ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দলের ওপর মহলে বৈঠক ॥ ধর্ষিত মেয়ে, লাঞ্ছিত মা রাজশাহীতে

বগুড়ায় আওয়ামী লীগের জন্য বিপজ্জনকদের বহিষ্কারের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ আগস্ট ২০১৭

বগুড়ায় আওয়ামী লীগের জন্য বিপজ্জনকদের বহিষ্কারের নির্দেশ

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সোমবার মধ্যরাতে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারের কিশোরী ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করেন। সূত্র জানায়, এ সময় ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, দলের ক্ষতিকর এবং বিপজ্জনক যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে তারা যেই-ই হোক তাদের কোন নিস্তার নেই। ওবায়দুল কাদের এসব ক্ষতিকর ও বিপজ্জনকদের কোন ধরনের অনুকম্পা না দেখিয়ে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এসব অপরাধী দুর্বৃত্ত যেন কোনভাবেই দলে প্রবেশ করতে না পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ভেতরে থেকে যারা দলকে নানাভাবে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। এর আগে সোমবার দুপুরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এদিকে বগুড়ার ধর্ষিতা মেয়ে এবং তার নির্যাতিতা মাকে মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী সেফহোম ও রাজশাহী ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। বগুড়া পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে তাদের রাজশাহীতে রেখে আসে। এর আগে সোমবার রাতে মেয়ে ও মা পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে ছিল। মেয়ে ও মাকে পৃথক দুই স্থানে (রাজশাহী ও ঢাকা) রাখা নিয়ে সুধীজনেরা বলাবলি করছিলেন, এতে দুই জনেরই (মেয়ে ও মা) মনোস্তাত্বিক ক্ষতের ওপর মানসিক চাপ বাড়তে পারে। রাজশাহীতে সেফহোম ও ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে তারা থাকলে এ অবস্থার কিছুটা অবসান হবে, এমনটি মনে করেন সুধীজন। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, মেয়ে ও তার মা রাজশাহীতে থাকায় মামলার গতি প্রকৃতির কোন ব্যঘাত ঘটবে না। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আপন গতিতেই চলবে। যে সাক্ষ্যপ্রমাণ, তথ্যউপাত্ত ও আলামত মিলেছে তাতে দ্রুতই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া সম্ভব হবে। পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান আগেই জানিয়েছেন মামলা স্পিডি ট্রায়ালে (দ্রুত বিচার আদালত) নেয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মুখ দেখাতে পারছেন না শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারের কুকীর্তির কারণে শ্রমিক লীগসহ অন্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসম্মুখে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বগুড়ার বিশিষ্টজন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এক আলোচনায় বলেছেন ‘তুফান সরকারের মতো ঘৃণিত লোক কিভাবে দলে ঢুকে পড়লো এ কথা ভাবতেও এখন কষ্ট হয়। তুফান সরকারের জন্য মুখ দেখানো যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন দলে যেন আর কোনভাবেই এসব দুর্বৃত্তরা ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্র দ্রুত প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি দলের সকলকে সতর্ক করে দেন। এখনও সর্বত্রই আলোচনা বগুড়ার চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রেশ সহজে থামবে, এমনটি কেউ মনে করছে না। বর্তমানের আলোচনা, তুফান সরকার গংদের কি সাজা হয় তা দেখার জন্য বগুড়ার মানুষ অপেক্ষায় আছে। একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলোÑ সাধারণ মানুষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আর কোন তুফান সরকার যেন তৈরি হতে না পারে সেদিকে প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় সজাগ দৃষ্টি রাখছে লোকজন। পাড়া ও মহল্লায় কোন অচেনা মানুষকে দেখা গেলে তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তুফান সরকারের ক্যাডাররা খবর মিলছে তুফান সরকারের ক্যাডাররা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোপনে সংগঠিত হচ্ছে। আপাতত তারা বগুড়া নগরীর ভেতরে চলাফেরা করছে না। তবে মোটরসাইকেলে চেপে কোন না কোন স্থানে ছুটছে। শহরতলি এলাকায় নানা কৌশলে চাঁদাও তুলছে। তবে আগে যেভাবে চাঁদা তোলা হতো সেভাবে হচ্ছে না। ক্যাডাররা হুমকিধমকিও দিচ্ছে। শেরপুর উপজেলা থেকে খবর মিলেছে দু-তিন দিন ধরে যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় শুরু হয়েছে। শিমুল এখনও ধরা পড়েনি ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম অভিযুক্ত তুফান সরকারের সন্ত্রাসী ক্যাডার শিমুলকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। এজাহারভুক্ত যে দশজন অভিযুক্ত তাদের নয়জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। শিমুলই এখন বাইরে আছে। যদিও পুলিশ বলছে, শীঘ্রই শিমুলকে গ্রেফতার করা যাবে তারপরও শীঘ্রই সময়টি কতদিনের এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নারী মাদক বিক্রেতার স্বীকারোক্তি তুফান সরকার গংদের ছিল মাদক সাম্রাজ্য। বগুড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ক্লাস্টারভিত্তিক মাদক বিক্রেতা তৈরি করত তারা। তাদেরই একজন রহিমা বেগম। মঙ্গলবার দুপুরে এ রহিমা বেগম বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করে সে মাদকের ব্যবসা করত দীর্ঘদিন ধরে। সে ‘মহাজনের’ কাছ থেকে মাদক কিনে খুচরা বিক্রি করত। কে সেই ‘মহাজন’ তা প্রকাশ করেনি সে। তবে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সে যে বাঁচার চেষ্টা করছে তা স্পষ্ট। ইতোমধ্যে বগুড়া পুলিশ মাদকের বিভিন্ন ঘাঁটিতে অভিযান শুরু করেছে।
×