ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনার আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৯ আগস্ট ২০১৭

খুলনার আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে খুলনার আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চূড়ান্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবারই প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। এদিকে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনর্গঠন করে বিচারকাজ আবারও শুরু হোক। অন্যদিকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা জজ মোঃ সেলিম। মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে অফিসিয়াল কাজ শুরু করেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনটির সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক। এরা হলেন- আমজাদ হোসেন হাওলাদার (৭৫), মোজাহার আলী শেখ (৬৫), সহর আলী সরদার (৬৫), আতিয়ার রহমান (৭০), মোতাছিম বিল্লাহ (৮০), কামাল উদ্দিন গোলদার (৬৬), নজরুল ইসলাম (৬০) ও আশরাফ শেখ (৮০)। সানাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ আটজনের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সাত খ-ের এক হাজার ২৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবারই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। আন্তর্জাতিক অপরাধ সংস্থার ৫৩তম এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৫ সালের ১৫ নবেম্বর; তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন। এ মামলায় মোট ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক বলেন, আসামিদের মধ্যে মোজাহার আলী শেখ ছাড়া বাকিরা সবাই বটিয়াঘাটারই বাসিন্দা। মোজাহারের বাড়ি দাকোপ থানায়। আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গত ৯ মার্চ গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেয় বলে তিনি জানান। বাকি দুইজনের মধ্যে নজরুল পলাতক আছেন এবং আশরাফ গত ৫ জুন মারা গেছেন। সানাউল বলেন, এদের মধ্যে আমজাদ ও মোজাহার মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগ করতেন। প্রথম জন এখন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হলেও পরের জন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আতিয়ার, সহর, মোতাছিম, কামাল ও নজরুল মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। এদের মধ্যে আতিয়ার এখনও জামায়াতের ইসলামের সমর্থক থাকলেও অন্যরা কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনর্গঠন করা হোক বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম সানাউল হক। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর থেকে প্রায় ১০ জন সাক্ষীকে ঢাকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে ট্রাইব্যুনালের কাজ না চলায় বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।’ মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত সংস্থার ধানম-ির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনর্গঠন করে বিচারকাজ আবারও শুরু হোক। বিচার দ্রুত হওয়াটাই বিচারপ্রার্থীদের দাবি। এ দাবির কারণেই দুটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছিল। এখন মামলার যে জট বৃদ্ধি হচ্ছে, সে বিষয়ে আমাদের মতামত হলো, আবার দুটো ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় করা হোক। মামলার বিচারকাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হোক- এটাই সবার চাওয়া। সমন্বয়ক আরও বলেন, ট্রাব্যুনালে এখন একটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে, বিচারাধীন আছে ১৮টি মামলা। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা প্রসিকিউশনে জমা পড়ে আছে। যারা বিচারপ্রার্থী তারা অনেক সময় হতাশা প্রকাশ করেছেন আমাদের কাছে। কারণ, তদন্তকালে সাক্ষী এবং ভিকটিমদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগটা হয় আমাদের। যা দুঃখ-বেদনা, ক্ষোভ বা আশা-হতাশা তারা আমাদের সঙ্গেই শেয়ার করেন। ফলে তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলব, যদি দুটি ট্রাইব্যুনাল করে দ্রুতগতিতে মামলাগুলো সম্পন্ন করা হয়, তাহলে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা অব্যাহত থাকবে। গত ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বিচারপতি আনোয়ারুল হকের। তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থেকে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০১৫ সালে ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় হলে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। ট্রাইব্যুনালের নতুন রেজিস্ট্রার মোঃ সেলিমের যোগদান মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা জজ মোঃ সেলিম। মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে অফিসিয়াল কাজ শুরু করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কেশব রায় চৌধুরী জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোঃ শহিদুল ইসলাম ঝিনুককে সুনামগঞ্জের জেলা জজ হিসেবে বদলি করে চাঁদপুরের জেলা জজ মোঃ সেলিমকে ট্রাইব্যুনালের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার পদে পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ছিলেন- আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (মতামত) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, তার আগে ছিলেন এ কে এম নাসিরউদ্দীন মাহমুদ। ২০১০ সালে বর্তমান ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলামকে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ওই সময়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছিলেন মোঃ সেলিম মিয়া।
×