ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে খুনচক্রের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনিও শাহাদাৎবরণ করেন। মহীয়সী এই নারী, বাঙালীর সকল লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাত্র ৩ বছর বয়সে পিতা ও ৫ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তার ডাক নাম ছিল ‘রেণু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী গ্রামে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন। মনেপ্রাণে তিনি একজন আদর্শ বাঙালী নারী ছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতেন। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেয়া ও পরিবার-পরিজনের যে কোন সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করে তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকা-ের অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালী জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারে বারে পাকিস্তানী শাসকদের হাতে বন্দী জীবন-যাপন করছিলেন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পৌঁছে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন। আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এদিকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জš§বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাঙালীর অহংকার এবং নারী সমাজের প্রেরণার উৎস। ছোটবেলা থেকেই তিনি যে কোন পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি দলকে মূল্যবান পরামর্শ দিতেন ও সহযোগিতা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে কারাবন্দী স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মাঝেও তিনি অসীম ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা তাঁকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাই বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই নন, বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামে তিনি অন্যতম অগ্রদূত। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন নির্লোভ, নিরহঙ্কার ও পরোপকারী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পতœী হয়েও তিনি সবসময় অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতেন। তিনি ছিলেন আদর্শ বাঙালী নারীর প্রতিকৃতি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী-পুত্র-পুত্রবধূসহ নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে তিনি ধানম-ির নিজ বাসভবনে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। জাতির ইতিহাসে সে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বঙ্গমাতা আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ যুগ যুগ ধরে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তরুণ প্রজন্ম বঙ্গমাতার আদর্শকে ধারণ করে দেশমাতৃকার কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেনÑ এ প্রত্যাশা করি। রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জš§বার্ষিকীতে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর। জাতির পিতার সহধর্মিণী হিসেবে তিনি আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা রাজনৈতিক কারণে প্রায়ই কারাগারে বন্দী থাকতেন। এই দুঃসময়ে তিনি হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে একদিকে স্বামীর কারামুক্তিসহ আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, অন্যদিকে সংসার, সন্তানদের লালন-পালন, শিক্ষাদান, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস যুগিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ৬-দফা ও ১১-দফার আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গৃহবন্দী থেকে এবং পাকিস্তানে কারাবন্দী স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা সত্ত্বেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাঁকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার সঙ্গে তিনিও সপরিবারে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন, যা জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তিনি বলেন, বঙ্গমাতা যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি আশা করি, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবনী চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। কর্মসূচী ॥ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
×