ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

১৯৭১ গণহত্যা নির্যাতনের স্মৃতিভাষ্য গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৯ আগস্ট ২০১৭

১৯৭১ গণহত্যা নির্যাতনের স্মৃতিভাষ্য গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে পাকবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিভীষিকা ছড়িয়েছিল সারাদেশে। তবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সম্পূর্ণ তথ্য বা ইতিহাস আজও ঠাঁই পায়নি বইয়ের পৃষ্ঠায়। বিশেষ করে তৃণমূলে গণহত্যার পরিপূূর্ণ চিত্রটি কেমন ছিল তা এখনও গ্রন্থাকারে আসেনি। দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া সেই নিষ্ঠুরতার বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে এবার লিপিবদ্ধ হবে গ্রন্থের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে জেলাভিত্তিক গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সে উদ্যোগের প্রথম প্রয়াস হিসেবে প্রকাশিত হলো গবেষণা গ্রন্থ ‘১৯৭১ গণহত্যার-নির্যাতনের স্মৃতিভাষ্য’। গ্রন্থটিতে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের গণহত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিভাষ্য অবলম্বনে তুলে ধরেছেন গবেষক ও সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে বইটির মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকাশিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা করেন সমকালের উপ-সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক জুলফিকার মানিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের টাস্ট্রি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী। বইটির সম্পাদনা, স্মৃতিভাষ্য ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সুশান্ত ঘোষ। অজয় দাশগুপ্ত বলেন, জাতির কাছে জেলাভিত্তিক আকারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে খুবই জরুরী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে যে গবেষণা গ্রন্থটি প্রকাশিত হলো, এটি একটি মুক্তিযুদ্ধের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় তিনটি অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যে লেখক বইটিতে ওই অঞ্চলের গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা এমন মর্মস্পর্শী করে তুলে ধরেছেন যে দু’একটা লাইন পড়লে চোখ ভিজে যায়। এই গ্রন্থ প্রকাশনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এ ধরনের ভাষ্যস্মৃতি বই আকারে প্রকাশ করায় প্রশংসার দাবি রাখে। তবে যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য অঞ্চলের স্মৃতিভাষ্যগুলো বই আকারে প্রকাশ করা। তবে সময় বেশি নেই। দিন দিন প্রত্যক্ষদর্শীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখনই সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য লিপিবদ্ধ করার। হয়ত ১০ বছর পর কোন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, বইটিতে ছোটখাটো কিছু ভুল থাকলেও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার শতভাগ চেষ্টা করা হয়েছে। এ জন্য লেখককে সাধুবাদ জানাই। জুলফিকার মানিক বলেন, জেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষণাগ্রন্থের খুবই জরুরী ছিল। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেই মহান কাজ করেছে। তাদের প্রথম প্রয়াস হিসেবে বইটি প্রকাশ হয়েছে। তিনটি এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বাকি জেলার ইতিহাস প্রকাশ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের কাছ থেকে প্রকৃত জেনে নিয়ে বই প্রকাশ করতে হবে দ্রুত। তিনি আরও বলেন, অতীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা চেষ্টা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পেতে হলে জেলাভিত্তিক ইতিহাস প্রকাশ করা খুবই জরুরী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেই কাজটি শুরু করেছে। আশা করি বাকি জেলার ইতিহাসগুলো আমরা বই আকারে পাব। জিয়াউদ্দিন তারিক আলী বলেন, সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজের আওতায় বইটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে বিশেষ করে আঞ্চলিক বা জেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই বইটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য জেলার ইতিহাসও ক্রমশ প্রকাশ করা হবে। অনুভূতি প্রকাশ করে গ্রন্থটির লেখক সুশান্ত ঘোষ বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের কাছে সব সময় জীবন করে রাখতে হবে। এই কথা চিন্তা করেই প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া ভাষ্য ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বইটি রচনা করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ঘটনা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাকে বহু প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এমন সব ঘটনা শুনেছি যা শুনলে শিহরিত হতে হয়। এখনও সেই ইতিহাস মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। তবে আরও কিছু তথ্য উপাত্ত- ঘটনা ও ছবি সংযোজন করা প্রয়োজন রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধ ও গাধারহাট নাটকের মঞ্চায়ন মঙ্গলভার শ্রাবণ সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো নাট্যকেন্দ্রের দুই নাটক বন্দুকযুদ্ধ ও গাধারহাট। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রযোজনা দুটির প্রদর্শনী হয়। মিসরের বিখ্যাত নাট্যকার আলফ্রেড ফারাগের ‘দ্য ট্র্যাপ’ অবলম্বনে বিন্যস্ত হয়েছে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী। মিসরের আরেক নাট্যকার তৌফিক আল হাকিমের ‘দ্য ডঙ্কি মার্কেট’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে গাধারহাট। রূপান্তরের পাশাপাশি নাটক দুটির নির্দেশনা দিয়েছেন তারিক আনাম খান। বন্দুকযুদ্ধ নাটকের গল্পের মূল উপজীব্য বিশ্বাসঘাতকতা। গ্রামের চেয়ারম্যানকে ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এক সন্ত্রাসীর তথ্য চাওয়া হয় তার কাছে। সেই সন্ত্রাসীর অন্য পরিচয় মুছে গিয়ে তার নাম হয় ‘হায়না’। পুলিশ জানে যে চেয়ারম্যানের সঙ্গে হায়নার যোগাযোগ আছে। এদিকে হায়নাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। গভীর রাতে চেয়ারম্যান গ্রামের চৌকিদারকে দিয়ে হায়নার সন্ধান করে। চৌকিদারকে বোঝানো হয় যে হায়নাকে মেরে ফেলাই হবে উত্তম কাজ। এতে যেমন তার অপকর্মের সাক্ষী থাকবে না তেমনি পাওয়া যাবে ১০ লাখ টাকা। কিন্তু চৌকিদারের কাছে প্রস্তাবটিকে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে হয়। স্বাভাবিক বিচারের পথ থেকে সরে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার বিষয়টি চলে আসে সামনে। একপর্যায়ে মুখোমুখি হয় অন্ধকার জগতের তিন বাসিন্দা রাজনীতির কূটচালে জড়িত চেয়ারম্যান, তার দ্বারা ব্যবহৃত চৌকিদার ও হায়না। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আরিক, শরীফ হোসেন ইমন, মুজিবুল হাসান নির্যাশ, আলাউদ্দিন হোসেন প্রমুখ। গাধারহাট নাটকের গল্পে আবির্ভূত হয় দুই বেকার যুবক। কাজের আশায় তারা বসে থাকে গাধারহাটে। এক সময় তারা দেখতে পায় গাধারহাট থেকে গাধা কিনে ঘরে ফিরছে এক কৃষক। বেকার যুবকদ্বয় কৃষকের সঙ্গে চালাকি করে তার গাধাটি সরিয়ে নেয়। এক বেকার তার গলায় পরে নেয় গাধার দড়ি। এরপর কৃষককে গল্পের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়, কেমন করে সে গাধা হয়েছিল। সরল বিশ্বাসে কৃষক যুবককে নিয়ে ঘরে ফেরে। কৃষকের বউও বেকার যুবককে ‘মানুষ গাধা’ হিসেবে মেনে নেয়। ওই যুবকের বুদ্ধিতে ফসলের বেশ ভাল দামও পায়। তবে তার যুক্তি-বুদ্ধি ও পরিকল্পনা মেনে নিতে পারে কৃষকের বউ। শুরু হয় দ্বন্দ্ব। শাস্তিস্বরূপ যুবকের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয় কৃষক দম্পতি। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইফ আহমেদ, সংগীতা চৌধুরী, নোমান আহমেদ, কুমার প্রাঙ্গণ, ইয়ানি হোসেন শিমুল।
×