ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরে নানা চার্জ আরোপ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১০ আগস্ট ২০১৭

বেনাপোল বন্দরে নানা চার্জ আরোপ

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করতে ও বন্দরের পণ্যজট কমাতে সরকারের সিদ্ধান্তে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমস ও বন্দর খোলা রেখে কাজ করার নির্দেশ দিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওভারটাইম, হলিডে চার্জ ও নাইট চার্জ আদায়ের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যেখানে ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সেখানে এসব চার্জ প্রযোজ্য হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সব চার্জই আদায় করে নিচ্ছেন। এসব চার্জ আদায় করা হলে তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সরকারের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। বাংলাদেশ ও ভারতের স্থলবাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে গতিশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাস্টমস ও বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার কার্যক্রম চালু করা হয় ১ আগস্ট থেকে। সে লক্ষ্যে উভয় দেশের কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম চালাচ্ছে। বন্দর ও কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ইতিবাচক। এর পরিপূর্ণ সুফল পেতে প্রতিদিন ভারত থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ও স্থান স্বল্পতার কারণে এ পরিমাণ পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে রাখা সম্ভব হবে না। এ মুহূর্তে বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। আর পণ্য রয়েছে দুই লাখ টন। ক্রেন ও ফর্ক লিফটের মতো যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় পণ্য লোড-আনলোডে সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে বন্দরের এসব সমস্যা দূর করার তাগিদ দেন সিএ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার পর প্রতিটি পণ্যচালানের বিপরীতে অলিখিত ৫০০ টাকা ওভারটাইম চার্জ আদায় করছে। এছাড়া বন্দর চার্জের সঙ্গে এক হাজার ২৫৭ টাকা ১১ পয়সা হলিডে চার্জ ও ৭১৮ টাকা ৩৭ পয়সা নাইট চার্জ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনও দেখা গেছে, একটি পণ্য চালানের বন্দর চার্জ এসেছে মাত্র ৫০০ টাকা সেখানে ৫টার পর কাজ করলে চার্জ দিতে হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা। আর এ কারণে অনেক আমদানিকারক বন্দরের চার্জের কারণে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিষয়টি জানার পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন কথা বলছেন না। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন জানান, সরকারী নির্দেশে ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের এসব চার্জ নিলে ব্যবসায়ীরা ছুটির দিনে কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। সেই সঙ্গে সরকারের ছুটির দিনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাবে। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, সরকারের বার বার বন্দর সচলের উদ্যোগ নিলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নানা চার্জের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের একটি ভাল সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে সরকারের বিশেষ ঘোষণায় সবাই কাজ করতে চাইলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের লোকজন কাজ করতে চায় না। ওভারটাইম, হলিডে চার্জ, নাইট চার্জ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে না নিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তা আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা প্রধান কার্যালয়ের অজুহাত দেখায়। এ বিষয়ে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে পত্র পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সরকারী সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে ছুটির দিনে পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে সরকারের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’ তাই তিনি ছুটির দিনে এসব চার্জ আদায় না করার দাবি করেন। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সরকারের নতুন উদ্যোগ ভেস্তে যাবে যদি বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের হলিডে, নাইট শিফট ও ওভারটাইম চার্জ নেয়া বন্ধ না করে। ভারত না নিলেও বেনাপোলে এসব চার্জ নেয়ায় আমদানিকারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে গিয়ে পর্যাপ্ত জায়গা ও শেড ইনচার্জদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।’ ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সফল করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে বলে মত দেন তিনি। এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরে বিভিন্ন ধরনের চার্জ সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী নেয়া হয়। আমরা তা পরিবর্তন করতে পারি না। সরকার আমাদের ছুটির দিনে বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওভারটাইম, হলিডে, নাইটচার্জ নিয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। ব্যবসায়ীরা চাইলে সরকারের কাছে হলিডে, নাইট শিফট ও ওভারটাইম চার্জ মওকুফের আবেদন করতে পারেন। সরকার মওকুফ করলে আমরা আর এসব চার্জ নেব না।’
×