ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইন সচিবের নিয়োগে কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ আগস্ট ২০১৭

আইন সচিবের নিয়োগে কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তার যোগদানপত্র গ্রহণের আদেশ কেন অবৈধ হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ রুলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত রুল দিয়েছেন, স্টে তো দেননি। কাজেই সচিব হিসেবে আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকের দায়িত্ব পালনে আইনগত কোন বাধা নেই।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের শুনানি অব্যাহত রয়েছে। রাজউকের ‘বিনা নোটিশে’ গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট প্রত্যাহার চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করে তার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (প্রশাসন-১) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে রিটের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগে সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ লাগে। কিন্তু সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ নেয়া হয়নি। ‘এছাড়া আইন সচিব পদে জুডিশিয়াল সার্ভিসের বাইরের কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। আইন সচিব এখন জুডিশিয়াল সার্ভিসে নাই। এমনকি আপীল বিভাগের এক রায়েও বলা হয়েছে, এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোন সুযোগ নেই।’ আদেশের পরে এ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা। তিনি আইন সচিব পদেই নিয়োজিত ছিলেন। অন্য কোথাও থেকে তাকে আনা হয়নি। পাবলিক সার্ভেন্ট এ্যাক্ট এর ৫(৩) ধারা থেকে উদ্ধৃত করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন রাষ্ট্রপতি জনস্বার্থে যে কোন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারেন। যেহেতু একেএম জহিরুল হক বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা, তাই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া আইনবহির্ভূত হয়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধানও আইনে নেই। সুতরাং এ নিয়োগকে অবৈধ বলা যাবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপীল বিভাগ এর আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে একটি রায় দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে অন্য সার্ভিস থেকে কাউকে এনে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা ছিল। এখানে সেটার ব্যত্যয় হয়নি। সুতরাং বেআইনী কিছু হয়নি।’ এর আগে আইন সচিবের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ-উজ জামান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট আবেদন করেন। গত ৬ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অবসর উত্তর ছুটি বাতিল করে দুই বছরের জন্য তাকে ওই পদে নিয়োগ দেয় সরকার। নিয়োগের পরদিন গত সোমবার তিনি ওই পদে যোগদান করেন। মওদুদের রিট খারিজ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিনা নোটিসে গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। মঙ্গলবার রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে ব্যারিস্টার মওদুদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ফারজানা শারমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। মওদুদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, এই বাড়ি নিয়ে নিম্ন আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা থাকায় আমরা হাইকোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছিলাম। মঙ্গলবার শুনানিতে তা উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন আদালত। এর আগে গত ৬ আগস্ট রাজউক কর্তৃক ‘বিনা নোটিসে’ গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। মওদুদ আহমেদের করা রিভিউ খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর গত ৭ জুন গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়ির মালামাল উচ্ছেদ করে বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজউক। এর আগে বিনা নোটিসে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৮ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ৮ জুন দায়ের করা রিটে গুলশানের বাসা থেকে উচ্ছেদের বৈধতা ও নোটিস না দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। সরকার ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ওই রিটে বিবাদী করা হয়। পরে বিচারপতি সৈয়দ মোঃ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানি হয়েছিল। বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মোঃ ফারুকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই ছাত্রী তাদের মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৬ মার্চ তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্তে বলা হয়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ সত্য। ছাত্রীদের সঙ্গে ড. শাহাদাত হোসেনের এ আচরণ স্পষ্টতই নৈতিক স্খলন, যা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন শাহাদাত হোসেন। আদালত পরিবর্তনের শুনানি অব্যাহত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের শুনানি অব্যাহত রয়েছে। বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেন ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বুধবার পরবর্তী শুনানির জন্য পরের দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতে খালেদার পক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। সোমবারও খালেদার আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এর আগে গত ৬ আগস্ট জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আবেদন করেন।
×