ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রসঙ্গে সহকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ;###;বৃহস্পতিবার ষোড়শ সংশোধনীর রায় বিষয়ে আইনমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ;###;অর্থমন্ত্রী মুহিতের বক্তব্য অনুযায়ী নতুন করে আবার আইন করার পক্ষে সকল মন্ত্রী ;###;অনেকের আপত্তি থাকা সত্ত্

জনগণের কাছে যান

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ আগস্ট ২০১৭

জনগণের কাছে যান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। এই রায়ে বিচারের এখতিয়ারের বাইরে ‘আপত্তিকর’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এসব ‘শব্দ’ বাদ দিতে উচ্চ আদালতে আবেদন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সেই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য অনুসারে আবার আইন করার বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে। তবে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আলোচ্যসূচীর বাইরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেন। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আলোচনায় অংশ নেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন মন্ত্রী বলেন, উপস্থিত মন্ত্রিসভার প্রত্যেকটি সদস্য এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি তার বিচার্য বিষয়ের বাইরে অনেক কিছু এই রায়ে নিয়ে এসেছেন। অনেক আপত্তিকর শব্দ তিনি এই রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন। যেমন এই সংসদ ‘ইমম্যাচিউর’ (অপরিণত)। এটি আপত্তিকর ও অবমাননাকর। এই শব্দগুলো সরিয়ে নিতে ‘এক্সপাঞ্জ পিটিশন’ দেয়া হবে এ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন, সংসদ ‘ইমম্যাচিউর’। এটা তো তাহলে প্রধান বিচারপতির নিজের ওপরই পড়ে। কারণ, এই সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তাহলে প্রধান বিচারপতি কি এর উর্ধে? এ সময় একজন সদস্যকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও আমি অনেক শখ করে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। বর্তমান সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংসদে পাস হয়। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। সংবিধানের এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপীলের অনুমতি দেন। ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলে গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আপীল নাকচ করে আপীল বিভাগ। গত ৩ জুলাই সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়। গত ১ আগস্ট প্রকাশ হয় পূর্ণাঙ্গ রায়। ৭৯৯ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায়ে আপীল বিভাগ শাসন, নির্বাচনী ব্যবস্থা, সংসদ নিয়ে নানা মন্তব্য করে। রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার লেখা অংশে লিখেছেন (যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি) ‘মানবাধিকার ঝুঁকিতে, দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত, সংসদ অকার্যকর, কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা। আর প্রযুক্তির উন্নতির সহায়তা নিয়ে অপরাধের প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ভীষণ রকম ক্ষতিগ্রস্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম নয়। এমন পরিস্থিতে নির্বাহী বিভাগ আরও অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আর আমলাতন্ত্র দক্ষতা অর্জনে চেষ্টাহীন। এই রায় প্রকাশের পর গত শুক্রবার সিলেটে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে বাতিল হওয়া ষোড়শ সংশোধনী সংসদে আবার পাস করা হবে। প্রয়োজনে অনবরত পাস করা হবে। বিচারকরা জনগণের প্রতিনিধিদের ওপর খবরদারি করেন। অথচ আমরা তাদের নিয়োগ দেই। বিচারকদের এমন আচরণ ঠিক নয়। তবে রবিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর এই মতামত ব্যক্তিগত। তবে আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যও উঠে আসে বলে জানান একজন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সবার কথা, আমাদের সংসদ আছে, আমরা নতুন আইন করব, এটা তো আর তিনি (প্রধান বিচারপতি) বন্ধ করতে পারবেন না। বিচারক অপসারণে সেনাশাসনের আমলে চালু হওয়া সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে এনেছে আপীল বিভাগ। একজন মন্ত্রী বলেন, সুপ্রীমকোর্ট সংবিধানের কোন ধারা বাতিল করতে পারে না। সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে বাতিল হয়েছিল। সেটা কীভাবে তিনি পুনরায় পুনঃস্থাপন করেন? সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সব শুনেছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা আপনাদের মত দেবেন। এই রায়ের বিষয় নিয়ে আপনারা জনগণের কাছে যাবেন। তাদের সেন্টিমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে আপনারা কথা বলবেন। এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আগামী বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে বেলা ১২টায় এই সংবাদ সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা। আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সোমবার বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন আইনমন্ত্রী। বিদেশে নতুনভাবে আরও সাতটি বাংলাদেশী মিশন স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে বিদেশে স্থাপিত ১৭টি বাংলাদেশ মিশন ভূতাপেক্ষভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদিকদের বলেন, নতুন মিশনগুলো হবে আফগানিস্তানের কাবুল, সুদানের খার্তুম, সিয়েরালিওনের ফ্রি টাউন, রোমানিয়ার বুখারেস্ট, ভারতের চেন্নাই, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও কানাডার টরেন্টোতে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চালু হওয়া ১৭টি মিশন হলোÑ এথেন্স, মিলান, মুম্বাই, ইস্তান্বুল, লিসবন, কুনমিং, বৈরুত, মেক্সিকো সিটি, ব্রাসিলিয়া, পোর্ট লুইস, কোপেনহেগেন, ওয়ারশ, ভিয়েনা, আদ্দিস আবাবা, আবুজা, আলজিয়ার্স ও গৌহাটি। ২০১৪ সাল থেকে এগুলো কাজ করছে। এগুলো বিভিন্ন কনসাল অফিস। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী নিয়ম হলো, এই অফিসগুলো খোলার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এই কূটনৈতিক অফিসগুলো স্থাপনের অনুমোদন নেয়া হয়নি ভুলে। এ জন্য এই ১৭টির ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে (ইতোমধ্যে চালু ও নতুনগুলো) কয়েকটি মিশন আগে থাকলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার চালু করা হলো। ব্রাসিলিয়া, ওয়ারশ, বুখারেস্ট, সিডনিতে বাংলাদেশী মিশন আগে ছিল বলেও জানান তিনি। পুতুলকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ॥ অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্ন ও উদ্ভাবনীমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক এ্যাডভাইজরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি। সোমবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে পুতুলকে অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, অটিজম নিয়ে কাজ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় মন্ত্রিসভা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গত ২৫ জুলাই ‘প্রিন্সটন ক্লাব অব নিউইয়র্কে’ অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কভিত্তিক শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল সিমা কলাইনু এবং এর আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আই কেয়ার ফর অটিজম’র বার্ষিক অনুষ্ঠানে পুতুলকে এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। পুতুলের পক্ষে এ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। সিমা কলাইনু নিউইয়র্কের প্রথম শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল। এটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত নিউইয়র্কের সকল সম্প্রদায়ের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত সহস্রাধিক শিশুকে তাদের অটিজম সেন্টার, স্কুল ও হোম সার্ভিসের সেবা দিয়ে আসছে।
×