপর কতটুকু নির্ভরশীল থাকা সম্ভব। ঠিক একই সময় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের সদস্যদের তৎপরতা শুরু হয়। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জঙ্গী কর্মকা-ের প্রমাণ পাওয়ার পর এ ধরনের সংগঠনকেও ২০০৫ সালে নিষিদ্ধ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এসব সংগঠনের জঙ্গীদের গ্রেফতারের পর তৎকালীন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্বল অভিজ্ঞতার কারণে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে পুলিশ দুর্বল রিপোর্ট দিয়ে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা। তবে থানা পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব সদস্যদের স্ব স্ব ঠিকানায় এবং সঙ্গীয়দের খোঁজ খবর নিলে অবশ্যই তদন্তের গভীরতা প্রকাশ পেত বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। ফলে এ সংগঠনের সদস্যরা এখনও তৎপর রয়েছে।
×