ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন নির্বাচনে রুশ হ্যাকাররা কতদূর কি করেছিল

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ আগস্ট ২০১৭

মার্কিন নির্বাচনে রুশ হ্যাকাররা কতদূর কি করেছিল

রাশিয়ার হ্যাকররা যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে হ্যাকিং করেছিল তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। প্রাইমারির দিন থেকেই হ্যাকিং শুরু হয়েছিল। পরে এটা টের পাওয়ার পর হোয়াইট হাউস রুশ হ্যাকিং থেকে ভোট প্রহরা দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীকে ডাকতে প্রস্তুত ছিল। রুশ হ্যাকিংয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয় ক্যালিফোর্নিয়ার বিভার সাইড কাউন্টির প্রাইমারি থেকে। পরবর্তী কয়েক মাসের তদন্তে উদ্ঘাটিত হয় যে রুশ হ্যাকাররা ২০টিরও বেশি রাজ্য ও স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে ভোটার রেজিস্ট্রেশন পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ওটা ছিল তাদের পরীক্ষামূলক প্রয়াস। এর উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন নির্বাচনের উপর জনগণের আস্থা নস্যাত করে দেয়া। আসল ভোটের দিন চূড়ান্ত সাইবার হামলা হতে পারে এমনও আশঙ্কা করা হয়েছিল এবং তা ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বিভার সাইড কাউন্টিকে হ্যাকিংয়ের ৩ সপ্তাহ পর এক রুশ হ্যাকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অতীত ও বর্তমানের দেড় কোটি ভোটার ফাইলের ব্যাকডোর খুলে ফেলে। প্রায় তিন সপ্তাহ কেউ তা জানতে পারেনি। এরপর হ্যাকিং হয় ইলিনয় রাজ্যে। ১২ জুলাই সেটা টের পাওয়া যায়। জানা যায় যে হ্যাকাররা দেড় কোটি ভোটারের গোটা ফাইল ডাউনলোড করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুরি করতে পেরেছিল ৯০ হাজার ফাইল যার মধ্যে ৭৫ হাজারেরও বেশি ছিল ব্যক্তিগত ড্যাটা। ভেতরে ঢুকে হ্যাকাররা ভোটার রোল বদলানোর বিশেষ করে নাম ঠিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। মে মাস থেকে মার্কিন গোয়েন্দারা প্রমাণ পায় যে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দারা প্রত্যাশিত বিজয়ী হিলারি ক্লিনটনের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। প্রথম ও সর্বনাশা যে কাজটা রাশিয়া করতে পারে তা হলো সূক্ষ্মভাবে ভোটার রোল বদলে দেয়া। রেকর্ড মুছে ফেললে সবার নজর পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ভোটারের ঠিকানার দ্বিতীয় বর্ণটি বদলে দিলে কারোর চোখে পড়বে না অথচ কাজ হবে অনেক বেশি। এতে ভোটের সময় ঘোর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত- ভোটিং মেশিনে হ্যাক করে ফল এলোমেলো করে দেয়া। তৃতীয়ত- রাশিয়া নির্বাচনের রিপোর্টিং ব্যবস্থায়ও হস্তক্ষেপ করতে পারে ইন্টারনেটের ড্যাটা বদলে দিয়ে। অথচ রাশিয়ার হ্যাকিংয়ের প্রথম রিপোর্ট মধ্য জুনে পাওয়ার সময় থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে এসেছিলেন। পাল্টা অভিযোগ করছিলেন যে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি নিজেরাই এসব হ্যাকিং করছে যাতে করে তাদের প্রার্থীর দোষত্রুটি ও ব্যর্থতা থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানো যায়। ১ আগস্ট ওহাইওতে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা নির্বাচনে কারচুপি হবে।’ এ থেকে অংশত ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে কেন তখন পরিস্থিতিতে টানটান উত্তোজনা এসেছিল। ওবামা ইতোমধ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন এই ভেবে যে চলমান রুশ হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা আঘাত হানলে মস্কোর সাইবার যুদ্ধ ব্যাপ্তি ঘটতে পারে। আর ট্রাম্প যেখানে সরকারবিরোধী সন্দেহে ইন্ধন যোগাচ্ছেন সেখানে ওবামা মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে তার ফায়দা নেবেন ট্রাম্প। এই যখন অবস্থা তখন গোয়েন্দারা আরও প্রমাণ পাচ্ছিলেন রাশিয়ার সাইবার অনুপ্রেবেশ কত ব্যাপক ছিল। ১৮ আগস্ট এফবিআই ইলিনয় ও এ্যারিজোনায় তাদের সংগৃহীত হ্যাকারদের ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ সকল অঙ্গরাজ্যকে ফ্ল্যাশ এলার্ট পাঠিয়ে দেয়। আগস্টের মাঝামাঝি জানতে পারা যায় যে, রুশ সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর একটি জিআরইউ একটি শাখা ফ্লোরিডা ও নিউমেক্সিকোর নির্বাচন ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করেছে। টেনিসিতে হ্যাকাররা রাজ্যের ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স সিস্টেমের ভেতর পৌঁছে গেছে। অচিরেই রুশ হ্যাকারদের আওতায় আসা মার্কিন অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা অর্ধেক ছাড়িয়ে যায়। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, রুশরা সবাইকে হ্যাক করার চেষ্টা করেছে। শুধু প্রশ্নটা হলো সে কাজে তারা কতটা সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে যে চিত্রটা বেরিয়ে এসেছে তা সুখকর ছিল না। কোন কোন ক্ষেত্রে তার ঢোকার চেষ্টা করে পারেনি। কিছু ক্ষেত্রে তারা কতকাংশে ঢুকে পড়ে তারপর আটকে গেছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে কিছুটা সাফল্য পেয়েছে। বলাবাহুল্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতা প্রাপ্ত হ্যাকাররা বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ সাইবার এ্যাক্টরদের অন্যতম। চলমান ডেস্ক সূত্র টাইম
×