ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৮ আগস্ট ২০১৭

শোকের মাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ/কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে-শাবাশ বাংলাদেশ/ এ পৃথিবী, অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়। যার আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধে পদ্মার উচ্ছ্বসের ন্যায় কেঁপে কেঁপে উঠেছিল বাঙালী জাতি তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালী জাতি যে কোন শোষণ, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়ায় না বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তো তিনি পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলতে পেরেছিলে, ৭ কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাকে দাবায়া রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণরূপে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী অবস্থায় মাথা উঁচু করে উচ্চারণ করেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি বলব ‘আমি বাঙালী। বাংলা আমার দেশ। বাংলা আমার ভাষা। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দেশ এবং দেশের জনগণের মুক্তি ছাড়া অন্য কিছু ভাবেননি। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাই তিনি পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হয়েও বলতে পেরেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। এদেশের মানুষের অধিকার চাই। তিনি বলতে পেরেছিলেন এদেশে যত হিন্দু, মুসলমান, বাঙালী অবাঙালী যত রয়েছে তাদের দায়িত্ব আমাদের। তিনি রাজনীতিতে হঠাৎ উঠে এসে জুড়ে বসা রাজনীতিবিদদের মতো ছিলেন না। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। তখন থেকেই ভাবতেন দেশ এবং জনগণকে নিয়ে। বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং যোগ্যতার কারণেই কম বয়সেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের। তখন থেকেই তিল তিল করে গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের সংগঠনকে। শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন তিনি। পাকিস্তানী শাসকদের অন্যায় অত্যাচারে বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বার বার জেল খাটতে হয়েছে। তবু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াননি। ৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীই একমাত্র দল যারা বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই। বাঙালীর অধিকার আদায়ের একমাত্র মুখপাত্র ছিলেন তিনিই। তখন থেকেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমশি করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথই বেছে নিয়েছিলেন। অন্ত্রের ভাষায় জবাব দেননি। বাঙালীর অধিকার আদায়ের বিচ্ছিন্নবাদীতার পথ গ্রহণ করেনি। মেজরিটির পার্টির নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার। কিন্তু বাঙালীদের কাছে ক্ষমতা না দিয়ে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালীর চরম এই বিপদের সময়ও দূরে সরে যাননি। স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তানী অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তাঁর ডাকে এদেশের মানুষ তখন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী না হয়েও তিনি তখন ছিলেন এদেশের মুকুটহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধু। বাংলা এবং বাঙালীকে বঙ্গবন্ধু কতটা ভালবাসতেন তার প্রমাণ দিয়েছিলেন পাকিস্তানী জেলে বন্দী থাকার সময়। ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত, তখন এই স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির অবিসংবাদিত নেতা পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিতে ঝুঁলিতে হত্যার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর জন্য কারাগারের পাশে কবরও খোঁড়া হয়েছিল। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল এই ফাঁসির ভয় দেখিয়ে একদিকে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের সঙ্গে আপোষ করতে বাধ্য করা। বাঙালী জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে পাকিস্তানীদের সঙ্গে আপোষের পথে ফিরিয়ে নেয়া। তখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলব আমি বাঙালী, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। বাংলা এবং বাঙালী জাতির প্রতি তার অকৃত্রিম ভালবাসা, দেশপ্রেমের কারণে তিনি এমন উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট বাঙালী জাতি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকে তিনি কতটুকু ভালবাসতেন। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে তিনি কীভাবে নিজের মধ্যে ধারণ, লালন ও পালন করতেন।
×