ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হ সুমন্ত গুপ্ত

জেফ বেজোসের স্বপ্নযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৮ আগস্ট ২০১৭

জেফ বেজোসের স্বপ্নযাত্রা

ওয়াল স্ট্রিটের চাকরি ছেড়ে আসা জেফ বেজোসের হাত ধরে এ্যামাজনের যাত্রা ১৯৯৪ সালে অনলাইনে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে। এ্যামাজন ডটকম প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজার মূল্য ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বর্তমান কর্মী সংখ্যা ৫৭ হাজার ২০০ জন। জেফ বেজোসের এ্যামাজন গঠনের গল্পটি বেশ মজার। নিউইয়র্কে বসের ওপর রাগ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমেরিকা ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। আর ঘুরতে ঘুরতেই সফটওয়্যার ডেভেলপারদের বিশাল সংখ্যা সম্পর্কে তার কিছুটা ধারণা হয়। এ অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা করেই ১৯৯৪ সালে শুরু করেন ই-কমার্স সাইট এ্যামাজন। আজকে যারা অল্পতেই মুনাফার জন্য বসে থাকেন, তারা শুনলে অবাক হবেন! প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই দীর্ঘ সময় সাহসী উদ্যোক্তার মতোই প্রতিষ্ঠানটিকে ধরে রেখেছিলেন বেজোস। একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরির চেয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষ্ঠান তৈরির ব্যাপারেই মনোযোগী ছিলেন এ উদ্যোক্তা। কাজের চাপ ও হতাশা যেন তাকে গ্রাস করতে না পারে সেজন্য প্রায়ই ঘুরতে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। আর বিভিন্ন বিষয় থেকে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজে প্রয়োগ করতেন। অনেকটা শূন্য হাতে শুরু করে ধীরে ধীরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেজোস। এ্যামাজনকে নিয়ে গেছেন শীর্ষস্থানে। মেধা, অধ্যবসায় ও সৃজন কুশলতার জোরে সম্পদ আহরণের দৌড়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ব্যবসায়িক ঝুঁকি নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি অসীম সাহসী। ব্যর্থতা এসেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে গ্রাহকদের চাহিদা কেমন হবে, এ বিষয়ে আগাম ধারণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনে মনোযোগী হয়েছেন। আর এ গুণটিই তাকে ও তার কোম্পানিকে বিশ্বসেরা করেছে। বেজোস বরাবরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন। ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে তিনি ভীষণ আগ্রহী। অতীতে অনেক প্রকল্পে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তা থেকেই শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে গেছেন। শুরুতে ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ এ্যামাজনের ছোট একটি শাখা ছিল। এখন এর ওপর ভর করেই বিশ্বখ্যাত এ কোম্পানি দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বেজোসের ঝুঁকি নেয়া ও ভবিষ্যত বাজার সম্পর্কে যথার্থ ধারণার কারণে। গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো এ খাতের অন্য কোম্পানিগুলো যতদিনে এ বিষয়টি উপলব্ধি করেছে, ততদিনে বেজোস শত কোটি ডলারের বাজার ধরে ফেলেছেন। বেজোস বরাবরই গ্রাহক ও তাদের নিয়ত পরিবর্তশীল চাহিদার বিষয়ে সচেতন। এ কারণে তিনি নিত্যনতুন পণ্য বাজারে এনেছেন। এমনকি গ্রাহকদের অভ্যাস বদলে ফেলতেও ভূমিকা রেখেছেন। এ্যামাজনের কিন্ডেল ই-বুক রিডার তেমনই একটি পণ্য। এটি বাজারে আসার পর মানুষের ছাপা বই পড়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। জেফ বেজোসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি তার বাবা ও মায়ের নাম হলো জ্যাকলিন গিস জর্গসেন এবং টেড জর্গসেন। তারা বিয়ের মাত্র ১ বছর পরেই ডিভোর্স হয়ে যান। তারপর তার মা আবার মিগুয়েল মাইক বেজোস নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তার দাদুর কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণায় এগিয়ে গেছেন জেফ বেজোস। জেফ বেজোসের দাদু যিনি লরেন্স প্রিস্টন, যিনি ইউএস এটোমিক এজেন্সি কমিশনের রিজিওনাল ডিরেক্টর ছিলেন, জেফের জীবনে তার অবদানই মনে হয় সব থেকে বেশি। এবং এই দাদুর কারণেই জেফ কম্পিউটারের প্রতি ঝুঁকে পড়েন যেটা তার পরবর্তী জীবনকে বদলে দিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। জেফ বেজোসের একটা শখ ছিল। সেটা হলো কোন জিনিস কিভাবে কাজ করে সেটা বোঝা এবং কোন নষ্ট জিনিস মেরামত করা। এই কাজে তিনি সবসময়ই অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে ছিলেন। তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ সম্পর্কিত কাজ করা। তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন খুবই ক্রিয়েটিভ মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় বিভিন নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারের ভেতর ডুবে থাকতেন। যেমন তিনি ছোটবেলাতেই সোলার কুকার, হোভারক্রাফট, রোবট, ইলেক্ট্রিক এলার্ম ইত্যাদি আবিষ্কার করেন। তার তৈরি করা এলার্ম তিনি একটা সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে কাজে লাগাতেন। জেফ তার ব্যক্তিগত জীবনে ‘ঞড়ি চরুুধ জঁষব’ এ বিশ্বাস করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটা টিমকে যদি একটা পিজার ২টা অংশ দ্বারা সন্তুষ্ট করা না যায় তাহলে এটা অনেক বড় একটা কাজ। তার কাছে সবার মতামত একসঙ্গে করে সিদ্ধান্ত নেবার থেকে তার স্বাধীন চিন্তাধারাই গুরুত্ব খুব বেশি ছিল যেটা তার জীবনের মোড় ঘোরাতে অনেক সহায়তা করে। সম্প্রতি জেফ বেজোসের ৬ ঘণ্টার জন্য মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথমভাগে ফোর্বস ঘোষিত শীর্ষ ধনীর তালিকাতেও প্রায় শীর্ষ ধনীর খেতাব থেকে মাত্র ৫০০ কোটি (পাঁচ বিলিয়ন) ডলার দূরে ছিলেন বেজোস। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৯০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যা দাঁড়ায় সাত লাখ সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা। ফোর্বস সাময়িকী অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পুঁজিবাজারে এ্যামাজনের শেয়ারের দাম ২.৫ শতাংশ বাড়ার প্রভাবে বেজোসের মোট সম্পদমূল্য বিল গেটসকে ছাড়িয়ে যায়। যাতে বেজোসের মোট সম্পদের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিল গেটসের চেয়ে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। তবে দিন শেষে এ্যামাজনের শেয়ারের দরপতনে মাইক্রোসফট কর্ণধার গেটস তার শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করে ফেলেছেন। চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত ফোর্বসের বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় বিল গেটসের পরেই ছিল বেজোসের স্থান। আর অর্গানিক ফুড চেইন হোল ফুডসকে কিনে নেয়ার পর বিল গেটসের মোট ম্পদ থেকে মাত্র ৫ শ’ কোটি ডলার দূরে ছিলেন বেজোস। আর এ্যামজনের বর্তমান বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। বেজোসের মালিকানায় রয়েছে এ্যামাজনের ১৭ শতাংশ শেয়ার। সম্প্রতি বছরগুলোতে বেজোস তার রকেট নির্মাণ কোম্পানি ‘ব্লু অরিজিন’ এবং ২০১৩ সালে কেনা ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা নিয়ে বেশি মনোযোগী। ‘ব্লু অরিজিন’ কোম্পানির তহবিল জোগাতে তিনি প্রতিবছর এ্যামাজনের ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন বেজোস। বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণের লক্ষ্যে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
×