ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ নয়

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৮ আগস্ট ২০১৭

মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেঁধে দেয়া হচ্ছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের জন্য ঋণসীমা। ব্যাংকের মতো এসব ইউনিট থেকে মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ পাবে না কোন একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ। এ রকম বিভিন্ন নিয়ম-কানুন যোগ করে অফশোর ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু ঋণ নয়, অন্যক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি-বিধান মেনে কার্যক্রম চালাতে হবে ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে ১৯৮৫ সালে জারি হওয়া নীতিমালাটি বাতিল করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক মতামত পাওয়ার পর শীঘ্রই তা জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, অফশোর ব্যাংকিং হলো দেশে কার্যরত ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ প্রদানকারী আলাদা ইউনিট। দেশের বাইরে থেকে তহবিল এনে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি হয়। সেখানে শুধু বলা হয়, দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়ার লক্ষ্যে এ ইউনিট গঠিত হবে। তবে কিভাবে এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে, কে কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, রিপোর্টিং পদ্ধতি কী হবে বা ঋণের ব্যবহার বিষয়ে কিছু বলা নেই। নতুন নীতিমালায় এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে। আবার কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের তথ্য পেলে তা বন্ধের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয়া হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোন ব্যাংক একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে ওই ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড তথা নগদে দেয়া যায় মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। তবে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে এ নীতিমালা কার্যকর নয়। এসব ইউনিট দেশের বাইরে থেকে যে কারও কাছ থেকে আমানত এনে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যে কোন পরিমাণের ঋণ দিতে পারে। কাকে কী পরিমাণ ঋণ দেয়া হলো সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছু জানানোর প্রয়োজন হয় না। শুধু লাভ-লোকসানের বিষয়ে ব্যালান্সশীটে উল্লেখ করা হয়। তবে নতুন নীতিমালায় বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে সার্বিক তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুগোপযোগী নীতিমালা না থাকায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের কার্যক্রম চলছে যেনতেনভাবে। এসব ইউনিটের আড়ালে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর গত বছর বিভিন্ন ব্যাংকের ১৯টি ইউনিটে পরিদর্শন পরিচালিত হয়। পরিদর্শনে এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের তথ্য পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে চার বিদেশী কোম্পানিকে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় চার শ’ কোটি টাকা ঋণ দেখানো হয়। তবে ঋণের নামে এসব অর্থ পাচার হয়েছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই অর্থ আদায়ে ব্যাংকটিকে কয়েক দফা সময় দেয়া হলেও তা আদায় হয়নি, যে কারণে ব্যাংকটির অফশোর ব্যাংকিংয়ের ৩০৭ কোটি টাকা খেলাপী করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ৫১টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের অনুমতি নিলেও কার্যক্রমে আছে ৩৫টি। গত মার্চ পর্যন্ত এসব ইউনিটের বিতরণ করা ঋণ রয়েছে ৪১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এসব ঋণের বড় অংশই দিয়েছে বিদেশী মালিকানার দুই ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশী এইচএসবিসির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ আট হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা আর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের রয়েছে পাঁচ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩৩২ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আলোচ্য সময় পর্যন্ত এসব ইউনিটের খেলাপী ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, বিদ্যমান নিয়মে এ ধরনের ইউনিট অনুমোদনের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু শর্ত দেয়া হয়। বাকিটা নিজেদের মতো করে পরিচালিত হয়। তবে এখন অভিন্ন নীতিমালার মাধ্যমে কঠোর তদারকির আওতায় আনা হলে ভাল হবে। একক গ্রাহকের ঋণসীমা বেঁধে দিলে এসব ইউনিটে স্বচ্ছতা বাড়বে। পাশাপাশি খাতভিত্তিক ঋণসীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভাবতে পারে। এছাড়া একটি মূল ব্যাংকের মোট ঋণ ও আমানতের তুলনায় অফশোর ব্যাংকিং থেকে কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ করা যাবে তা ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো অফশোর ব্যাংকিংয়ের সব ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি-বিধান মেনে করতে হবে। এসব ইউনিট নিয়মিত তদারকির আওতায় থাকবে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ব্যবস্থাপনা, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রমের হিসাব সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। লাভ-লোকসানের হিসাব ছাড়াও বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
×