ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্দিষ্ট কৃষক গ্রুপ ছাড়াও অন্যরা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন

প্রথমবারের মতো ৩শ’ উপজেলায় কৃষি যন্ত্র সেবা কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৮ আগস্ট ২০১৭

প্রথমবারের মতো ৩শ’ উপজেলায় কৃষি যন্ত্র সেবা কেন্দ্র

এমদাদুল হক তুহিন ॥ কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে আরও জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করে তুলতে এবার ৩০০ উপজেলায় ভাড়ায় পরিচালিত যন্ত্র সেবা কেন্দ্র চালু করেছে সরকার। প্রতিটি উপজেলায় একটি কৃষক গ্রুপ বা ক্লাব নির্বাচন করে সেখানে এক সেট কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ওই গ্রুপ বা ক্লাবের বাইরের কৃষকরাও এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রুপের তৈরি করা ১০ একর জমির প্রদর্শনী প্লটের চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহার শেষ হলেই এসব যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পাবেন সাধারণ চাষীরা। সেবা কেন্দ্রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা এসব উচ্চমূল্যের কৃষি যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে-রিপার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, কম্বাইন হারভেস্টার, পাওয়ার থ্রেসার ও সিডার। শুধু যন্ত্রই নয়; সেবা কেন্দ্রে যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কিত পোস্টার, যন্ত্রের মূল্য ও প্রাপ্তিস্থানও উল্লেখ রয়েছে। থাকবে যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন দক্ষ টেকনিশিয়ানও। এতে ওই কেন্দ্রগুলো কৃষি যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে তথ্য সেবা কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করবে। কৃষিবিদরা বলছেন, শ্রমিক সঙ্কটের কথাটি মাথায় রেখে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে অধিক মনোযোগ দিচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষি যন্ত্র ক্রয়েও সরকার দিচ্ছে উন্নয়ন সহায়তা। তবে উন্নয়ন সহায়তা দেয়া সত্ত্বেও উচ্চমূল্যের কারণে কিছু কিছু যন্ত্র ক্রয়ে তেমনভাবে এগিয়ে আসেনি কৃষক। আবার মাঠ পর্যায়ে স্বল্প সময়ের জন্য প্রদর্শনী প্লট করায় নতুন নতুন যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছেন না সাধারণ কৃষকেরা। ফলে দেশে তেমনভাবে বাড়েনি যন্ত্রের প্রসার। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে যেসব যন্ত্র ভাড়া দেয়া হচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে সেই ভাড়াও উচ্চমূল্যের। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অনুকরণে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ভাড়ায় পরিচালিত যন্ত্র সেবা কেন্দ্র। এতে যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধি ছাড়াও কৃষক পর্যায়ে যন্ত্রের ব্যবহার সহজলভ্য হবে বলেও মনে করছেন কৃষিবিদরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ৩০০ উপজেলায় শুরু হয়েছে ভাড়ায় পরিচালিত যন্ত্র সেবা কেন্দ্র। উপজেলাগুলোতে একটি কৃষক গ্রুপ বা ক্লাবের মধ্যে এক সেট যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। সেবা কেন্দ্রের আওতায় কমপক্ষে ১০ একর জমি ও ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যের মধ্যে একজনকে দক্ষ টেকনিশিয়ান হিসেবে তৈরি করা হবে, দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। আর তিনিই যন্ত্রের দেখভাল করবেন। যন্ত্র কেন্দ্রে সরবরাহ করা যন্ত্রের পুরো দায়িত্বই ওই গ্রুপ বা ক্লাবের। কোন কারণে তারা যন্ত্র ব্যবহারে অদক্ষতার পরিচয় দিলে কিংবা মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার না করলে, তাহলে ওই গ্রুপের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। তখন উপজেলার অন্য একটি গ্রুপের মধ্যে ওইসব যন্ত্র বরাদ্দ দেয়া হবে। আর যন্ত্রের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিসার স্থানীয় বাজার পর্যালোচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করবেন। যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে নির্দিষ্ট ওই কৃষক গ্রুপ। খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প- ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের অধীনে দেশে চালু হওয়া যন্ত্রের সেবা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কৃষক গ্রুপকে বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। প্রথমত, যন্ত্র বরাদ্দের পূর্বে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শেড তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে ওই শেড ৩০ বাই ৩০ অর্থাৎ ৯০০ বর্গফুটের হতে হবে। এক্ষেত্রে শেড নির্মাণের ব্যয় হবে গ্রুপের নিজস্ব অর্থায়নে এবং যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব ওই কৃষক গ্রুপের। ডিএই সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ায় পরিচালিত কৃষি যন্ত্র সেবা কেন্দ্রে রয়েছে একটি করে রিপার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, কম্বাইন হারভেস্টার, পাওয়ার থ্রেসার ও সিডার। ৩০০ উপজেলার প্রতিটিতে ১ সেট করে এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। সেবা কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকের মাঝে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্র জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করা। এতে সেবা কেন্দ্রের আওতায় কৃষক এসব যন্ত্র ন্যূনতম ও সাশ্রয়ী ভাড়ায় ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে কৃষিকাজ এগিয়ে নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে যান্ত্রিক সুবিধা সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। জানা গেছে, সেবা প্রদানের জন্য যন্ত্র গ্রহণকারী কৃষক দলের সদস্যগণ যন্ত্র ব্যবহারে সমান সুযোগ পাবেন। নির্দিষ্টকৃত ১০ একর জমিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। দলের সদস্যগণ সমন্বিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যন্ত্র ব্যবহারের মৌসুম ভিত্তিক অগ্রাধিকার সিডিউল প্রস্তুত করবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিডিউল পরিবর্তন যোগ্য। যন্ত্রের জ্বালানি ব্যয় মৌসুমের শুরুতেই নির্ধারণ করতে হবে। আর সামগ্রিক বিষয় তদারকি করবেন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যন্ত্র ব্যবহারে নির্ধারিত কৃষক দলের সদস্যগণের চাহিদা পূরণ শেষে গ্রুপের বাইরের কৃষকদের মধ্যে যন্ত্রপাতি ভাড়া দিতে হবে। অর্থাৎ মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত যন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। ভাড়ায় প্রাপ্ত অর্থ দলের ফান্ডে জমা করতে হবে। আর এ সংক্রান্ত আয়-ব্যয় উপসহকারী কৃষি অফিসার তদারকি করবেন। যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের শর্তে বলা হয়েছে, কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় ব্যয় নির্দিষ্ট ওই কৃষক গ্রুপকে বহন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে কৃষক দল প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় ও যন্ত্র মেরামত করতে পারবেন। আর দলের সদস্যগণ জমির আনুপাতিক হারে এ ব্যয় ভার বহন করবে। সেবা কার্যক্রম তদারকির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিএই’র দফতর, আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং উপজেলা কমিটির সদস্যগণ যে কোন সময় সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবে। আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কৃষি প্রকৌশলী ও কৃষি প্রকৌশলী (যদি থাকে) যন্ত্র পরিচালনা কাজে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবেন। যন্ত্রসমূহ কৃষকের নিজ হেফাজতে নেয়ার পর যন্ত্রের দ্বারা সম্পাদিত কৃষি কাজ উপজেলা কৃষি অফিসার নিয়মিত তদারকি করবেন এবং প্রতি মৌসুম শেষে নির্ধারিত ছক মোতাবেক আবশ্যিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করে প্রকল্প দফতরে প্রেরণ করতে হবে। তবে যন্ত্র ব্যবহারে ওই গ্রুপের ব্যবহার সন্তোষজনক না হলে অপেক্ষাকৃত অধিক দলকে বাছাই করে পুনরায় যন্ত্র হস্তান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা কমিটি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
×