ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যাকান্ডে ১৭ দিন পর ৩ জন গ্রেফতার ॥ জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রবাসী রফিকুলকে মাথায় শিলপাটা দিয়ে আঘাতে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ আগস্ট ২০১৭

প্রবাসী রফিকুলকে মাথায় শিলপাটা দিয়ে আঘাতে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম রুবেলকে অপহরণের পর শিলপাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে ধারালো বঁটি দিয়ে তার গলা ও পা কাটা হয়। এরপর বঁটি দিয়ে তার লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ এ কথা জানান। তিনি জানান, অপহরণকারীরা তাকে ধারালো বঁটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রাঙ্কে রাখে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার জন্য পিকআপ দিয়ে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা জেলায় নিয়ে যায়। অতঃপর লাশ গুম করার জন্য ধানক্ষেতের ভেতরে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকান্ডের ১৭ দিন পর সোমবার গভীর রাতে পৃথকস্থান থেকে এ হত্যার ঘটনায় জড়িত স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হচ্ছে- মোজ্জামেল হক তার স্ত্রী আঁখি আক্তার ঝুমা ও ঝুমার ভাই মোঃ জাকিরুল। পরে পুলিশ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত শিলপাটা, বটি ও ট্রাঙ্কটি জব্দ করেছে। আর গ্রেফতারকৃত ঝুমার কাছ থেকে নিহত রফিকুলের স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, গ্রেফতারের পর আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তিনি জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানাধীন একটি আবাসিক হোটেল থেকে সোমবার মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য মতে, হত্যার মূল আসামি ঝুমাকে একই দিন নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন নবীগঞ্জ এলাকা থেকে এবং রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে জাকিরুলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ডিসি জানান, নিজ আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে হত্যার শিকার হলেন মোঃ রফিকুল ইসলাম রুবেল। ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, ভিকটিমের পূর্বপরিচিত ছিল ঝুমা। রুবেল দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসার পর ২১ জুলাই পূর্বপরিচিতির কারণে ঝুমাদের ৭৮/২৪ পূর্ব রামপুরার বাসায় বেড়াতে যায়। তারপর ঝুমাদের বাসায় রুবেলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে ঝুমা রুবেলের মাথায় শিলপাটা দিয়ে আঘাত করে। তারপর গলা কেটে তাকে হত্যা করে। ঝুমাকে এই হত্যার কাজে সহায়তা করে তার স্বামী মোজাম্মেল হক। এরপর রুবেলের লাশ কয়েক টুকরো করে একটি ট্রাঙ্কে ভরে রাখে। এ সময় ভিকটিম রুবেলের কাছ থেকে একটি স্বর্ণের চেন, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি নিয়ে যায় আসামিরা। নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকাও নিহতের কাছ থেকে নিয়ে যায়। লাশ গুম করার জন্য পরদিন সকালে একটি পিকআপ ভাড়া করে বাড়ির অন্য মালামালসহ আসামিদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানায় গভীর রাতে পৌঁছায়। সেখানে মোজাম্মেলের গ্রামের বাড়ির ধানক্ষেতের পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় মাটিচাপা দিয়ে রাখে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, দুবাইপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম রুবেল ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল ভিকটিমের পরিবার। থানা পুলিশ জিডির তদন্তে নেমে জানতে পারে মোঃ রফিকুল ইসলাম রুবেলের মোবাইল নম্বর রামপুরা এলাকা হতে বন্ধ হয়। এরপর মামলা দায়ের পর পুলিশ তদন্তে নামে। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ আরও জানতে পারে ৭৮/২৪ পূর্ব রামপুরার একটি বাসায় তার শেষ অবস্থান। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বাসায় গিয়ে জানতে পারে ওই ভাড়াটিয়ারা তাদের মালামাল নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। সঙ্গে তারা একটি বড় ট্রাঙ্কও নিয়ে গেছে। সন্দেহ হয় পুলিশের। পরবর্তী সময়ে রফিকুলের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে ১ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিলাল আল আজাদ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন। ওই ভাড়াটিয়া মোজাম্মেলের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানায়। তিনি মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ২ আগস্ট মোজাম্মেলের বাড়ির পেছনের ধানক্ষেত হতে একটি ট্রাঙ্কের মধ্য হতে নিখোঁজ হওয়া রফিকুলের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। থানা পুলিশ শুরু করে গ্রেফতার অভিযান। অভিযানের একপর্যায়ে সোমবার মোজাম্মলকে সিলেটের একটি হোটেল থেকে তার স্ত্রী ঝুমাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের তার খালাত বোনের বাসা থেকে ও ঝুমার ভাই জাকারিয়াকে রামপুরা থেকে গ্রেফতার করে। ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদ উদ্দিন জানান, নিহত ভিকটিম মোঃ রফিকুল ইসলাম দুবাই থাকতেন। নিখোঁজের আগে অর্থাৎ ১৮ জুলাই তিনি গ্রাম থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। পরদিন অর্থাৎ ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি রামপুরার পূর্বপরিচিত (দুঃসম্পর্কের আত্মীয়) মোজাম্মেলদের বাসায় বেড়াতে যান। আর সেখানেই নির্মম এই খুনের শিকার হন রফিকুল ইসলাম।
×