ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে চার শতাধিক বসতভিটা

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৮ আগস্ট ২০১৭

টাঙ্গাইলে চার শতাধিক বসতভিটা

নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, বাসাইল উপজেলায় গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর ভাঙ্গনে প্রায় চার শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে ঝিনাই নদীর প্রবল স্রোতে অনেক ফসলি জমি, প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও সামাজিক বনায়নের বাগান বিলীন হয়ে নদীরপাড়ের অসহায় মানুষ শত কষ্টে টিকে ছিল। কিন্তু এ বছর উজান থেকে নেমে আসা পানি ও বিরামহীন বর্ষণে ঝিনাই নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে নদী তীরবর্তী উপজেলার কাশিল, কাঞ্চনপুর, ফুলকি ও হাবলা ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাজিরাপাড়া, বিলপাড়া, মানিকচর ও আদাজান গ্রামে প্রায় ৭০টি, হাবলা ইউনিয়নের বিলপাড়ায় ১০টি, কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা এলাকায় দুই শতাধিক, ফুলকি ইউনিয়নের দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া এবং একঢালা এলাকায় ৪০টিসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় চার শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে ভিটামাটি সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রায় চার শতাধিক পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঝিনাই নদীর ভয়ালমূর্তি দেখে নদী তীরবর্তী অনেক বাসিন্দা ভয়ে ঘর সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে ঘর তৈরি করে রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙ্গনে অনেক ফসলি জমি ও ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে আরও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ফসলি জমি ও ভিটাবাড়ি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে ছিন্নমূলদের তালিকায় কয়েক হাজার মানুষ বাড়বে। কৃষক পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়বে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রায় তিন বছর আগে ঝিনাই নদীতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু উত্তোলনের পর থেকে এ এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছরই অনেক আবাদি জমিসহ ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছরও এ এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক বলেন, কাশিল ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকা দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নর্থখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ঝিনাই নদী তীরবর্তী দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া ও একঢালা এলাকায় প্রায় ৪০টি ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক কৃষকের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খুসরু খান জানান, আমার ভিটাবাড়ি যে টুকু ছিল, সবই নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো জায়গাটুকুও নেই। অস্থানীভাবে রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে রয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত নুর ইসলাম, শাহাদত ও নয়েজ আলীসহ অনেকেই বলেন, প্রতি বছর সরকারীভাবে শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিই করা হয় কিন্তু কোন অনুদান দেয়া হয় না। বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গনের বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঝিনাই নদী থেকে একটি মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর ভাঙ্গনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়মা আক্তার বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনের বিষয়টি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, আমি ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি।
×