ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

বঙ্গবন্ধু ॥ এক মানবতাবাদী বিশ্ব রাজনীতিবিদ

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৮ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গবন্ধু ॥ এক মানবতাবাদী বিশ্ব রাজনীতিবিদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম পুরুষ। তার নেতৃত্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের আগে থেকেই তিনি মানবতাবাদী বিশ্ব রাজনৈতিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারগারের রোজনামচা’ পড়তে পড়তে আপনাআপনি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে দু’নয়ন। এ ধরনের এক বিশ্ব রাজনৈতিক যাকে প্রতিটি বাঙালী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করত। তাকে হত্যা করার সাহস পায়নি পাকিস্তানীরা। বঙ্গবন্ধুর সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ ‘মানুষকে ভালবাসা’। এবার যদি জিজ্ঞেস করা হয় বঙ্গবন্ধুর দুর্বলতা কি, ‘মানুষকে ভালবাসা’। এক্ষণে এ দুর্বলতাই হলো তার জীবনের এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাল। যখন এ নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনার বিবরণ পড়ি-তখন কেবল ইয়াজিদের নৃশংসতার কথা স্মরণ হয়। অবশ্য ইয়াজিদ কিন্তু মহিলাদের হত্যা করেনি- স্বসম্মানে হোসেন (রাঃ) এবং হোসেইন (রাঃ)-এর পরিবারবর্গকে মদিনায় পাঠিয়েছিলেন। আর জানোয়াররা শুধু বঙ্গবন্ধু নয় বরং বঙ্গমাতাসহ পরিবারের মহিলা সদস্যদের এবং একই সঙ্গে ছোট ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। দুর্ভাগ্য বাঙালীর, পেছন থেকে মীরজাফরের মতো জিয়া সকল কলকাঠি নেড়েছিল। অবশ্য সফিউল্লাহ আর খালেদ মোশাররফরা কি সে কালো রাত্রিরে আধারে ঘুমিয়েছিল কিনা সে প্রশ্ন জাতির বিবেকের কাছে ছেড়ে দিচ্ছি। আর খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলম চাষী, তাহেরউদ্দীন ঠাকুরসহ অনেক বিশ্বাসঘাতকদের ভূমিকাও সর্বজনবিদিত। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে অচনাক যে অভাববোধ হয়েছিল- সেদিন মফস্বল শহর কুমিল্লা থেকে অনুভব করেছিলাম। এবারে একটু স্মৃতিচারণে ফিরে আসি- আমার বয়স তখন ছয় বছর। আমার বাবা মোবাশ্বের আলী ৭ মার্চের ভাষণ শোনার জন্য ঢাকায় আসবেন। ছেলেবেলায় আর দশজন শিশুর মতো আমি আব্বা ছাড়া থাকতে পারতাম না। তাই কান্না জুড়ে দিলাম। আব্বা অনেক বুঝিয়ে বললেন, তিনি ভাষণ সরাসরি শোনবেন এবং ঢাকা থেকে ফিরে অনেক কিছু জানাবেন। ঢাকা থেকে ফিরে আমার আব্বা বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে বঙ্গবন্ধু কতটুকু ভালবাসেন তা ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা চলে উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যা-েলা, মার্শাল টিটো, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। তবে তাদের কাউকেই এভাবে নৃশংসতার শিকার হতে হয়নিÑ যা হতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালী জাতির কিছু জানোয়ারের দ্বারা। আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যারা দেশের মানুষকে ভালবেসে এখন সেবা করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব কেবল কাঁধে নেননি- সামনে থেকে বাঙালী জাতির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধুর সকল গুণ প্রোথিত হয়ে আছে শেখ হাসিনার মধ্যে। মানবতাবাদী বঙ্গবন্ধু যেমন বৈশ্বিক পরিম-লে স্টেটম্যানে পরিণত হয়েছিলেন, তার কন্যাও আজ স্টেটম্যানে পরিণত হয়েছেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের রাত ১.৩০ মিনিটে ধানম-ির ৩২ নং রোডের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় পাকিস্তানীরা। গ্রেফতার হবার পূর্বে রাত ১২.২০ মিনিটে দেশবাসীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন যা টেলিপ্রিন্টারে সারাদেশে পৌঁছে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে অস্থায়ী ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম প্রচার করা হয়Ñ যেটির অনুবাদ করা হয়েছে ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে সেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। (জাতির জনক গ্রন্থ পৃঃ ৯৪-৯৫)। উপরোক্ত স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্দীপ্ত করেছে। তিনি দখলদার সৈন্য বাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সামনে থেকে মহানায়কের মত তিনি আহ্বান জানিয়েছেনÑ দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর শেষ সৈনিকটি এদেশ থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার। তার এ নির্দেশের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে কি দৃঢ় মনোবল, ধনুভাঙ্গা পণ ছিল তার মধ্যে। তার ছিল অবিচল বিশ্বাস- বাঙালীরা পারবে পশ্চিম পাকিস্তানী প্রশিক্ষিত সৈন্যদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তার এ অবিচল আস্থা, দৃঢ়বল বাঙালীদের মধ্যে ঐক্যতানের সুর গেঁথে দিয়েছিল কিছু রাষ্ট্রদ্রোহী রাজাকার ছাড়া যাদের সংখ্যা ২% এর বেশি হবে না- অন্য সবাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছিল। আজকের স্বাধীন বাংলার রূপকার বঙ্গবন্ধু কিন্তু একদিনে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। ধাপে ধাপে তিনি এদেশবাসীকে প্রস্তুত করেছিলেন। এজন্যই একজন বিশ্ব মাপের স্ট্র্যাটেজিক লিডার হিসেবে তিনি জিও-পলিটিক্স নিয়ে কাজ করেছেনÑ যাতে বাঙালীরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। আজ যারা স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মেছেন তাদের অনেকেই কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীদের অত্যাচার চোখে দেখেননি, ভয়াবহতার চিহ্ন ১৯৭৫-এর কাল রাত্রির পর থেকে ১৯৯৫ আবার ছিয়ানব্বই-এর মাঝখানের পাঁচ বছর বাদে ২০০৮ পর্যন্ত ভুলিয়ে দিতে এদেশের একটি শ্রেণী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। যার নেতৃত্বে প্রাক্তন মুসলিম লীগার-বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে কাজ করেছে। এরা পাকিস্তানী হায়েনাদের চেয়েও ভয়ংকর। এদের সঙ্গে আছে তথাকথিত সুশীল সমাজের একটি দল। এরা ভয়ংকর এবং মুখোশ পরা। আর তাই দেখা যায়, একজন সুশীল সমাজের সদস্য এবং বর্তমানে ইংরেজী দৈনিকের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের অফিসে। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে নোংরা খেলায় মেতে উঠতে। অবশ্য বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশ রতœ শেখ হাসিনার উদারতার কারণে তারা চক্রান্ত করেও পার পেয়ে গিয়েছে। নইলে ঐ চক্রান্তকারীরা যে কি ভয়ানক তারা যে সামনেও আবার চক্রান্ত করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য-এদেশে মীরজাফররা বারবার জন্মায় এদের কারণে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত এবং বিপন্ন হয়। এরা ক্ষমাকে দুর্বলতা মনে করে। বিভিন্ন স্থানে যারা সরকার থেকে নানামুখী সুবিধা গ্রহণ করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তারা সঠিকভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে কিনা সেটি দেখা বাঞ্ছনীয়। ১৯৭৫ সালের ১৯ জুন বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তাতে দৃশ্যমান হয় তিনি দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি বক্তৃতায় বলেছেন ‘...মোট কয়েক হাজার কর্মীকে হত্যা করা হলো। যারা নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধ করেছে, মুক্তি বাহিনীর ছেলে, তাদের হত্যা করা হলো।...’ তিনি ঐদিনের বক্তৃতায় দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘...আমরা নন-এলায়িন্ড, আমরা ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেন পলিসিতে বিশ্বাস করি, আমরা পিসফুল কো-একসিসটেনস-এ বিশ্বাস করি।’ ...তিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতনশীল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সমান তালে সমমাত্রা বজায় রেখে চলতে চেয়েছেন। তিনি সে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ‘কিন্তু কি অধিকার আছে বিদেশে বসে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করার? স্বাধীনতার সঙ্গে শত্রুতা করবার? ‘ -২৬ মার্চ, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সে প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত। এখনও লন্ডনে বসে তারেক, খালেদা, চৌধুরী মঈনুদ্দীন গং আর এখানকার কিছু রাজনৈতিক খলনায়ক এবং সুশীল সমাজের একাংশ ২০১৯-এর নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে তৎপর বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘...ব্রিটিশ আমলের সেই ঘুণে ধরা এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেম দিয়ে বাংলার মানুষের মঙ্গল হতে পারে না। ইট মাস্ট গো।... পঁচাত্তরের কাল রাত্রিরের পরবর্তীতে তারা আরও জাঁকিয়ে বসেছেন। জনগণের সেবা দেয়া যে কাজ সেটি বঙ্গবন্ধুর সে বক্তৃতায় অক্ষরে অক্ষরে পরিস্ফুট হয়েছে। তিনি সেদিনের ভাষণে বলতে ভোলেননি যে ডেডিকেটেড ওয়ার্কারের দরকার। আওয়ামী লীগের ডেডিকেটেড ওয়ার্কার থাকলেও অনুপ্রবেশকারীরা ছলে বলে কৌশলে শকুনী মামার মতো অনেক ক্ষেত্রে নানা ধরনের অপকর্ম করে চলেছে। অথচ এই শকুনী মামারা এখন বহাল তবিয়তে নানা অপকর্ম করে দায় চাপাতে চায় দলের ডেডিকেটেড ওয়ার্কারদের। কাউয়ার অনুপ্রবেশ নিয়ে দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং সম্প্রতি সতর্ক করেছেন। আশা করব, এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আসলে বিত্তশালীরা ক্ষমতার মদমত্তে নিজেদের মধ্যে এক ধরনের সখ্য গড়ে তোলে। এই সখ্য কিন্তু তখন দলীয় ব্যবধানের উর্ধে উঠে ক্ষমতাতন্ত্রের কাছাকাছি থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়- মাঝখান থেকে বদনাম হয় আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকদের। সেদিনের সে বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঘুণেধরা সিস্টেম দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যায় না’ সময়ের বিবর্তনে এ দুর্নীতির মাত্রা যেটা বেড়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তীতে বর্তমান সরকার চেষ্টা করছেন সেটা হ্রাস করার জন্য। বঙ্গবন্ধু সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘...আজকে কো-অপারেটিভ যদি আমরা করতে পারি, সেখানে যদি ফার্টিলাইজার দিতে পারি, রেশন কার্ড দিতে পারি, তাহলে চুরিটা কম হবে।...’ বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সে স্বপ্ন পথ রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছিল, তা আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে জনকল্যাণে লিপ্ত হয়েছেন। তার প্রয়াসে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে কমিউনিটি র‌্যাংকিং এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগে আনতে পারলে আখেরে দেশের কল্যাণ হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, গ্রামীণ ডাকঘরসমূহ, কর্মসংস্থান ব্যাংকসমূহ আলাদা রেগুলেটরের অধীনে কমিউনিটি ব্যাংকিং চালু করার কথা বিবেচনায় আনা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু শোষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার দেখানো আলোকবর্তিকায় তার কন্যা আজ জনগণের নয়নের মণি- উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ঘরের শত্রু বিভীষণের মতো সেদিন যারা বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থেকে নানা ফায়দা তুলেছেন, তারাই সেদিন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। রক্ষী বাহিনীর ভূমিকা ছিল নিশ্চল, নিশ্চুপ। প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছে মীর জাফর, ঘষেটি বেগমরা এদেশে জন্মায়। তারা শয়তান ইয়াগোর মতো ডেসডিমনোকে হত্যা করে ওথেলোর সেই বক্তব্যটি মনে করিয়ে দেয়, ‘শয়তান রক্তবীজের মতো- সে রক্তবীজ থেকে জন্মাবে আরও শয়তান।’ বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘যখন আমি ৬ দফা দিলাম, আমার বিরুদ্ধে যখন বক্তৃতা আরম্ভ করল সকলে মিলে, আমি কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোন কথা বললাম না।... পিপলস আমাকে গ্রহণ করল।’ বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সে অমৃতবাক্য সরকার প্রধানসহ অনেক মন্ত্রী-এমপি মনে রাখলেও একদল ব্যক্তি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাজধানীতে বসে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আসলে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সবসময়ে থাকা দরকার। এজন্য নিজ সংসদ এলাকায় ন্যূনত পক্ষে সপ্তাহে তিন/চারদিন প্রত্যেক এমপিকে থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ‘আমার আদর্শ হলো বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইজ্জত সহকারে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখা, বাংলার দুঃখী মানুষকে পেট ভরে খাবার দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠন করা যেখানে অত্যাচার-অবিচার জুলুম থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না।...’ (দ্রষ্টব্য : বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, পৃঃ ১৭১-১৮৩।) প্রজন্ম ৭১ যেন লোভ-লালসার উর্ধে উঠে কাজ করে সেদিকে বর্তমানে লক্ষ্য রাখা দরকার। একজন ক্ষণজন্মা বৈশ্বিক মানব যিনি শোষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, নৈতিক স্খলনজনিত কতিপয় বিশৃঙ্খলকারী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে দ্বিধা করেননি। তার সে স্বপ্ন, আজ সরকারপ্রধান বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছেন। যারা ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছেন, তারা কিন্তু জানে না প্রকৃতির নিজস্ব প্রতিশোধ আছে। আজ যারা বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেন তাদের মনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি-রাজনৈতিক সততা ও আদর্শের কথা। তিনি কতটা সৎ জীবনযাপন করতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মের দেদীপ্যমানতায় উজ্জ্বল। তিনি বাস করেন পরমশ্রদ্ধায় প্রতিটি বাঙালীর অন্তরে। তাঁর আদর্শই হোক আমাদের প্রেরণা। লেখক : শিক্ষাবিদ ও ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট [email protected]
×