ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বনজির আবরার

সাফল্যের মূলে সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ আগস্ট ২০১৭

সাফল্যের মূলে  সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা

ডিপ্রজন্ম-দেশের নামকরা সাপ্লাই চেন হেডদের একজন আপনি। এতদূর আসার গল্প- রুহুল হাবীব- আমার স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। আমি চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, এসএসসির পর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি, এরপর সিলেট শাবিপ্রবি থেকে কেমিকৌশল বিষয়ে স্নাতক পাস করা, আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষে ২০০৫ সালে রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিঃ-এ ইন্টার্ন হিসেবে আমার পেশাগত জীবনের সূচনা। একই বছরের শেষের দিকে আমি কোটস বাংলাদেশ লিঃ-এ যোগদান করি, এ প্রতিষ্ঠানে ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছয় বছর সাপ্লাই চেনের নানা দায়িত্ব পালন করেছিলাম। ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমি এ প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম ফ্যাক্টরিতে ছিলাম, বাকি দু’বছর ঢাকা হেড অফিসে। সাপ্লাই চেনের সব বিষয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের সূচনা ঘটেছে কোটস বাংলাদেশ লিঃ-এর মাধ্যমেই, এখান থেকেই আমি সাপ্লাই চেন এবং ইআরপি সম্পর্কিত দেশে এবং বিদেশে প্রচুর কর্মসূচীতে অংশ নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্টে অংশগ্রহণ যা আমার আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে বেশ ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে কোটস বাংলাদেশ লিঃ আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১১ সালের শেষের দিকে যোগ দেই ম্যারিকো বাংলাদেশ লিঃ-এ, সেখানের তিন বছরে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করি। ম্যারিকোর বেশ কয়েকটি পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল আমার। বর্তমান কর্মস্থল সানোফি বাংলাদেশ লিঃ-এ যোগদান করি সাপ্লাই চেন হেড হিসেবে ২০১৪ এর শেষের দিকে,চাকরির পাশাপাশি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে বিবিএ, এমবিএ, ইএমবিএ তে সাপ্লাই চেন বিষয়ে ক্লাস নিয়ে থাকি। আমি মনে করি আমার আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে আরও একটি কারণ রয়েছে, সেটি হলো আমি অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত থাকতাম। শাবিপ্রবির অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নোঙর’-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি। ডিপ্রজন্মÑসানোফি বাংলাদেশ সম্পর্কে বলুনÑ রুহুল হাবীব-বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা বাংলাদেশের মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সানোফি গত অর্ধশতকেরও বেশি কাজ করে যাচ্ছে। সমাজ ও পরিবেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে প্রতিরোধ প্রতিকার এবং নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে এ দেশের জনমানুষের স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ প্রশংসার দাবিদার হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের উৎপাদিত বিশ্বমানের ওষুধগুলো হলোÑ অসধৎুষ, খধহঃঁং, ঋষধমুষ, ঢ়বারংড়হব, ঈষবীধহব, ঃষবীধীরস সহ বেশ কয়েকটি। সম্প্রতি প্রাণঘাতী ডেঙ্গুজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারের কৃতিত্বও সানোফির। শীঘ্রই এটা দেশীয় বাজারে সহজলভ্যতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সানাফি বাংলাদেশে কাজ করা প্রথমসারির ফার্মাসিউটিক্যালস মাল্টিন্যাশনাল ুং কোম্পানি। টঙ্গীতে অবস্থিত এর বিশ্বমানের প্লান্ট জিএমপির মানদ- ও সংরক্ষণনীতি অনুসরণ করে ওষুধগুলো প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সানোফি এদেশে কাজ সালে ৩১ জানুয়ারি। আবহঃরং ষঃফ, ঋরংড়হং ( বাংলাদেশ), ঐড়বপযংঃ গধৎরড়হ জড়ঁংংবষ ষঃফ নামক তিনটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হওয়ার মাধ্যমে সানোফি-এভেনটিস বাংলাদেশ লিঃ-এর যাত্রা শুরু। ডিপ্রজন্ম-কর্পোরেট ব্যবসায়ে সফলতার জন্য তরুণদের কি করা উচিত? রুহুল হাবীব-সফলতার জন্য আমি বলব কঠোর পরিশ্রম আর ভিন্ন ভিন্ন পরিবর্তনশীল পরিবেশে কাজ করার মানসিকতা রাখতে হবে। এর পাশাপাশি একজন মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব, সমস্যা সমাধানের তীব্র আকাক্সক্ষা, যোগাযোগ ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ও দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। সাপ্লাই চেন পেশায় কাঁচামাল থেকে শুরু করে পণ্যের সমগ্র সরবরাহ শিকলের সকল অংশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের যে দক্ষতা তাই এক্ষেত্রে সফলতার মূল চাবিকাঠি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ের কর্মরত লোকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কর্পোরেট জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিপ্রজন্ম-আপনার ছোটবেলা গল্প বলুন রুহুল হাবীব-আমার জন্ম ইরানে। বাবা-মায়ের চাকরি সূত্রে জন্মের প্রথম পাঁচ বছর সেখানেই থাকা। প্রচ- ডানপিঠে ছিলাম, পিতা মাতা দুজনই চিকিৎসক ছিলেন। আমরা তিনভাই, ছোটবেলা থেকেই মামা-খালাদের সংস্পর্শে বড় হওয়া। তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে তাদের কর্মক্ষেত্রে সফল। মজার ঘটনা রয়েছে কিছু, বড় ছেলে পরিবারের, বেশ দায়িত্ব নেয়ার কথা স্বাভাবিকভাবেই! একবার পরীক্ষায় খারাপ করার পর বাবার হাত থেকে বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান মা, আর স্কুলে প্রধান শিক্ষকের একটি অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে ছোটবেলায় একটি আন্দোলন হয়েছিল। যেটি নেতৃত্বও দিয়েছি, সফলও হয়েছিলাম। ডিপ্রজন্ম-আবারও কথায় ফিরে আসি, বর্তমানে দেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর পথচলায় বাধা কেমন? রুহুল হাবীব-বর্তমানে দেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ দেশীয় কোম্পানিগুলো বেশ ভাল করছে। গত এক দশকে বলা চলে বৈপ্লবিক সফলতা এসেছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর কাজে। অনেক আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা, আর দ্বিতীয়ত প্যারালাল ট্রেডের কারণে এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবসা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে পথচলাটা খুব একটা মসৃণ নয়। ডিপ্রজন্ম-শিক্ষিত বেকার তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন- রুহুল হাবীব-প্রথমেই বলব বিদেশ যাওয়ার মানসিকতা থেকে বিরত থাকুন। সেখানে যা উপার্জন করবেন তারচেয়ে এ দেশে ভাল ব্যবসায় উদ্যোগ নিন। প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করুন, জানার ক্ষুধা বাড়ান। তরুণদের বলব বেশি বেশি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করুন, বদলে যাবেন আপনি, আপনার দেশ। ডিপ্রজন্ম-বর্তমান তরুণ প্রজন্মের চিন্তাভাবনার জায়গাটা পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বায়নের কারণে। মূল্যায়ন করবেন যেভাবে - রুহুল হাবীব-সব কিছুর ইতিবাচক দিকগুলো নিতে হবে আমাদের তরুণদের। হ্যাঁ, এটা সত্যি। আজকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পৃথিবীতে কি ঘটছে তা চাইলেই এখন মুহূর্তের মধ্যে জানা সম্ভব। অনেক বেশি তাল মিলিয়ে চলাটা শিখতে হবে। ডিপ্রজন্মÑ সাপ্লাই চেন যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রুহুল হাবীব-এই বিভাগে কাজ করে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ভূমিকা রাখা যেতে পারে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার বিভিন্ন দিকগুলো ভালভাবে বুঝতে পারতে হবে। কি কারণে যে কোন পণ্য বা সেবার চাহিদা বৃদ্ধি পায় অথবা হ্রাস পায়, সেটি ভালভাবে বুঝতে পারতে হবে। শুধু সেটি বুঝলে হবে না, তার সঙ্গে সঙ্গে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তটি নিতে পারতে হবে। পণ্যের চাহিদা হ্রাস বা বৃদ্ধির ব্যাপারটি সাপ্লাই চেনকে বেশ কিছু সময় আগে ধারণা করতে হয়। সেটি করতে পারার মাধ্যমে সাপ্লাই চেন প্রয়োজনীয় পণ্য নিশ্চিত করে এবং সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হয় প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় এবং মুনাফা। এছাড়াও সঠিক মূল্যে কাঁচামাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা ক্রয় করাও সাপ্লাই চেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি সফলভাবে করতে পারার জন্য প্রয়োজন কাঁচামালগুলো সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য খালাস করার ধারণা, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ করা সঠিক সময়ে। ঋণপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকাও অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি। এই সব বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করার মাধ্যমে তোমাদের সাপ্লাই চেন বিভাগে সফলতা নিশ্চিত হবে। আমি তোমাদের সফলতা কামনা করি।
×