ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে আমদানিতে ঝুঁকছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ আগস্ট ২০১৭

জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে আমদানিতে ঝুঁকছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে আমদানির দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। গ্যাস সেক্টর মাষ্টারপ্লান-২০১৭ এর খসড়াতে আমদানিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এ গ্যাস খাতের মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। ওই উপস্থাপনায় বলা হচ্ছেÑ নিকট ভবিষ্যতে এলএনজি আমদানি করেই সঙ্কট সামাল দিতে হবে। আর দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এলএনজি আমদানির পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি ছাড়াও ট্যাপি প্রকল্পে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মহাপরিকল্পনায় বলা হচ্ছে এখনই দেশে অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে প্রতিদিনের সরবরাহ রয়েছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে মোট গ্যাস উৎপাদনের মধ্যে এখন আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি (আইওসি) ৫৯ ভাগ এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো ৪১ ভাগ গ্যাস উৎপাদন করছে। ক্রমান্বয়ে আইওসির গ্যাসের উত্তোলন বাড়লেও কমছে দেশীয় গ্যাস কোম্পানিগুলোর উৎপাদন। তবে আশঙ্কার করা হচ্ছেÑ আগামী ২০২১ সালের পর থেকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন সফল না হলে পুরোপুরি আমদানি করেই দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর কথা মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে। গ্যাস খাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ভিত্তি হিসিবে বিদ্যুত খাতের মহাপরিকল্পনাকে দাঁড় করা হয়েছে। মূলত বিদ্যুত উৎপাদনের জ্বালানি সংস্থানের ওপর জোর করে দেয়া হয়েছে পরিকল্পনায়। নিকট ভবিষ্যতে বলা হয়েছে ২০২০-২১ এ গিয়ে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে চার হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা বলা হয়েছে। বাকি এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশের অভ্যন্তর থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও দেশের গ্যাসের ঘাটতি দেখান হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি সংস্থান কৌশলে বলা হয়েছে ভবিষ্যতে সাগরে অনুসন্ধান ব্যর্থ হলে পুরোটাই আমদানির দিকে ঝুঁকতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২০৪১ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা দেখানো হয়েছে প্রতিদিন ১২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে অনুসন্ধান উত্তোলন সফল না হলে প্রায় পুরোটা আমদানি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে ২০৪১ এ দেশের মজুদ একেবারে শেষ হয়ে যাবে। এ জন্য আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি এবং তুর্কমিনিস্তান থেকে আফগানস্থান-পাকিস্তান-ভারত পর্যন্ত আসা ট্যাপি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। গ্যাস আমদানির জন্য এখন থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাইপ লাইন, সংরক্ষণাগার এবং কম্প্রেসার বসানোর জন্য এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আন্তঃদেশীয় পাইপ লাইন নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে। ইকিউএমএস কনসাল্টিং লিমিটেডের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ডেনমার্কের র‌্যাম্বল নামের একটি কোম্পানি এবং ডেনমার্কের ভূতত্ত্ব জরিপ অধিদফতর এ মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরি করছে। মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপনার উদ্বোধনী পর্যায়ে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাস ফুরিয়ে গেলেও আমরা বিকল্প জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গভীর-অগভীর সমুদ্রে এবং স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। চাহিদা, সরবরাহ এবং সম্ভাব্য প্রাপ্তির উৎস, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, ক্লিন এনার্জি বা বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে প্ল্যানে ডিটেইলস বলা আছে। সেই চাহিদার আলোকে প্রত্যেক খাতে গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করা হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডেনমার্কের রাষ্ট্র্রদূত মিকায়েল উইন্থার পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ ও র‌্যাম্বল কোম্পানির পরিচালক সোরেন লভস্ট্যাড ক্রিসটেনসেন বক্তৃতা করেন।
×