ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাসে শত কোটি টাকার ডিজেল বিদেশ থেকে আসছে চোরাপথে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ আগস্ট ২০১৭

মাসে শত কোটি টাকার ডিজেল বিদেশ থেকে আসছে চোরাপথে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চোরাপথে বিদেশ থেকে ডিজেল এনে তা অবৈধভাবে বাজারজাতকরণের ঘটনাটি নিয়ে তেল সেক্টরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি নিয়মবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় ডিজেলের একটি চালান গত শনিবার নৌবাহিনী আটক করার পর তা রবিবার রাতে মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারসহ চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান সোমবার জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন বর্তমানে ডিজেলের এই চালানটি জব্দ করা হয়েছে। ডিজেলের এ চালান ও মিনি লাইটার ট্যাংকারের মালিকানা খোঁজা হচ্ছে। কাস্টমস আইনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার ডিজেল অবৈধভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসছে। পরবর্তীতে তা মিনি অয়েল ট্যাংকার যোগে খালাস করে বাজারজাত করা হচ্ছে। অবৈধ এ তৎপরতায় জড়িত আছে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট। সিঙ্গাপুরে তেলের ডিজেলের দাম বাংলাদেশে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক থাকায় চোরাচালান চক্র অবৈধ এ প্রক্রিয়ায় নেমেছে। এর ফলে মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। যেহেতু দেশে জ্বালানি তেল আমদানি নির্ভর এবং তা এককভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর মাধ্যমে এনে তা তিনটি তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মাধ্যমে বিপণন করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমদানি নিয়মবহির্ভূত অবৈধ পথে এ ধরনের ডিজেল আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনী। অথচ গত এক বছর ধরে এ ঘটনা ঘটে আসছে। এ ধরনের ডিজেলের একটি চালান গত শনিবার রাতে বহির্নোঙ্গরে এলাকার বাইরে থেকে দেশীয় ৪টি মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারে খালাস করার পর নৌবাহিনীর এন্টি স্ম্যাগলিং স্কোয়ার্ডের সদস্যরা খোয়াজ খিজির-২ নামের একটিকে আটক করতে সক্ষম হয়। রবিবার রাত ৯টায় কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে অবৈধপথে আনীত ডিজেল বোঝাই মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারটি পতেঙ্গার কাস্টমস জেটি সন্নিহিত এলাকায় আটক রাখা হয়েছে। সূত্রে জানানো হয়, দেশী-বিদেশী জাহাজে বাঙ্কারিং (জাহাজে জ্বালানি সরবরাহ) ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে অবৈধপথে বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল আসার কারণে। অভিযোগ রয়েছে তেল সেক্টরের বিভিন্ন সংস্থার অনেকেই অবগত থেকেও এ ব্যাপারে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে না রহস্যজনক কারণে। অথচ এ প্রক্রিয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দেশে চোরা পথে অবৈধ পণ্য আনার এ প্রক্রিয়ায় স্পর্শকাতর জ্বালানি ডিজেল সংযুক্ত হওয়ার ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে তেল সেক্টরের কর্মকর্তারা কি কারণে এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। যেহেতু দেশে জ্বালানি তেল বাজারজাতকরণের দায়িত্বে রয়েছে বিপিসি সেক্ষেত্রে চোরাপথে ডিজেল আসার বিষয়টি সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ও আইন না মানার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের একটি ঘটনা। আরও জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ডিজেলের লিটার প্রতি সরকারী মূল্য ৬২ টাকা ৮১ পয়সা। কিন্তু বিশ্ব বাজারে জ্বালানি এ তেলের মূল্য বহু কম। সিঙ্গাপুরে লিটার প্রতি ডিজেল সর্বোচ্চ বাংলাদেশী ৩৫ টাকায় পাওয়া যায়। মূলত এ কারণেই চোরাপথে ডিজেল আনার পথ বেছে নিয়েছে চোরাচালানী চক্র। সূত্রে জানানো হয়, লিটার প্রতি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় চোরাপথে এ ডিজেল বিভিন্ন জাহাজ ও ডিজেল ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে থাকে। অর্ধেকেরও কম মূল্যে সিঙ্গাপুরে প্রতি লিটার ডিজেল মিলছে বিধায় অধিক মুনাফার জন্য চোরাচালানী চক্র সম্পূর্ণ বেআইনী পথে ডিজেল নিয়ে আসছে। প্রতি মাসে ন্যূনতম পক্ষে ৪ দফায় ছোট মাদার ট্যাঙ্কার যোগে এ জাতীয় ডিজেল বহির্নোঙ্গরে খালাস হচ্ছে। নৌবাহিনীর একটি সূত্রে সোমবার জানানো হয়, তাদের এন্টি স্ম্যাগলিং স্কোয়ার্ডের সদস্যরা এখন থেকে সজাগ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বহির্নোঙ্গর এলাকার বাইরে থেকে ডিজেলসহ চোরাচালানী যে কোন পণ্য আসার ক্ষেত্রে তাদের তদারকি ইতোমধ্যে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
×