ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চারুকলার চিত্রায়ন বিভাগের বৈভবময় বার্ষিক চিত্রপ্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ আগস্ট ২০১৭

চারুকলার চিত্রায়ন বিভাগের বৈভবময় বার্ষিক চিত্রপ্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেন্সিলের নিখুঁত টানে আঁকা ড্রয়িং। আঁকার সেই মুনশিয়ানায় জড়বস্তুও যেন পেয়েছে প্রাণ। পরিত্যক্ত কোন এক স্থানে পড়ে রয়েছে চারপাশে শিকড়-বাকড় ছড়ানো ডাব গাছের গুঁড়ি। ওই গুঁড়ির নিচে দৃশ্যমান গাছ থেকে ঝরে পরা কয়েকটি ঝুনা নারিকেল। সেসবের আশপাশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাঁশের খ-সহ নানা বস্তু। আর গুঁড়িটির ওপর লতাপতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে আরেকটি বুনো বৃক্ষ। অনুশীলন নামের নিরীক্ষাধর্মী এই স্কেচটি এঁকেছেন মোঃ নাজমুস ছাকিম খান। চিত্রকর্মটির জন্য এই চারুশিক্ষার্থী পেয়েছেন শহীদ শাহনেওয়াজ স্মৃতি পুরস্কার। অন্যদিকে ব্যস্ত শহর ঢাকার গল্প উঠে এসেছে কাজী আবদুল বাসেত স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত রাকিবুল আনোয়ারের ক্যানভাসে। সড়কের ধারে দ-ায়মান ল্যাম্পপোস্টের নিচে কাজের সন্ধানে বসে আছে এক বৃদ্ধ। বিশাল চিত্রপটের নিচে খোলা ম্যানহোলের ভেতর থেকে উঁকি দিয়েছে আরেকটি মানুষের মুখ। ছবির একপাশজুড়ে ছুটে চলেছে গাড়ির সারি। অন্য পাশে জায়গা করে নিয়েছে কর্মব্যস্ত শ্রমজীবী মানুষ। আর উর্ধমুখী হয়ে দানবীয় অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো অট্টালিকা। ড্রয়িংয়ের সঙ্গে তেলরং, জলরংসহ নানা মাধ্যমে চারুশিক্ষার্থীদের সৃজিত এমন বিচিত্র বিষয়ে চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলার ১ ও ২নং জয়নুল গ্যালারিতে। সোমবার থেকে এই প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের বার্ষিকী চিত্র প্রদর্শনী। ষাটজন শিক্ষার্থীর ৭২টি চিত্রকর্ম দিয়ে সজ্জিত হয়েছে এ প্রদর্শনী। সোমবার বিকেলে বিকেলে অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শিল্পীদের নিরীক্ষাধর্মী কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন ‘ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক স্থাপনা শিল্পের জন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন শেখ ফাইজুর রহমান। ‘ক্রাইসিস এ্যান্ড ক্যাপসুল গড’ শিরোনামে চিত্রকর্মের জন্য আনোয়ারুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মোঃ রেজাউল করিম। ‘এক্সপেরিমেন্ট’ শীর্ষক কাজের জন্য কাজী আবদুল বাসেত স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মোঃ রাকিবুল আনোয়ার। তেল রঙে আঁকা কাঁচাবাজর শীর্ষক চিত্রের জন্য তেলরং মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন মোঃ তরিকুল ইসলাম। চারুকলা প্রাঙ্গণ শীর্ষক চিত্রের জন্য দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি পুরস্কার অর্জন করেছেন শাহানা মোস্তফা, জলরং মাধ্যমে সেরা শিল্পী হয়েছেন সৈকত সরকার। মাহবুবুল আমিন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ভুটানের শিক্ষার্থী উগেন তেসরিং দয়া। পেন্সিল মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন সৌরভ ধর, শহীদ শাহনেওয়াজ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন নাজমুস ছাকিম খান। এ বছর কাজের মান বিচার করে জয়নুল আবেদীন পুরস্কার পায়নি কোন শিক্ষার্থী। প্রধান অতিথি হিসেবে বার্ষিক এ চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান ও অধ্যাপক জামাল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। বিচারকম-লীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভাল শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। সেখানেই শিক্ষার্থী শিল্পীর সার্থকতা। কারণ এই সমাজে ভাল পেশাজীবী অনেক পাওয়া গেলেও ভাল মানুষের বড়ই অভাব। চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকে বলে তাদের পক্ষে প্রকৃতির মতোই উদার হওয়া সম্ভব। একবিংশ শতাব্দীর জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার যে সঙ্কট তা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে ভাল মানুষ হওয়া। প্রদর্শনী চলবে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। জাদুঘর পরিচালনা কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন Ñসংস্কৃতিমন্ত্রী জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা কাঠানো আমূল পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সরকারী কর্মকর্তার পরিবর্তে জাদুঘর পরিচালনার ক্ষেত্রে জাদুঘর বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। জাতীয় জাদুঘরের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে সোমবার বিকেলে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ১০৪ বছর : প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতিমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেন জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে ড. এনামুল হক বলেন, ঢাকা জাদুঘর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রূপান্তরের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর। বিপুল সংখ্যাক নিদর্শন সংগৃহীত হওয়া বর্তমানে জাদুঘরের জন্য নতুন প্রয়োজন ভবন। তবেই ইতিহাস-ঐতিহ্যেবিষয়ক সকল নিদর্শন প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। জাদুঘরের জন্য সরকারী বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জাদুঘরের প্রবেশমূল্য প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি জাদুঘরের স্কুল বাস প্রকল্পটি পুনরায় চালু করতে পরামর্শ দেন মহাপরিচালককে। সরকারী কর্মকর্তা বা আমলার পরিবর্তে জাদুঘর পরিচালনার দায়িত্বে ‘জাদুঘর বিশেষজ্ঞ’ প্রয়োজন বলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্তব্য করেন আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাঠামো আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে জনবল সঙ্কট নিরসন করে গবেষণা ও প্রকাশনা খাতকে আরও সক্রিয় করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নূর বলেন, জাদুঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান ব্যক্তি ফয়জুল লতিফ চৌধুরী হচ্ছেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। তিনি কোন জাদুঘর বিশেষজ্ঞ নন। সেই অর্থে পড়ুয়া মানুষ হলেও জাদুঘর সম্পর্কে তার পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই। এছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই মহাপরিচালক নয়, জাদুঘর পরিচালনা করেন কিউরেটর। আর যিনি কিউরেটর হবেন, তাকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হবে, তার কোয়ালিফিকেশন থাকতে হবে। আগামী বছর বা কোন একটা সময় আজকের মহাপরিচালক চলে যাবেন, তার স্থলে আসবেন নতুন সরকারী কর্মকর্তা। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে জাদুঘর পরিচালনা করা কঠিন। এর থেকে মুক্তি পেতে গেলে জনবল কাঠামো, পরিচালনা কাঠামো আমূল পরিবর্তন করা উচিত। জাদুঘরের প্রকাশনা ও গবেষণা খাত পিছিয়ে রয়েছে মন্তব্য করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, এ বছর এ দুটি খাতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করবেন। জাদুঘরের হল ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান নিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা বিব্রত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন সভাপতি হাশেম খান। তিনি বলেন, সম্প্রতি এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানের বক্তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘স্বৈরাচার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে নিয়মিতভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাও হচ্ছে না। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের গ্যালারি না থাকা, জয়নুলের আঁকা কাক সিরিজের ভুল ছবি প্রদর্শনের দায়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে হাশেম খান বলেন, এটা একটা বড় অপরাধ। এখন প্রায়ই জাদুঘরে নানা বিষয়ে বিপত্তি ঘটছে। এখানে যেসব অনুষ্ঠান হচ্ছে তা বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে অনুমোদন নেয়া উচিত।
×