ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বজিতের খুনীদের দন্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ আগস্ট ২০১৭

বিশ্বজিতের খুনীদের দন্ড

বিশ্বজিতের খুনীদের শেষ রক্ষা হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠনের কর্মী হলেও যে মানব হত্যার মতো মহাঅপরাধের জন্য দ- মওকুফ হয় না তার প্রমাণ পাওয়া গেল। বহুল আলোচিত বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডের আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ আসামির মধ্যে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে বর্তমান রায়ে। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। আগের রায়ে যে ১৩ জনকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে মাত্র দুজন আপীল করেছিলেন। হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছে। বাকি ১১ জন পলাতক। তাদের ব্যাপারে হাইকোর্টের রায়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি। তদন্ত প্রক্রিয়ায় এবং ময়নাতদন্তে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করায় রায়ের পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে বিশ্বজিতকে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ঘটনার দিন বিএনপির ডাকে অবরোধ পালিত হচ্ছিল। ক্যামেরায় ধারণ করা সেই হত্যার দৃশ্য টিভিতে দেখে অনেকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। রোমহর্ষক বর্বরতায় সমাজ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। শাসক দলেরও অনেকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিচার দাবি করেছিল। এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ মামলার রায় ঘোষণা করে। পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপীল হয়। রবিবার হাইকোর্ট বেঞ্চ আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের এ রায় ঘোষণা করে। আইনের শাসন বলতে মূলত আমরা বুঝি আইন ভঙ্গ করা ছাড়া কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তা সাধারণ আদালতে প্রমাণ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবাই আইনের চোখে সমান। তৃতীয়ত, ব্যক্তি-অধিকার বিচারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। দেশের মানুষ শান্তি চায়, সুশাসন প্রত্যাশা করে। অপরাধ করে কোন প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান ব্যক্তি পার পেয়ে যাক এটা কারোরই কাম্য নয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের মানুষ এটাই চায়। এর মাধ্যমে নীরবে গোটা সমাজে স্বস্তিবোধ ফিরে আসে। সরকারের প্রতিও মানুষের আস্থা বাড়ে। একটি বিষয় দেশের নাগরিকদের মনে গভীর রেখাপাত করেছে। সেটি হলো ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য হোক কিংবা সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়ই হোকÑ অপরাধ করে কেউই আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না। যে যত বড় ক্ষমতাধরই হোক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছে। একই নীতি প্রযোজ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যাপারেও। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এখানে ছাড় দেয়া কিংবা বিরাগবশত চরম পদক্ষেপ নেয়া দুটোরই কোন সুযোগ নেই। যে যতখানি অন্যায় করবে তার সাজা আইনসম্মতভাবে ততটুকুই নির্ধারিত। সব অপরাধীকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের কর্তব্য। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালকে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সুবর্ণকাল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকার সব হত্যাকাণ্ডকে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণ এখন আস্থাশীল। বিশ্বজিতের খুনীদের দ- দেশে আইনের শাসনের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
×